ইসলামে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ধৈর্য মানবজাতির জন্য এক মহান শক্তি। ধৈর্যক্ষমতা মানুষকে পৌঁছে দেয় সুনিশ্চিত বিজয়ে। সে বিজয় হোক যুদ্ধক্ষেত্র, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, দুনিয়া ও পরকালে। ধৈর্যশীলদের পাশে থাকার ঘোষণা আল্লাহরও রয়েছে। আল্লাহর ঘোষণা ‘তোমরা ধৈর্য ধরো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সূরা আনফাল : ৪৬)।

ধৈর্যশীলদের প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। যারা এ দুনিয়াতে সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা ধৈর্যশীল, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।’ (সূরা জুমার : ১০)।

ধৈর্যশীলদের উত্তম প্রতিদানের ওয়াদা আল্লাহ তায়ালা নিজেই করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই ধৈর্যশীলদের আমলের চেয়েও উত্তম প্রতিদান দেয়া হবে।’ (সূরা নাহল : ৯৬)।

ধৈর্যসহিষ্ণুতার প্রতি মানবজাতিকে আল্লাহ তায়ালা উৎসাহ দেয়ার জন্য বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্যধারণ করো এবং ধৈর্যের মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন করো। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পারো।’ (সূরা আল ইমরান : ২০০)।

তিনি আরো বলেন, ‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ইত্তেবা করো। তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা করো, তবে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সূরা আনফাল : ৪৬)।

ইসলাম মা ও সহিষ্ণুতার যে নজির দেখিয়েছে, তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। রাসূলুল্লাহ সা:-এর মিশন ছিল শান্তি-সৌহার্দ্যপূর্ণ স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা। এ জন্য তিনি ধৈর্য ও মার আদর্শকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

ধৈর্য ছাড়া কোনো ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ অর্জনে সে ধৈর্যের মুখাপেী। কেননা আমল অল্প হোক কিংবা বেশি, তা আদায় করতে হলে উপযুক্ত ধৈর্যের প্রয়োজন। তাই তো এর প্রতি উৎসাহ দিয়ে অনেক আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে মাসউদ রা: বলেন, ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক। রাসূল সা: বলেন, কোনো বান্দাকে ধৈর্যের মতো উত্তম সম্পদ অন্য কিছু দেয়া হয়নি। (বুখারি)। যে ব্যক্তি ধৈর্যের অনুশীলন করে, আল্লাহ তাকে ধৈর্যধারণের তৌফিক দিয়ে দেন। (বুখারি)।

মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবনেও ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন অনেক বেশি। সুতরাং রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকপর্যায়ে ধৈর্যের চর্চা এবং ধৈর্যের ওপর অটল থাকার প্রয়োজনীয়তা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েও এখন অনেক বেশি। মহান আল্লাহ মানুষের শিক্ষা লাভের জন্য এমন বহু দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় রেখে দিয়েছেন। হজরত আইয়ুব আ:-এর ঘটনা এর একটি যথার্থ উদাহরণ। তাঁর পুরো শরীর পোকায় খাওয়ার পরও তিনি যে পবিত্র জিহ্বা দিয়ে আল্লাহর জিকির করতেন সে জিহ্বাও পোকায় খেতে শুরু করে। তবুও তিনি মহান আল্লাহর জিকির ও স্মরণ থেকে বিমুখ হননি। তাই আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে ধৈর্যের চর্চা করতে হবে।

সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই সহিষ্ণু হতে হবে এবং জনসাধারণকেও ধৈর্যের মাধ্যমে বাধা প্রতিবন্ধকতার চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সামনে এগোতে হবে। মনে রাখতে হবে দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা রয়েছেন, তারা যদি ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলেন, তাহলে সব ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হবে এবং ঝুঁকির মধ্যে পড়বে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। আল্লাহ আমাদের ধৈর্য ও সহনশীলতা দান করুন।

লেখক : মুফাসসেরে কুরআন