ইসলামে রাষ্ট্রধারণা

ইসলাম ধর্ম ও ইসলামী সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বকে নিয়ে ইসলাম একটি সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা। তবে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক পার্থক্য রক্ষা করা হয়েছে ইসলামে। রাষ্ট্রব্যবস্থাসহ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া সকল দেশের সকল সমাজের মানুষের জন্য পালনীয় প্রশস্ততা ইসলামে রয়েছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে মুমিনের ধর্ম পালনের জন্য শর্ত বা মূল বিষয় বলে গণ্য করা হয়নি। রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইসলামের একটি অংশ। ইসলামে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় বিধিবিধান আছে। তবে ইসলাম শুধু রাষ্ট্র ব্যবস্থার নাম নয়।
ইসলামের আরাকান এবং অন্যান্য ফরজ ও নফল ইবাদত সাধ্যমত পালনের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি নিজের জীবনে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্ঠা করবেন। কোনো মুসলিম রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্বে থাকলে তিনি তার দায়িত্ব আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে পালন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে তার নিজ জীবনের অন্যান্য কর্মের মতো রাষ্ট্রীয় কর্ম আল্লাহর হুকুম মতো পালন করা তার দায়িত্ব। অন্যান্য মুসলিমের দায়িত্ব রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যক্তি বা পরিবারের সকল ক্ষেত্রে সবাইকে আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য দাওয়াত দেওয়া। যে কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহ বা তাঁর রাসূলের (সা) নির্দেশ লঙ্ঘিত হলে সুযোগ ও সাধ্যমত কোরআন নির্দেশিত উত্তম আচরণ দ্বারা খারাপ আচরণের প্রতিরোধ পদ্ধতিতে দাওয়াত, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের মাধ্যমে তা সংশোধন ও পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন। তবে এ চেষ্টা সফল না হলে মুমিনের দ্বীন পালন ব্যাহত হবে কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্রের পাপের কারণে ব্যক্তি মুমিন পাপী হবেন– এরূপ চিন্তার কোনো ভিত্তি নেই।
ইসলামী রাষ্ট্রের প্রকৃতি
ইসলাম সর্বকালের ও সর্বযুগের সমগ্র মানব জাতির জন্য স্থায়ী জীবন ব্যবস্থা এবং বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন ধর্ম। কোরআনে কারীম, হাদীসে রাসূল (সা) ও সাহাবীগণের জীবন পদ্ধতি থেকে আমরা দেখতে পাই, এতে দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে: (১) যুগ, সমাজ, সামাজিক রুচি ও আচার আচরণের পরিবর্তনের ফলে ইসলামের ধর্মীয় রূপে যেন পরিবর্তন না আসে। (২) যুগ, সমাজ, আচার-আচরণ ইত্যাদির পরিবর্তনের কারণে ইসলামের আহকাম পালনে যেন কারো কোনো অসুবিধা না হয়। সকল যুগের সকল দেশের মানুষেরা যেন সহজেই জীবনধর্ম ইসলাম পালন করতে পারে।
এ মূলনীতির ভিত্তিতে ইসলামে মানবজীবনের কর্মকাণ্ডকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে: (১) ইবাদত ও (২) মুয়ামালাত। মানুষকে জীবন ধারণ করতে জাগতিক ও জৈবিক প্রয়োজনে যা করতে হয় এবং বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী ও ধার্মিক-অধার্মিক সকলেই যা করেন তা মুয়ামালাত বা জাগতিক কর্ম বলে গণ্য। আর জাগতিক প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে শুধু মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য মানুষ যে কর্ম করে তা ইবাদত বলে গণ্য।
