মুসলিম উম্মাহর চ্যালেঞ্জঃ আমাদের করনীয়

তেমেল কারামোল্লাওলু | প্রেসিডেন্ট সাদেত পার্টি |

আজ মুসলিম উম্মাহ যে ভয়াবহ বিপদগুলির সম্মুখীন তা পূর্বের তুলনায় অধিক ধ্বংসাত্নক ও তাৎপর্যপূর্ণ। বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীরা আধিপত্য বিস্তারের পথে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে তাদের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখছে, এজন্য তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী দুনিয়ায় কমিউনিজম যখন বড় কোন হুমকি হিসেবে অবশিষ্ট রইলো না, তখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি নতুন এক পরিস্থিতি তৈরি করলো যাতে পৃথিবীতে তাদের আধিপত্যকে দীর্ঘস্থায়ী করা যায়, আরও শক্তিশালী করা যায়।

এই প্রসঙ্গে,
অতীতে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানকে সমর্থন করেছিল এখন তারাই তালেবানকে বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে সাব্যস্ত করছে। ইরান বিপ্লবের পর যারা ইরানের বিরুদ্ধে সাদ্দামকে উস্কে দিয়েছিল, তাকে সহায়তা করেছিল; পরবর্তীতে যখন বুঝতে পারল এই পদক্ষেপ তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে না, তখন আবার এই সাদ্দামকে দিয়েই কুয়েত আক্রমণ করাল।

অতপর সাদ্দামকে কুয়েত আক্রমণের অজুহাত দিয়ে তাকে মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হিসাবে সাব্যস্ত করল, তারপরেই ইরাকে তাদের আক্রমণের পথ তৈরি করল।

সর্বশেষ, নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা, তিনটি ভবন ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা ইসলাম ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এক চুড়ান্ত যুদ্ধের সূচনা করে। স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজে একে ‘ক্রুসেড’ হিসেবে আখ্যা দেয়। অথচ তদন্ত ও বিশ্লেষণকারী বিবেকবান বিজ্ঞানীগণ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন টুইন টাওয়ার এবং পেন্টাগনের উপর হামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, কোন বিমান তৃতীয় বিল্ডিংয়ে (যা টুইন টাওয়ার ধ্বসের কিছুক্ষণ পর ধ্বসে পড়ে) আঘাত হানেনি। পার্শ্ববর্তী বিল্ডিংয়গুলোর কোন ধরণের ক্ষয়-ক্ষতি না করেই এটি ধ্বংস করা কেবল পূর্বের মজুদ রাখা বিস্ফোরক দিয়েই সম্ভব।

অথচ এই সত্যগুলি(টুইন টাওয়ার হামলা সম্পর্কিত ঘটনা) যারা বলেছিল বা মতামত ব্যক্ত করেছিল, তাদেরকে বর্ণবাদী সাম্রাজ্যবাদ তথা জায়নবাদী শক্তির প্রভাবাধীন প্রচারমাধ্যম এবং সরকারগুলি, ব্যাপকহারে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছে। এই বিষয়গুলি (যা প্রমাণ করে এই হামলা মার্কিন সরকারের পূর্বপরিকল্পিত নীল নকশায় বাস্তবায়িত হয়েছিল, তা) প্রকাশ্যে আনা হয়নি। বরং পরবর্তীকালে এই নাটকগুলোকেই মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক আইনি ভিত্তি হিসাবে প্রবর্তন করে।

এই হামলার মামলা অভিযোগ উত্থাপন করেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট প্রথমে আফগানিস্তান অতঃপর ইরাক দখল করে। আর যে দেশগুলি তাদের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষার সাথে একমত ছিল না, তাদেরকে বিশেষত ইরান এবং সুদানকে শত্রু, দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র এবং বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হিসাবে সাব্যস্ত করে। যদিও তাদের বেশিরভাগ বর্বরতাই চূড়ান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। আফগান হত্যাকান্ড, ইরাকে ১০ লাখ মুসলমান নিধন, মুসলিম বিজ্ঞানীদের গুপ্ত হত্যা, নারকীয় শিশু নিধনযজ্ঞ, আবু গারিব ও ফাল্লুজাহে বর্বরতা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে এই অপরাধীরা ভয়াবহ মানবিকতাহীন, অনুভূতিহীন! তারা মূলত ইনসাফ, মানবাধিকার কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেনা।

স্বৈরাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনের শাসনের অভাবের কারণে এই অঞ্চলে সংঘবদ্ধ জুলুমতস্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে যাইহোক, তাদের ভয়াবহ বর্বরতাই তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে তুলেছে।

এই শক্তিগুলি যারা গুয়ান্তানামোতে কয়েক’শ নিরীহ মানুষের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছিল, তারাই হাজার হাজার আফগানকে কন্টেইনারে বন্দি করে বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে গাড়ি স্ট্রাইফ করে হত্যা করেছিল। সর্বোচ্চ সরকারী কর্মকর্তাদের সম্মতিতে আবু গারিবে মুসলমানরা যে বর্বরতার শিকার হয়েছিল তা কেবল মুসলমানদেরই আতঙ্কিত করেছে তা নয় বরং সমগ্র বিশ্বকে হতবাক করেছে।

