ইমাম আবু হানিফার মহানুভবতা

ইমাম আবু হানিফার পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে একজন দিনমজুর বাস করতো। দিনের বেলায় সে নিজের কুঁড়েঘরে বসে নানা রকম কুটির শিল্পের কাজ করতো। অশালীন গান গাইতো ও প্রলাপ বকতো।

তার হৈ চৈ তে ইমাম সাহেব এর গভীর রাতের নামায, যিকির ও চিন্তা গবেষণা পর্যন্ত ব্যাহত হতো। তিনি তাকে ঐ বদঅভ্যাস ত্যাগ করার জন্য প্রায়ই অত্যন্ত মিষ্ট ভাষায় উপদেশ দিতেন। কিন্তু সে তাতে কর্ণপাত করতো না। ইমাম অগত্যা নীরবে সবকিছু সহ্য করতেন।

একদিন রাত্রে তিনি লক্ষ্য করলেন যে, ঐ লোকটির কুড়েঘর হতে কোন হৈ চৈ এর আওয়াজ আসছে না। তিনি আজ নির্বিঘ্নে এবাদত জিকির ও চিন্তা গবেষণা চালালেন বটে, কিন্তু তাঁর মন অস্থির ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো।

ভোরবেলা ইমাম সাহেব তার খোঁজ খবর নিতে গেলেন। তিনি শুনতে পেলেন যে, পুলিশ ঐ মাতাল লোকটিকে ধরে নিয়ে জেলে আটক করেছে।

তৎকালে বাগদাদের সিংহাসনে আসীন ছিলেন উমাইয়া বংশীয় বাদশাহ মানসুর্।

ইমাম সাহেব বাদশাহর দরবার কঠোরভাবে এড়িয়ে চলতেন। বাদশাহ নিজেই ইমাম সাহেব এর সাথে কখনো কখনো দেখা করে যেতেন। কিন্তু আজ ইমাম সাহেব তাঁর দরিদ্র প্রতিবেশীর বিপদে অধীর হয়ে বাদশাহর দরবারে চলে গেলেন।

বাদশাহ ও তাঁর আমীর ওমরাহগণ ইমাম সাহেবকে দরবারে আসতে দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তারা পরম শ্রদ্ধা সহকারে তাঁকে বসালেন।

তিনি বললেন, “মহামান্য বাদশাহ, আপনার লোকেরা আমার এক প্রতিবেশীকে ধরে এনে জেলে পুরেছে। আমি তার মুক্তি চাইতে এসেছি।”

বাদশাহ এক মুহুর্ত ভেবে জবাব দিলেন, “মান্যবর ইমাম সাহেব, আপনি আজ আমার দরবারে উপস্থিত হয়ে আমাকে যে ধন্য করলেন, সেই আনন্দে ও আপনার সম্মানের খাতিরে আপনার প্রতিবেশীসহ জেলের সকল কয়েদীকে মুক্তি দিলাম।”

ইমাম সাহেব তার প্রতিবেশীকে নিয়ে বাড়ীতে ফিরলেন। দিনমজুর এরপর আর মদ স্পর্শ করেনি।