ইবাদত ও মুয়ামালাতের পার্থক্য নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লেখা ‘এহইয়াউস সুনান’ গ্রন্থটি পাঠ করতে পাঠককে অনুরোধ করছি। এখানে সংক্ষেপে এটুকু বলা যায়– ইবাদতের ক্ষেত্রে ইসলামে বিস্তারিত ও খুঁটিনাটি নিয়ম-পদ্ধতি ও বিধিবিধান প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) যে কর্ম যেভাবে করেছেন, অবিকল সেভাবে করার বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে মুয়ামালাত বা জাগতিক কর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশস্ততা দেওয়া হয়েছে। কিছু মূলনীতি প্রদান করা হয়েছে এবং ফরজ ও হারাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে সবই বৈধ বলে গণ্য হবে। মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ে রাসূলূল্লাহ (সা) থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তা বৈধ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) যা করেননি তা করা নিষিদ্ধ। আর মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) যা নিষেধ করেছেন শুধু তাই নিষিদ্ধ, যা তিনি নিষেধ করেননি তা বৈধ।
চাষাবাদ, চিকিৎসা, বাড়িঘর তৈরি ইত্যাদি জাগতিক বিষয়ে যেমন প্রশস্ততা প্রদান করা হয়েছে, তেমনি প্রশস্ততা প্রদান করা হয়েছে ইবাদত পালনের জাগতিক উপকরণের ক্ষেত্রে। যেমন ইলম শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে শিক্ষার পদ্ধতি, উপকরণ ইত্যাদির বিষয় উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কেই বলতে পারেন না যে, সাহাবীদের যুগে ছাপানো বই, পরীক্ষা পদ্ধতি বা সনদ প্রদানের পদ্ধতি ছিল না, কাজেই এখন তা নিষিদ্ধ। বরং যতক্ষণ না শরীয়তে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যাবে ততক্ষণ তা বৈধ।

বিবাহ, পরিবার গঠন, আবাসন, চিকিৎসা ইত্যাদির মতো রাষ্ট্র গঠন, রাষ্ট্র পরিচালনা ও এ বিষয়ক দায়িত্বাবলি ‘মুয়ামালাত’। এজন্য এ বিষয়ে ইসলামের মৌলিক নীতিমালার মধ্যে প্রশস্ততা প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর খুঁটিনাটি বিষয়ে দেশ, যুগ, জাতি ও পরিবেশের আলোকে ভিন্নতার অবকাশ রাখা হয়েছে।

এ সকল মূলনীতির আলোকে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনার জন্য পৃথক গ্রন্থের প্রয়োজন। এখানে সংক্ষেপে বলা যায় যে, ইসলামী রাষ্ট্র ‘থিওক্র্যাটিক’ বা পুরোহিততান্ত্রিক নয়, বরং জনগণতান্ত্রিক। এখানে মোল্লা, পুরোহিত, ইমাম বা অন্য কোনো ধর্মীয় নেতাকে ‘আল্লাহর নামে’ বা ‘আল্লাহর খলীফা’ হয়ে শাসন করার ক্ষমতা বা সুযোগ দেওয়া হয়নি। ইসলামে কখনোই শাসককে ‘আল্লাহর খলীফা’ হিসেবে গণ্য করা হয়নি, তাকে বিশেষ অধিকার, ক্ষমতা বা অভ্রান্ততা প্রদান করা হয়নি বা তাকে জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে রাখা হয়নি। বরং শাসককে জনগণের প্রতিনিধি ও জনগণের কাছে জবাবদিহিতা রয়েছে বলে গণ্য করা হয়েছে।
কেবলমাত্র ‘শিয়া’ সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাসে ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে রাজতান্ত্রিক ও পুরোহিততান্ত্রিক বলে দাবি করা হয়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন, ইসলামের রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব বা রাষ্ট্রক্ষমতা আলীর (রা) বংশধরদের পাওনা। আর ‘রাষ্ট্রীয় নেতা’ বা ইমাম আল্লাহর খলীফা হিসেবে বিশেষ জ্ঞান, ক্ষমতা ও অধিকার সংরক্ষণ করেন। রাষ্ট্রীয় বিষয়ে তাঁর মতামতই চূড়ান্ত। তাঁর অনুপস্থিতি বা অদৃশ্য থাকা অবস্থায় ‘ফকীহ’ তাঁর প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। কোরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট নির্দেশনার আলোকে সাহাবীগণ ও পরবর্তী মূলধারার মুসলিম আলিমগণ এ মত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বস্তুত রাসূলুল্লাহর (সা) আগমনের সময়ে পৃথিবীতে বিদ্যমান রাষ্ট্রগুলির মধ্যে তিনটি মূল বিষয় দেখা যায়:
