বর্তমানে আমাদের দেশে দেখা যায় যে, খুব শান-শওকতের সাথে ঈদে মিলাদুন্নবী উৎযাপন করা হয়। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যারা এটাকে পালন না করে তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। আমার জানার বিষয় হল, এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

بسم الله الرحمٰن الرحيم. حامدا و مصليا و مسلما
মিলাদ মানে জন্ম। আর মিলাদুন্নবী শব্দের অর্থ হল, রাসূল (সা.) এর জন্ম। রাসূল (সা.) জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করা নিঃসন্দেহে পুণ্যের কাজ। যেকোনো দিন যেকোনো সময় তা করা যাবে। কিন্তু বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মিলাদুন্নবী পালন করা হয়, রাসূল (সা.) এর যুগ থেকে পরবর্তী ৬০০ বছর পর্যন্ত এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। বরং, ৬০৪ হিজরিতে আবু সাইদ মুজাফফর নামক ইরাকের এক বিলাসপ্রিয় ও ধর্মদ্রোহী জনৈক বাদশাহ এবং তার দরবারি আলেম আবু খাত্তাব উমর ইবনে দিহইয়া এর প্রচলন করে। সুতরাং এটি একটি সুস্পষ্ট বিদআত। এ থেকে সকলের জন্য বেঁচে থাকা আবশ্যক। কেননা, কুরআন-হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ ও রাসূল কর্তৃক প্রদত্ত বিধানের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে এবং শরিয়তে নতুন কিছু প্রবর্তন করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীলও দয়ালু।’[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১]

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
‘তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে কর্তাদের অনুসরণ করো না।’[সূরা আরাফ, আয়াত: ৩]

রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
‘যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৬৯৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৭১৮]

অন্যত্র তিনি বলেছেন-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَة

‘তোমাদের জন্য আবশ্যক আমার ও আমার পরবর্তী হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেভাবে দাঁত দিয়ে কোনো জিনিস দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা হয়। আর শরিয়তে নিত্য নতুন জিনিস আবিষ্কার করা হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্তুই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।’ [আবু দাউদ, হাদিস: ৪৬০৭]

আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
و الله تعالى أعلم بالصواب
وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم

উত্তর দিচ্ছেন: ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী