আল-কুরআনের বিশ্বদৃষ্টিঃ চিন্তা ও কর্মের আহবান

মুজাম্মিল হক সিদ্দিকী

“অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ করো সন্ধ্যায় ও সকালে; এবং অপরাহ্ণে ও মধ্যাহ্নে। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে তাঁরই প্রশংসা। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বহির্গত করেন, জীবিত থেকে মৃতকে বহির্গত করেন এবং ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবে তোমরা উত্থিত হবে…।” (সূরা রুম, আয়াতঃ ১৭-২৭)

প্রতিটি ব্যবস্থারই, হোক সে ধর্মীয় কিংবা সেক্যুলার, জীবন সম্পর্কে, বিশ্ব সম্পর্কে একটি দর্শন থাকে, থাকে একটি বিশ্বদৃষ্টি। এই বিশ্বদৃষ্টি শব্দটি জার্মান Weltanschaung শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে যার বাংলা করা চলে বিশ্ব-প্রকৃতি। শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট। মোটাদাগে বিশ্বজগৎ ও মানবজীবনের সৃষ্টি ও প্রকৃতি সংক্রান্ত কিছু বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত বিশ্বাস ও অনুমানের সমষ্টিকে বিশ্বদৃষ্টি বলা যায়। এই বিশ্বাস এবং অনুমানসমূহ নানাভাবে মানুষের জীবন ও আচরণকে প্রভাবিত করে। সাম্প্রতিককালে সৃষ্টি সম্পর্কিত আলোচনায় ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন থিওরী এবং বিবর্তনবাদকে কেন্দ্র করে এক ধরণের বিতর্ক লক্ষ্য করা যায়। কিছু লোক মনে করে এই বিশ্বজগৎকে বোঝার একমাত্র বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হল বিবর্তনবাদ। তাদের মতে, এই বিশ্বজগৎ এবং মানব প্রজাতির সৃষ্টি ও প্রকৃতি সম্পর্কিত অন্য যে কোন বিশ্বাস বা উপায় মাত্রই পৌরাণিক এবং অবৈজ্ঞানিক। অবশ্য এই বিষয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থী মাত্রই জানেন বিবর্তনবাদের তত্ত্ব নিজেই একটি বিশ্বদৃষ্টির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। এই বিশ্বদৃষ্টির নাম হল ‘বস্তুবাদ’। বস্তুবাদী দর্শন মতে, বস্তুই হলো একমাত্র অস্তিত্বশীল সত্য। বস্তুবাদী দর্শন হয় স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে অথবা স্রষ্টার অস্তিত্ব সংক্রান্ত আলোচনায় নির্লিপ্ত থাকে। বস্তুবাদীদের মতে, এই বিশ্বজগৎ স্বয়ং অস্তিত্বশীল। তাদের অনুমান হল, এই বিশ্বজগৎ এবং এর অন্তঃস্থিত প্রাণসমূহ পদার্থ ও রসায়নের উদ্দেশ্যবিহীন শক্তিসমূহের পারস্পারিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফসল বৈ আর কিছু নয়।

বস্তুবাদ মানবাত্মার অস্তিত্বকেও অস্বীকার করে। বস্তুবাদী দর্শন মতে, আমাদের অস্তিত্ব হলো অত্যন্ত সুশৃঙ্খলরূপে সন্নিবিষ্ট অণু-পরমাণুর সমষ্টি। এই দর্শন মতে, আমাদের আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-ধারণাগুলো হলো মস্তিষ্ক কোষের অভ্যন্তরে এক ধরণের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া মাত্র।

তবে এই আলোচনায় কিছু প্রাণবৈশিষ্ট কিংবা যান্ত্রিক গঠনের কোন সাধারণ পূর্বপুরুষ বা প্রজাতি রয়েছে কিনা সেটি মূল বিষয় নয়, বরঞ্চ মূল বিষয় হলো জীবন বা প্রাণ আল্লাহ্‌ কর্তৃক সৃষ্টি নাকি এটি স্বয়ংক্রিয় বিবর্তনের ফসল।

মানুষের চিন্তা এবং কর্ম তার বাছাইকৃত বিশ্বদৃষ্টির দ্বারা প্রভাবিত হয়। ইসলামের নিজস্ব বিশ্বদৃষ্টি রয়েছে, রয়েছে জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট বক্তব্য। কুরআন বারংবার এই সত্যের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যে, এই বিশ্বজগৎ এক সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ স্রষ্টার সৃষ্টি (যুখরুফঃ ৪৩:৯)। কুরআনের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৃষ্টিজগৎকে “আয়াত” (নিদর্শন) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর কিতাব কুরআনে যেমন আয়াত (নিদর্শন) রয়েছে, তেমনি নিদর্শন রয়েছে প্রকৃতির বুকে। কুরআনের আয়াতসমূহকে বলা হয় ওহী মাতলু (তেলাওয়াতকৃত প্রত্যাদেশ) এবং বিশ্বজগতের নিদর্শনসমূহকে বলা হয় ওহী মাশহুদ (সাক্ষ্যদানকারী প্রত্যাদেশ)।

আল্লাহ্‌র কিতাবে বর্ণিত নিদর্শন বা আয়াতসমূহের গভীর উপলব্ধিজাত সত্য এবং জীবন-প্রকৃতির গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপনীত উপসংহারের মধ্যে বিবাদ লাগার কথা নয়। এই জায়গায় ইসলামের অবস্থান হলো ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোন অন্তর্নিহিত সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। সত্য ধর্ম ও যথার্থ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কোন ধরণের বিবাদ ছাড়াই একই সাথে কাজ করতে পারে। সমস্যা তৈরি হয় কেবল তখনই যখন ধর্মকে পুরাণের সাথে মিলিয়ে ফেলা হয় অথবা বিজ্ঞান তার নির্দিষ্ট সীমারেখা অতিক্রম করে।

সূরা রুমের ১৭ থেকে ২৭ নং আয়াতসমূহ এই বিশ্বজগতে স্রষ্টার ঐশী নিদর্শনসমূহের এক চমৎকার দৃশ্যকল্প নির্মাণ করে। এই আয়াতসমূহ একটি বিশ্বদৃষ্টির ভিত্তি নির্মাণ করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের আহবান করেছেন-

১। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার শ্রেষ্ঠত্ব ও পবিত্রতা ঘোষণা করতে, তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে এবং তাঁর প্রশংসা করতে (তাসবীহ, হামদ)।

২। তাঁর সৃষ্টিসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে (তাফাক্কুর),

৩। পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে (ইলম)।

৪। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণীসমূহ গভীরভাবে শ্রবণ করতে।

৫। এবং আমাদের ‘বুদ্ধির’ যথাযথ ব্যবহার করতে (আকল)।

এই আয়াতসমূহে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়ছেঃ

১। আল্লাহই হলেন সমস্ত কিছুর স্রষ্টা। তিনিই সবকিছু শুন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই জীবন কেড়ে নেন। নভোমন্ডল এবং ভূমণ্ডলের যাবতীয় প্রশংসা কেবল তাঁরই। সকাল, সন্ধ্যা, অপরাহ্ন এবং রাতের সকল প্রশংসা কেবই তাঁরই জন্য।

“অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ করো সন্ধ্যায় ও সকালে; এবং অপরাহ্ণে ও মধ্যাহ্নে। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে তাঁরই প্রশংসা। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বহির্গত করেন, জীবিত থেকে মৃতকে বহির্গত করেন এবং ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবে তোমরা উত্থিত হবে…।” (সূরা রুম ১৭-১৯)

২। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে এবং তিনি মানুষকে দান করেছেন সুন্দর কাঠামো এবং ছড়িয়ে দিয়েছেন সমগ্র বিশ্বব্যাপী। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন আমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি বিশেষ সৃষ্টি হিসেবে। তিনি আমাদের বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। তবে তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে এবং এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো আমাদের অহংকারী হওয়া উচিত নয়, উচিত নয় দম্ভভরে পৃথিবীর বুকে পদচারণ করা। এই মাটির অন্যতম তাৎপর্য হলো এর মাধ্যমে গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের গঠন উপাদানের এক ধরণের সাদৃশ্য তৈরী হয়। অন্যান্য প্রাণীর সাথে এক ধরণের শারীরবৃত্তিক সাদৃশ্য থাকলেও আমাদের মানব-প্রকৃতি বিশেষ মর্যাদায় আসীন এবং অন্যান্য প্রাণীর চাইতে আলাদা।

“তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মৃত্তিকা থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছো।” (সূরা রুম ৩০:২০)

৩। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে নারী-পুরুষকে ভারসাম্যপূর্ণ অনুপাতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদেরকে পরস্পরের জন্য যথার্থরূপে তৈরি করেছেন। তিনি দম্পতি সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের অন্তরে পরস্পরের জন্য ভালবাসা ও সহানুভূতি দান করেছেন। পরস্পরের প্রতি তাদের দৈহিক আকর্ষণ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে এক আধ্যাত্মিক বন্ধন, যে বন্ধনের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে পরিবার। আধ্যাত্মিক বন্ধনের এই সুতোয় বাঁধা পড়ে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান সন্ততি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। আল্লাহ্‌র এক অনুপম সৃষ্টি এই পরিবার।

“আর অন্যতম নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে সুখ-শান্তি লাভ করতে পার এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে”। (সূরা রুম ৩০:২১)

৪। অত্যন্ত বৈচিত্রপূর্ণ এই মানবপ্রজাতি। আমাদের মুখ, জিহবা কিংবা চোয়াল একই কিন্তু তাদের কন্ঠস্বর ভিন্ন এবং এই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করে বিভিন্ন ভাষা, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ। এই ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে রয়েছে স্রষ্টার অশেষ নিদর্শন। এই পৃথিবীতে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণ, বিভিন্ন রঙের মানুষ। এমনকি একই পরিবারের দুইজন মানুষের রঙও অনেক ক্ষেত্রেই একই হয়না। যারা এই বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যকে অনুধাবন করতে পারে তারাই পারে বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে, তারাই পারে পারস্পারিক সংহতি ও ইনসাফের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। অপরদিকে অজ্ঞতা ও জাহেলিয়াত মানুষের মাঝে গড়ে তোলে সংস্কার ও বিভেদের প্রাচীর।

“তাঁর আরো নিদর্শন হলো নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং তাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা রুম ৩০:২২)

৫। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন আমাদের জন্য দিন এবং রাত সৃষ্টি করেছেন। দিন-রাতের আবর্তনের মাঝে কর্মমুখর দিবস এবং রাতের বিশ্রামের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ্‌র অশেষ নিয়ামতের নিদর্শন। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য রিযিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে কর্মব্যস্ত দিন কাটানোর পরে শ্রান্ত দেহ যাতে বিশ্রাম নিতে পারে সেই সুযোগ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা সৃষ্টি করেছেন রাতের মাধ্যমে। একই সাথে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের এক নির্দেশনা রয়েছে এই সৃজনীতে। এতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহ্‌র বাণী শোনে। কেবল তারাই পারে যথাযথ উপায়ে কার্য সম্পাদন করতে এবং যথার্থ উপায়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে। এবং এর মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে পারে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনপদ্ধতি ।

“তাঁর আরো নিদর্শনঃ একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনপদ্ধতি ও তাঁর কৃপা অন্বেষণ। নিশ্চয়ই এতে মনোযোগীদের জন্য নিদর্শানাবলী রয়েছে।” (সূরা রম ৩০:২৩)

৬। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের দিকে নির্দেশ করে তাঁর ক্ষমতা ও সর্বময় শক্তি সম্পর্কে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেন। প্রকৃতির এই রোষ ভয়ের উদ্রেক ঘটালেও এর মধ্যে আমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ্‌র অশেষ নিয়ামত। আমাদের বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতা দিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র এই অশেষ নিয়ামতের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।

“তাঁর নিদর্শন- তিনি তোমাদের দেখান বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসার জন্য এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে, অতঃপর তদ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয়ই এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা রুম ৩০:২৪)

৭। সবশেষে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় যে, এই দুনিয়ায় আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য। আমাদের কারো পক্ষেই চিরকাল এই দুনিয়ায় থাকা সম্ভব না। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের শেষে মৃত্যুর স্বাদ সকলকেই গ্রহন করতে হবে। আজ হোক, কাল হোক, মৃত্যুর হাত থেকে কারোই নিস্তার নেই। কিন্তু এই মৃত্যুই শেষ কথা নয়। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন পুনরায় আমাদের জীবিত করবেন বিচার দিবসের দিন। বড়ই কঠিন সেই দিন। একটি ফুঁৎকারে আমরা সকলেই বের হয়ে আসব। সেই দিন আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন এই দুনিয়ায় কৃত সমস্ত কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব নিবেন। তাই দুনিয়ার এই জীবনে আল্লাহ্‌ ও তাঁর কিতাবের সার্বক্ষণিক স্মরণই আখেরাতের মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে।

“তাঁর অন্যতম নিদর্শন এই যে তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত আছে। অতঃপর যখন তিনি মৃত্তিকা থেকে উঠার জন্যে তোমাদের ডাক দিবেন তখন তোমরা উঠে আসবে। নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সব তাঁরই। সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ।

তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর পুনরায় তিনিই সৃষ্টি করবেন। এটা তাঁর জন্যে সহজ। আসমান ও জমীনে তিনিই সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনিই মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা রুমঃ ২৫-২৭)

এই হলো ইসলামের বিশ্বদৃষ্টি এবং এই বিশ্বদৃষ্টির আলোকেই আমাদের চিন্তা ও কর্ম পরিচালিত হওয়া উচিত। এর বক্তব্যে কোন ধোঁয়াশা নেই। এটি অত্যন্ত পরিষ্কার এবং সরল। এই দর্শন মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, সামাজিক জীবন থেকে শুরু করে জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এক চমৎকার নির্দেশনা প্রদান করে। অস্তিত্ব সম্পর্কিত যে প্রশ্নগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়িত করে তাঁর জবাব দেয় এই বিশ্বদৃষ্টি। আমি কে, কোথায় আমার শুরু, কোথায় আমার শেষ, এই জীবনের অর্থ কী, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যই বা কী এই সমস্ত জিজ্ঞাসার জবাব দেয় ইসলামী বিশ্বদৃষ্টি। এটি একই সাথে মানুষকে বিনয়ী করে এবং মর্যাদার আসনে আসীন করে। অন্তরে শান্তির সুবাতাস এনে দেয় এই দর্শন, নৈতিকতার দীক্ষায় দীক্ষিত করে সুন্দর জীবনের সিঁড়ি নির্মাণ করে এই দর্শন; মানুষের চিন্তা ও কর্মের দিগন্তকে বিস্তৃত করে ঐক্য, শান্তি ও ভালোবাসার দীক্ষা দেয় এ দর্শন। স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মম্ভরিতা, হিংসা-বিদ্বেষ ও জাতপাতের প্রাচীর ভেঙ্গে সুন্দর সমাজের সোপান নির্মাণ করে এই বিশ্বদৃষ্টি।

আমি আল্লাহ্‌র কাছে কায়মনোবাক্যে দুয়া করি যেন আমরা এই কুরআনী বিশ্বদৃষ্টিকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করে আমাদের চিন্তা ও কর্মকে শাণিত করতে পারি। আমীন।