প্রথমত: রাষ্ট্রক্ষমতার উৎস বংশ বা জবরদখল
রাজবংশের কেউ রাজা হবে এটাই ছিল সর্বজন স্বীকৃত রীতি। রাজতন্ত্রের বাইরে ক্ষমতা গ্রহণের একমাত্র উৎস ছিল অস্ত্র বা জবরদখল। রাজাকে হত্যা করে বা অস্ত্রের ক্ষমতায় রাজদণ্ড গ্রহণ করা।
 
দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্রের মালিকানা বা সার্বভৌমত্ব রাজার
রাজ্যের সকল সম্পদ ও নাগরিক রাজার মালিকানাধীন। তিনি সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। রাষ্ট্রের সম্পদ ও নাগরিকদের বিষয়ে তিনি ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন এবং তার সিদ্ধান্ত প্রশ্নাতীত।
এরূপ সর্বোচ্চ ক্ষমতা বুঝাতে ইংরেজিতে sovereignty শব্দটি ব্যবহার করা হয়। শব্দটি প্রাচীন ফরাসী souverain, ল্যাটিন superanus/super শব্দ থেকে এসেছে। এর মূল অর্থ above বা ঊর্ধ্বে। যেহেতু রাজার ক্ষমতা সকলের ঊর্ধ্বে সেহেতু রাজাকে ইংরেজিতে sovereign বলা হয়। ইংরেজিতে sovereign অর্থই king বা রাজা। আরবি অভিধানেও sovereign অর্থ ملك (মালিক তথা রাজা)। আর sovereignty শব্দের অর্থ বাংলায় রাজত্ব এবং আরবিতে الملك (মুলক) বা السيادة (সিয়াদাত), অর্থাৎ রাজত্ব বা কর্তৃত্ব।
বাংলায় এর প্রতিশব্দ হিসেবে ‘সার্বভৌমত্ব’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বাংলা এ শব্দটি ‘সর্বভূমি’ থেকে গৃহীত। এর অর্থ ‘বিশ্বজনীন’ বা universal হওয়া উচিত। ইংরেজি sovereign বা সবোর্চ্চ শব্দের মূল অর্থের সাথে বাংলা সর্বভূমি বা বিশ্বজনীন শব্দের মূল অর্থের মিল নেই। তবে প্রাচীন যুগে ‘সারা বিশ্বে পরিচিত’ অর্থে শাসক বা বড় পণ্ডিতকে ‘সার্বভৌম’ উপাধি দেওয়া হতো। এভাবে রাজাকে ‘সার্বভৌম’ বলার প্রচলন ঘটে। আর এ থেকেই রাজত্বকে সার্বভৌমত্ব বলা হয়।
তৃতীয়ত: রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি বা প্রতিভূ
প্রায় সকল সমাজেই রাজাকে কোনো না কোনোভাবে ঈশ্বরের পুত্র, প্রতিনিধি বা বংশধর বলে কল্পনা করে তাকে ঐশ্বরিক বা ধর্মীয় পবিত্রতা, অধিকার ও অভ্রান্ততা (infallibility) প্রদান করা হয়েছে। বিশেষত খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকের শুরুতে বাইজেন্টাইন-রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা প্রদানের পর থেকে ইউরোপে থিওক্র্যাটিক শাসনের শুরু হয় এবং ধর্মের নামে বা আল্লাহর নামে শাসক ও পুরোহিতদেরকে আল্লাহর প্রতিনিধি ও প্রতিভূ হিসেবে বিশেষ পবিত্রতা প্রদান করা হয়। তাদের নির্দেশ আক্ষরিক অর্থে পালন করা ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের নির্দেশ অমান্য করা ধর্মদ্রোহিতা বলে গণ্য হয়।
অন্যদিকে, রাসূলুল্লাহ (সা) রাষ্ট্রের বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন মূলনীতি প্রদান করেছেন। তাঁর দেওয়া মূলনীতির প্রধান দিকগুলো নিম্নরূপ:
প্রথমত: রাষ্ট্রক্ষমতার উৎস হলো নাগরিকদের পরামর্শ
কোরআন কারীমে এবং হাদীস শরীফে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের পরামর্শ গ্রহণের নির্দেশ মুমিনকে দেওয়া হয়েছে। এ মূলনীতি হাতে-কলমে শেখানোর জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর পরে কাউকে রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য মনোনয়ন দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। যেন মুসলমানগণ পরামর্শ ব্যবস্থার বাস্তব প্রয়োগ করতে পারেন।
মুমিনদের মৌলিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
“যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দিয়েছে, নামাজ কায়েম করেছে, তাদের কর্ম তাদের মধ্যে পারস্পরিক পরামর্শভিত্তিক এবং তাদেরকে যা রিজিক প্রদান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।”[1]
তাহলে, মুমিনদের সকল কর্ম হবে তাদের সকলের পরামর্শভিত্তিক। যে বিষয়ে আল্লাহর সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই, এরূপ যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের পরামর্শ গ্রহণই মুসলিম সমাজের বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি হলো এ জাতীয় বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। কারণ, এটি সকল নাগরিকের স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট। শাসক, প্রশাসক, সরকার বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন, নির্বাচনের মেয়াদ, সরকার পরিচালনা পদ্ধতি, এ বিষয়ক নীতি নির্ধারণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হলো সংশ্লিষ্ট সকলেই পরামর্শ প্রদান করবেন। নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাধারণ-অসাধারণ সকলের পরামর্শ গ্রহণ এ নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। কাউকে বাদ দেওয়ার কোনোরূপ নির্দেশনা নেই। যদি কেউ পরামর্শ দেন ও অন্যরা মেনে নেন তাহলেও অসুবিধা নেই।
কোরআন-হাদীসে সংশ্লিষ্ট সকলের পরামর্শ গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে, তবে পরামর্শ গ্রহণের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বরং অন্যান্য জাগতিক ও উপকরণ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির মতো এ বিষয়টিকে যুগ, জাতি ও পরিবেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মানুষদের অবস্থা অনুসারে সরাসরি সকল নাগরিকের, তাদের প্রতিনিধিদের, গোত্রপতিদের, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের বা সামাজিক নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে। এরূপ পরামর্শ গ্রহণ মৌখিক হতে পারে বা গোপন ব্যালটে হতে পারে। এক্ষেত্রে পরামর্শ গ্রহণের কোনো একটি পদ্ধতিকে ইসলামী বা ইসলাম বিরোধী বলে গণ্য করার কোনো সুযোগ নেই।
সাহাবীগণ যুগ বা পরবর্তী যুগে ছিল না বলে কিংবা প্রাচীন ফিকাহ গ্রন্থে লেখা নেই বলে সার্বজনীন ভোট ব্যবস্থা, ৪/৫ বছর পর পর ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা বা পরামর্শ গ্রহণের অনুরূপ কোনো পদ্ধতিকে ইসলাম বিরোধী বলে চিন্তা করা আর মাদ্রাসার পরীক্ষা ব্যবস্থা, সনদ প্রদানের ব্যবস্থা, ছাপানো বই পড়ার ব্যবস্থা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যবহারকে ইসলাম বিরোধী বা নিষিদ্ধ বলে চিন্তা করা একই ধরনের অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তি।
দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের
মালিকানা দুই প্রকার। (১) সকল কিছুর প্রকৃত মালিকানা মহান আল্লাহর। তিনিই মালিক, রাজা বা sovereign। (২) পাশাপাশি জাগতিকভাবে মানুষকে দুনিয়াতে তার সম্পদের মালিকানা প্রদান করা হয়েছে এবং মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের।
আমরা দেখেছি, প্রাচীন ব্যবস্থায় রাজা ছিলেন sovereign বা সার্বভৌম। রাজ্যের সকল সম্পদ ও নাগরিকের সর্বোচ্চ বা প্রশ্নাতীত মালিকানা (sovereignty) ছিল তার একার। তিনি নিজের প্রয়োজন, সুবিধা ও ইচ্ছামতো তা ব্যবহার করবেন, এতে কারো কোনো আপত্তি বা প্রশ্ন করার অধিকার ছিল না। পক্ষান্তরে ইসলামে রাষ্ট্রের মালিকানা নাগরিকদের। একজন মুমিন নিজের মালিকানাধীন জমিন যেমন আল্লাহর নির্দেশের আওতায় নিজের প্রয়োজন, সুবিধা ও ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারেন, তেমনি রাষ্ট্রের জনগণ রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা ও সম্পদ আল্লাহর নির্দেশের আওতায় থেকে নিজেদের প্রয়োজন ও সুবিধা অনুসারে ব্যবহার করবেন।
