আল্লাহর ভালোবাসাহীন হৃদয় বিরান ঘর সমতুল্য

নাজমুল হাসান

আমাদের জীবনের মূল টার্গেট তো হলো আল্লাহ। যে কোন মূল্যেই হোক তাঁকে খুশি করতেই হবে। আমাদের জীবন-মরন সবকিছুই হবে তাঁর বিধানের অধীনে। তাঁর নবীর পথই হবে আমাদের চলার একমাত্র পথ।

পৃথিবীর রঙ রূপ জৌলুস এতটা বেড়েছে, আজ যেদিকেই তাকাই চোখ ঝলসে ওঠে। কিন্তু বন্ধুরা আমার! হৃদয়ের দিকে তাকালেই মনে হয় হৃদয় পড়ে আছে বিরান। পৃথিবীর কোথাও মানবতার ছিটাফোঁটাও নেই। মানুষ আছে, মানুষের গুণ নেই। বাড়িঘর দৃশ্যত আলোকিত, কিন্তু হৃদয়হীন। প্রকৃত অর্থে আমাবস্যার রাতের চাঁদের চাইতেও অধিক অন্ধকার।

রাতভর চারিদিকে বিদ্যুতের বাতি জ্বলে। গভীর রাতেও সড়কে সুঁই পড়ে গেলেও বিদ্যুতের আলোতে তুলে নেয়া যায়। এ হলো আমাদের পার্থিব ভূবন। কিন্তু আমাদের হৃদয় জগৎ একটা বিরান, সেখানে কোথাও কোন আলোর ছোঁয়া নেই। দৃশ্যত চারিদিকে সবুজ-শ্যামল মনে হয়। দৃষ্টি যতদূর যায়, লকলকানো ফসল। চারিদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। অথচ হৃদয়ের জমিন মরুভূমির মাটির চাইতেও অধিক বন্ধ্যা। সেখানে সবুজের কোন চিন্তা নেই।
যে হৃদয়ে আল্লাহর ভালোবাসা নেই, যে হৃদয়ে আল্লাহ নামের আকুলতা নেই, যে হৃদয়ে প্রভুপ্রেমের আকর্ষণ নেই, যে হৃদয়ে রাতের গভীরে উঠে মুসল্লায় গিয়ে দাঁড়াতে উৎসাহিত করেনা, যে হৃদয় কপালকে মাটিতে টেনে নিয়ে যায় না, যে হৃদয় পাপী মনকে অশ্রু বিষর্জনে তড়িত করে না- সে হৃদয় তো হৃদয় নয়। সে হৃদয় তো পাথরের চাইতেও কঠোর।

বন্ধুরা আমার! আজ যারা স্ত্রী তারা স্বামীদের ভালোবাসার স্বাদ আস্বাদন করেছে। মা-বাবা সন্তানের ভালোবাসার গন্ধ লাভ করেছে। এই পৃথিবীতে আমরা সকলেই অর্থ-কড়ি ও সোনা-রূপার ভালোবাসা চোখে দেখেছি। কিন্তু যা চোখে দেখিনি তা হলো আল্লাহর ভালোবাসা, আল্লাহর প্রেম। আজ আমাদের হৃদয়ে আল্লাহপ্রেমে কাঁদার, অস্হির হওয়ার, কষ্ট ভোগ করার দৌলত নেই। এই উম্মত আজ বন্ধ্যা হয়ে পড়েছে। হৃদয় জগৎ তাদের বিরান। হৃদয় তাদের অন্ধ। চোখ আলোকিত। ঘর উজ্বল। কিন্তু হৃদয় আঁধারে আচ্ছাদিত।

যারা আল্লাহর ভয়ে রাতের গভীরে উঠে কাঁদতো তাঁরা আজ নেই। এখন আমাদের রাত কাটে মৃতদের মতো। আমাদের দিন কাটে বেকার। আজ নারীরা নির্যাতিত। আজকের নারীদের ঘরের জন্য খাবার রান্না করা, ঘর গোছানো আর সন্তান লালন-পালন ব্যাতিত আর কোন কর্তব্যের কথা বলাই হয় না।

আমি মূলত আমাদের মুসলমান ভাই ও বোনদের সমীপে এইটুকু বলতে চাই- আমাদের জীবনের মূল টার্গেট হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্হাপন। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও হযরত রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসাই হলো আমাদের জীবনের মূল পুঁজি। এই পুঁজিকে সামনে রেখেই মূলত আমাদের অগ্রসর হতে হবে। এর বাইরে যা কিছু আছে সব থাকবে পেছনে।

কিন্তু কি করবো? আমাদের নারীগণ সকালে নাস্তা থেকে অবসর হতেই দুপুরের রান্না শুরু হয়ে যায়। দুপুরের খানাপিনা শেষ হতেই শুরু হয় বিকেলের চায়ের প্রস্তুতি। বিকালের চা-নাস্তা থেকে অবসর হতেই শুরু হয় রাতের খানাপিনার আয়োজন। অতঃপর ক্লান্ত শরীরে তাঁরা এলিয়ে পড়ে বিছানায়। গভীর অবসন্নতা ও ক্লান্তির ভেতর দিয়ে কেটে যায় রাত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সকল আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু হয় পেট। যা মূলত পেশাব-পায়খানারই আয়োজন।

অথচ আমরা আমাদের অতীতের দিকে তাকালে দেখবো, হযরত রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে দুই দুই মাস পর্যন্ত চুলায় আগুন জ্বলতো না। কোন খাবার রান্না করার আয়োজন হতো না। ঘরে কোন অলংকার ছিলো না। অতিরিক্ত কাপড়-চোপড় ছিল না। ছিল না ঘর গোছানো আর রান্নাবান্নার বিচিত্র আয়োজন। তবু হৃদয় আল্লাহর ভালোবাসায় ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ।”

তাই বিদায়বেলা কয়েকটি কথা বলতে চাইঃ
খেলায় মজিয়া শিশু কাটাইও না বেলা
সময়ের প্রতি কভু করিও না হেলা!

আজি যে সময় গত হইলো তোমার
আসিবেনা পুনঃ তাহা আসিবে না আর!

তাই বলি বৃথা কাল করিও না ক্ষয়
আপন কাজ কর থাকিতে সময়!
সূত্রঃ ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত