অন্তর কঠোর হয়ে গেলে কী করণীয়?

আবুল হাসনাত কাসিম | 

এর জন্য আপনাকে সাতটি কাজ করতে হবে:

১। ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুর কথা স্মরণ:
দুনিয়ার জীবনের পর আমাদের একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে এবং প্রতিটি নিঃশ্বাসের হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে-এ চিন্তা ও বিশ্বাসই মানুষের অন্তর নরম করতে পারে।

২। বেশি বেশি কবর জিয়ারত:
কবরের কাছে গিয়ে এই চিন্তা করা যে, এখানে শায়িত লোকটিও একদিন দুনিয়াতে ছিল; আমার মত খাওয়া-দাওয়া করত, চলাফেরা করত। আজ সে কবরের বাসিন্দা। তার দেহ মাটি হয়ে গেছে। তার সম্পদ তার ছেলে-মেয়েরা ভাগ করে নিয়েছে। আমাকেও একদিন তার মত কবরে যেতে হবে। এতে অন্তর নরম হবে।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আমি প্রথমে তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা এটা অন্তরকে নরম করে’। -মুস্তাদরাক লিল হাকিম, হা/১৩৯৩

৩। অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত:
কুরআনে বিভিন্ন অবাধ্য জাতির ধ্বংস সম্পর্কিত কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। চিন্তাশীল মানুষ যদি এগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন তাহলে তার অন্তর নরম হবে।

বিচার দিবস ও জাহান্নামের ভয়াবহতা সম্পর্কিত আয়াত বেশি বেশি পাঠ করতে হবে এবং সেগুলোর অর্থ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। ভালোকিছু হৃদয়স্পর্শী, মুগ্ধকর অডিও তিলাওয়াত মোবাইলে রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং অবসর সময়ে সেগুলো শুনতে হবে।

‘প্রকৃত মু’মিন তো তারা, আল্লাহর কথা স্মরণ করা হলে যাদের অন্তর ভীত হয় এবং তার বাণী তিলাওয়াত করা হলে যাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। [সূরা হজ্জ্ব: ৩৫]

৪। অত্যাধিক পরিমাণে যিকির:
অন্তরের কঠোরতা দূর করতে এটি অন্যতম একটি হাতিয়ার। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর যিকির বা স্মরণে অন্তর সমূহ প্রশান্ত হয়’। [সূরা রাদ, আয়াত ২৮]

‘একলোক হাসান রাঃ-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আবু সাঈদ! আপনার নিকট অন্তর কঠিন হওয়ার অভিযোগ করছি, তিনি বললেন, তুমি অন্তরের কঠোরতা থেকে বাঁচতে যিকির করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর জিকির ছাড়া বেশি কথা বলো না। বেশি (ফাহেশা ও অনর্থক) কথা মানুষের অন্তরকে শক্ত করে দেয়। আর শক্ত অন্তর বিশিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা হতে বহু দূরে থাকে। [তিরমিজি]

৫। বেশি বেশি ইস্তিগফার:
নির্জনে নিজের যাবতীয় গুনাহ ও অপরাধের কথা স্মরণ করে অনুতপ্ত হওয়া এবং খাঁটি অন্তরে তাওবা করা। আল্লাহর নিকট দু-হাত তুলে কান্নাকাটি করা। এসময় কবরের আজাব ও হাশরের ময়দানের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করা। দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী আর মৃত্যুর পরে রয়েছে স্থায়ী, অনাদি ও অনন্ত কালের আখিরাতের জীবন। সে জীবনের তুলনায় এ নশ্বর জীবন নিতান্তই তুচ্ছ ও নগণ্য- এই কথাটি বারবার স্মরণ করা।

‘পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা ও সামর্থ্যবান। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তাঁরই দিকে হবে প্রত্যাবর্তন’। [সূরা গাফির, আয়াত ৩]

৬। আলিম-উলামা ও সৎ লোকদের সংশ্রবে সময় কাটানো:
তাদের সান্নিধ্য লাভ করা এবং তাদের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি নিজেকে তাদের সৎসঙ্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। [সূরা কাহফ: ২৮]

৭। দুআ মুমিনের প্রধান হাতিয়ার এবং অন্তরের কঠোরতা থেকে পরিত্রাণ লাভের পরীক্ষিত উপায়:
অন্তরের চিকিৎসার জন্য নিম্নোক্ত দুআটি পড়া যায়, যা রাসূল সা. পড়তেন,
اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ. উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা মুসার্রিফাল কুলূব সাররিফ কুলূবানা ‘আলা তাআতিক’। অর্থ: ‘হে হৃদয় সমূহ পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়গুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দেন’। [মুসলিম, রিয়াযুস সালিহীন হা/১৪৭০, মিশকাত হা/৮৯]

অন্য হাদিসে এসেছে,
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلَى دِيْنِكَ. ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর স্থির রাখুন’। [তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১০২]

আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখাটি মিম্বার ফেসবুক গ্রুপের “মিম্বার ম্যাগাজিন” থেকে সংগ্রহীত।