নিজের মালিকানাধীন সম্পদ, অর্থ ও অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় রাষ্ট্রের বিষয়াবলিও আল্লাহর নির্দেশ মতো পরিচালনার করার বিষয়ে জনগণ দায়বদ্ধ। এ দায় পালনের জন্য শাসক হলেন জনগণের প্রতিনিধি। শাসক রাষ্ট্রের মালিক নন, বরং জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তাই তিনি জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। জনগণ তাকে যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে, শাসন ও সংশোধন করতে পারে।
এজন্যই শাসক বা সরকার নির্বাচনে জনগণের পরামর্শ গ্রহণের নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের মধ্য থেকে তাদের পরামর্শে সরকার নির্বাচিত হবে। আর তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।
তৃতীয়ত: শাসকের কোনো অভ্রান্ততা বা পবিত্রতা নেই
ইসলামের দৃষ্টিতে শাসক কখনোই আল্লাহর খলীফা বা স্থলাভিষিক্ত (successor/vicar) নন। অন্য সকল মানুষের মতোই তিনি আল্লাহর বিধান ও ব্যবস্থার অধীন। মহান আল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যে মূলনীতি প্রদান করেছেন তা পালন করতে তিনি বাধ্য।
রাষ্ট্রপরিচালনা বিষয়ে ইসলাম কিছু মূলনীতি দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মৌলিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করা; জীবন, জীবিকা, ধর্ম, বাসস্থান ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; জনগণের পরামর্শ গ্রহণ করা, বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, অপরাধীর সঠিক শাস্তি নিশ্চিত করা ইত্যাদি। বিচার ও শাস্তির ক্ষেত্রে ইসলামে কিছু শাস্তি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যেগুলো সমাজের অপরাধ দমন করে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে। অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে শাসক, সরকার বা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
এ সকল মূলনীতি ও বিধিবিধানের প্রয়োগ এবং ইসলামের নির্দেশনার ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে শাসকের নিজস্ব কোনো পবিত্রতা বা অভ্রান্ততা নেই। জনগণকে শাসন করা, নির্দেশ দেওয়া বা আল্লাহর বিধানের ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে তাঁর নিজের মতের কোনো বিশেষ মূল্য নেই। তার ব্যাখ্যা বা সিদ্ধান্ত ভুল বলে মনে হলে যে কেউ তার সমালোচনা এবং ভুল সংশোধন করতে পারেন।
অন্যান্য মুয়ামালাতের ন্যায় রাষ্ট্রনীতি ও আইন-বিচারের ক্ষেত্রে ইসলামে মূলনীতি দেওয়া হয়েছে এবং প্রায়োগিক ক্ষেত্রে প্রশস্ততা প্রদান করা হয়েছে। কয়েকটি অপরাধের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু শাস্তি প্রদানের প্রক্রিয়া কঠিন করা হয়েছে। নীতি, বিধান ইত্যাদির ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের ব্যাপারে কাউকে অভ্রান্ততা দেওয়া হয়নি। এজন্য মুসলিম দেশগুলোতে কখনোই ইউরোপের মতো স্বৈরাচার বা থিওক্র্যাসি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় আলেমগণ কখনো ধর্মের নামে ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। আলেমগণ কোরআন-হাদীসের নীতিমালা ব্যাখ্যা করেছেন, আর শাসকগণ তা প্রয়োগ করেছেন। উভয় বিভাগেরই স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা ছিল। ব্যাখ্যায় ভুল হয়েছে বলে মনে হলে শাসকগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সকল আলেমের পরামর্শ নিয়েছেন। অন্যদিকে, প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে ভুল হয়েছে মনে করলে জনগণ ও আলেমগণ প্রতিবাদ করেছেন। সকল স্বৈরাচারী শাসনের মধ্যেও শাসকের সমালোচনা, কমবেশি বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, গবেষণা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত ছিল। কখনোই কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে ধর্মের নামে ভিন্নমতাবলম্বী বা ভিন্নধর্মীর উপর নিয়মতান্ত্রিক বা রাষ্ট্রীয় নির্যাতন করা হয়নি। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতক থেকে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত ইউরোপ, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের যে কোনো অমুসলিম দেশের সাথে সে যুগের মুসলিম দেশগুলোর অবস্থা তুলনা করলে যে কোনো গবেষক নিশ্চিত হবেন যে, মুসলিম দেশগুলোতে সকল ধর্মের মানুষ সর্বোচ্চ নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেছেন।
ইসলাম ও ‘তন্ত্র’
‘তন্ত্র’ বা  cracy একটি আধুনিক পরিভাষা। বাংলায় ‘তন্ত্র’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে। যেমন– শাস্ত্র, বিদ্যা, প্রাধান্য, রাজ্যশাসন পদ্ধতি ইত্যাদি। এখানে আমাদের উদ্দেশ্য হলো ‘রাজ্যশাসন পদ্ধতি’, যা ইংরেজি cracy শব্দের অনুবাদ হিসেবে ব্যবহৃত। ইংরেজি cracy শব্দটি গ্রীক Kratos শব্দ থেকে আগত, যার অর্থ power, strength, rule (ক্ষমতা, শক্তি, শাসন) ইত্যাদি।
বিশ্বের অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন ‘রাজ্যশাসন পদ্ধতি’ পর্যালোচনা করলে আমরা বলতে পারি, রাজ্যশাসন পদ্ধতি মূলত দুই প্রকারের হতে পারে:
(১) জনগণের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে
(২) শাসকের একচ্ছত্র ক্ষমতার ভিত্তিতে
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে অর্থাৎ শাসকের একচ্ছত্র অধিকার ও ক্ষমতার উৎস হতে পারে তার বংশ বা দখল কিংবা ‘ঐশ্বরিক’। শাসক নিজের বংশ বা দখলের অধিকারে রাষ্ট্রের সকল কিছুর মালিকানা দাবি করবেন, অথবা নিজেকে ‘ঈশ্বরের’ প্রতিনিধি হিসেবে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করবেন।
আধুনিক পরিভাষায় ‘রাজ্যশাসনের’ প্রথম পদ্ধতিটি ‘গণতন্ত্র’ (Democracy) এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিটি ‘স্বৈরতন্ত্র’ (Autocracy) নামে পরিচিত। আর যদি শাসক বা শাসকগোষ্ঠী তাদের ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব বা ধর্মীয় অভ্রান্ততা দাবি করেন তাহলে তা ‘পুরোহিততন্ত্র’ বা ‘যাজকতন্ত্র’ (Theocracy) নামে পরিচিত। এখন প্রশ্ন হলো, উপরে আলোচিত ইসলামের ‘রাজ্যশাসন পদ্ধতি’কে আমরা কোন প্রকারের বলে গণ্য করব?
আমরা অনেক সময় বলি, ইসলাম ইসলামই, একে কোনো তন্ত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কথাটির মধ্যে সত্যতা রয়েছে। তবে যে ব্যক্তি ইসলামকে ভালোভাবে জানেন না, তাকে ইসলামের বিষয় বুঝাতে হলে তাঁর ভাষায় বা পরিভাষায় অনুবাদ করেই তাঁকে বুঝাতে হবে। এছাড়া ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম, যার মধ্যে বিশ্বাস, কর্ম, আচার-আচরণ, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সকল বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। ‘ইসলাম’ বললে এই সবকিছুর সমষ্টি বুঝায়। রাজ্যশাসন পদ্ধতি বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনার সমষ্টিকে আমরা সহজবোধ্যভাবে কী বলতে পারি? ইসলামের রাজ্যশাসন পদ্ধতি কি গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, নাকি পুরোহিততন্ত্র? কোনোটিই যদি না হয়, তাহলে এগুলোর কোনটির অন্তত সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী?
উপরের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পারি, ইসলামের রাজ্যশাসন পদ্ধতি ‘গণতান্ত্রিক’। কিন্তু ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে পাশ্চাত্য গবেষকগণ একে Theocracy বলে উল্লেখ করেছেন। Theocracy শব্দটি গ্রীক (theokratia) থেকে আগত। এর অর্থ government by a god বা একজন দেবতার সরকার। এ ব্যবস্থায় দেবতা, ঈশ্বর বা মহান স্রষ্টাকে একচ্ছত্র ক্ষমতা ও সবোর্চ্চ মালিকানার অধিকারী (sole sovereign) এবং সকল আইনকে ঈশ্বরের নির্দেশ বলে গণ্য করা হয়। স্বভাবতই দেবতা বা ঈশ্বর নিজে শাসন করেন না। কাজেই ঈশ্বরের নামে পুরোহিতগণ বা রাজাই শাসন পরিচালনা করেন। তবে তারা নিজেদেরকে ‘ঈশ্বরের প্রতিনিধি’ বলে দাবি করেন এবং তাদের আদেশ-নিষেধকে অলঙ্ঘনীয় ঐশ্বরিক নির্দেশ বলে গণ্য করেন।
ইসলামে আল্লাহকে সর্বোচ্চ মালিকানার অধিকারী (sovereign) বলে বিশ্বাস করা হয়। তিনিই হুকুম, নিদের্শ বা বিধান প্রদানের অধিকারী। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, ইসলামী শাসনব্যবস্থা থিওক্র্যাটিক। থিওক্র্যাসির সাথে ইসলামের মৌলিক পার্থক্য হলো, থিওক্র্যাসিতে রাজা বা পুরোহিতগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তারা ধর্মের নামে বা ঈশ্বরের নামে যে ব্যাখ্যা, আইন বা বিধান প্রদান করবেন তা মান্য করা জনগণের ‘ধর্মীয় দায়িত্ব’ এবং অমান্য করা ‘ধর্মদ্রোহিতা’। থিওক্র্যাসি হলো ঈশ্বর বা ধর্মের নামে পরিচালিত স্বৈরতন্ত্র।

থিওক্র্যাসির মূল প্রেরণা বর্ণনা করে রাজা প্রথম জেমস (১৫৬৬-১৬২৫) বলেন, “The state of monarchy is the supremest thing upon earth: for kings are not only god’s lieutenants upon earth, and sit upon God’s throne, but even by God himself they are called gods.” অর্থাৎ, “রাজার অবস্থানই পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। কারণ, রাজাগণ পৃথিবীর বুকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং ঈশ্বরের সিংহাসনে আসীন। শুধু তাই নয়, স্বয়ং ঈশ্বর তাদেরকে ঈশ্বর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।” (মাইক্রোসফট এনকার্টা)

পক্ষান্তরে ইসলামে আল্লাহর নির্দেশ, হুকুম বা বিধান সকল মানুষের জন্য উন্মুক্তভাবে প্রদান করা হয়েছে। ‘রাজ্যশাসন’ বিষয়েও আল্লাহ মূলনীতি প্রদান করেছেন। এগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। এর প্রয়োগে, ব্যাখ্যা বা আইন প্রণয়নে রাজা বা যাজকগণের কোনোরূপ বিশেষত্ব নেই। বরং রাজ্যশাসন বিষয়ক ইসলামের নীতিমালা ‘লিখিত সংবিধানের’ মতোই স্বৈরতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের অধিকার রক্ষার অন্যতম মাধ্যম।
গণতন্ত্রের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, গণতন্ত্র নির্ধারিত কোনো সরকার ব্যবস্থা নয়। রাজ্যশাসন ব্যবস্থায় যে কোনোভাবে জনগণের অংশীদারিত্ব, পরামর্শ গ্রহণ ও জনগণের নিকট জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকলেই তাকে ‘গণতন্ত্র’ বলা যায়। এ অর্থে মূলত ইসলামই সর্বপ্রথম একটি ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রদান করেছে। ইসলামের আগে গ্রীস ও রোমে গণতন্ত্রের কিছু চর্চা হয়েছিল। এরপর তা বিলীন হয়ে যায় এবং বিশ্বের সর্বত্র রাজতান্ত্রিক বা যাজকতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রাসূলু্ল্লাহ (সা) সর্বপ্রথম পরামর্শভিত্তিক প্রতিনিধিত্বমূলক ‘গণতান্ত্রিক’ ব্যবস্থা প্রদান করেন।
জনগণতান্ত্রিক এ নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন তৎকালীন প্রেক্ষাপটে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে খিলাফতে রাশেদার পর থেকেই কমবেশি বিচ্যুতি শুরু হয়। তারপরেও ইসলামের ইতিহাসের যে কোনো যুগের স্বৈরাচারী শাসকদের সাথে তৎকালীন ইউরোপের চার্চ ও খৃস্টান শাসকদের তুলনা করলে যে কোনো গবেষক নিশ্চিত হবেন, ইসলামের এ মূলনীতির প্রভাব সর্বদা বিদ্যমান ছিল।
রেফারেন্স
[1] সূরা (৪২) শূরা: আয়াত ৩৮।