ফাল্লুজার একটি মসজিদে আশ্রয় নেওয়ার সময় আমেরিকান সৈন্যরা নিরস্ত্র মানুষের উপর গুলি চালিয়ে তাদের রক্ত পিয়াসু দানবীয় চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছিল। সত্যি বলতে কি এই বর্বরতায় অবাক হওয়ার কিছুই নেই!!! এরা তো ঐসকল লোক যারা বিগত ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনিদেরে উপর ইস্রায়েলের অত্যাচারকে দৃঢ়তার সাথে সমর্থন দিয়ে আসছে।

১৯৪৭ সালে গৃহীত এক প্রস্তাবের ভিত্তিত্তে জাতিসংঘ ইস্রায়েলকে প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর ১৯৬৭ সালে ইস্রায়েলকে “দখলকৃত ভূমি” থেকে সরে আসার অনুরোধ করে জাতিসংঘ আশি কিংবা তারও অধিক প্রস্তাবকে অনুমোদন করে। অথচ জাতিসংঘ কর্তৃক ইস্রায়েলকে দখলদার বলার পরও বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়া এবং তাদের দোসর প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা উল্টো ফিলিস্তিনি জনগণকে সন্ত্রাসবাদী বলার দৃষ্টতা দেখিয়েছে এবং ইস্রায়েলকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য এখনো অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু ইসরায়েলী জায়নিস্টদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যবসায়ী, মিডিয়া এবং রাজনীতিবিদরা এটাও বুঝতে পেরেছে যে তারা ইরাক, আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনে যে বর্বরতা প্রদর্শন করছে তা তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে যথেষ্ট নয়।

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, অপবাদ ও সামরিক আগ্রাসনের হুমকি ইরান, সুদান কিংবা সিরিয়ায় প্রভাব ফেলেনি। তদুপরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের সমস্ত চাপ থাকা সত্ত্বেও এই দেশগুলি তাদের দৃঢ়তা দিয়ে অনেকের আস্থা অর্জন করেছে এবং বাকিদের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইন্তিফাদা আন্দোলন, যা তারা বিগত ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকাতে পারেনি, মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান ও ইরাকের প্রতিরোধ, সব ধরণের চাপ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর বিজয় হয়েছে। অথচ তারা মনে করেছিল মুসলিম প্রতিরোধ মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই এই সমস্ত ঘটনা বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদীদেরকে মুসলিম প্রতিরোধের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র প্রণয়নে করতে বাধ্য করেছে।

ইরাক, আফগানিস্তান, লেবানন ও সুদানে তাদের মূল পরিকল্পনাই ছিল ভাগ কর, শাসন কর (Divide and Rule)। মুসলমানদের মাঝে বিভেদ-অনৈক্য সৃষ্টিতে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করা, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব তৈরি করা, রীতিনীতি পার্থক্য করা ইত্যাদি বর্ণবাদী বিভাজনগুলোকে ভালভাবে কাজে লাগানো। তারা যখন বুঝতে পারল এই কৌশলটিও পর্যাপ্ত নয়, তখন তারা আরও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো।

আমি এখন পর্যন্ত যা কিছু উল্লেখ করেছি তা এটাই প্রমাণ করে, যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ এবং পৃথিবীর অপরাপর দেশগুলি এই বর্ণবাদী সাম্রাজ্যবাদীদের কৌশল বুঝে এদের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় (এক কথায় জায়নিস্টদের প্রতিহত না করা পর্যন্ত শান্তি আসবে না)। এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দী অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে তাদের কৌশলগুলি পরিবর্তন করে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অভিজ্ঞ, দক্ষ হয়ে উঠেছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত এই দক্ষতা সদা-সর্বদা দুর্নীতি আর দুর্বিত্তায়নেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা এখন পর্যন্ত অনেককিছুই অর্জন করেছে। এই অর্জনগুলো ধরে রাখতে এখন কৌশল পরিবর্তন করছে। আর রাজনৈতিক স্বৈরশাসন, সামরিক হস্তক্ষেপ পরিবর্তিত কৌশল বাস্তবায়নের হাতিয়ার।

বর্তমানে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাদের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতিটি হল ঐসকল রাজনীতিবিদদের চিহ্নিত করা, যাদের জনসম্পৃক্ততা রয়েছে এবং বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে হাত মিলাতে প্রস্তুত এমন রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় বসানো। সুতরাং, এই রক্ষণশীল সরকারগুলি যাদেরকে সাম্রাজ্যবাদীরা ক্ষমতায় এনেছে এবং যারা জনসাধারণের দ্বারা সমর্থিত তারা যেসকল রেজুলিউশন এবং অপারেশনগুলি করতে সমর্থ তা অন্য কেউ করার চেষ্টাও করতে পারেনি, সাহসও করেনি। (জনসমর্থিত সরকার সামরিক শাসক থেকে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। জনসমর্থিত সরকার যদি জায়োনিস্টদের গুটি হয় তবে জনতার বাধার মুখে পড়তে হয় না আর এতে জায়োনিস্টদের কাজ আদায়ও সহজ। সামনে এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আসছে – অনুবাদক)

তারা অন্যান্য দেশে যে সামরিক অভিযান চালায় সেগুলো এই কৌশলের ব্যাতিক্রম নয়। তারা জঘন্য সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে এবং যখন সত্য প্রকাশিত হয়ে যায় তখন তারা নিজেদের জনসাধারণকে বোঝানোর জন্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আখ্যা দিয়ে সবকিছুর দায় এড়ায়। (মধ্যপ্রাচ্য আক্রমণ নীতির ক্ষেত্রে আমেরিকা ও তুর্কি সরকার জনগণের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এ থেকে উত্তরণের জন্য ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আবিষ্কার করে-অনুবাদক)

আমাদের এ সত্যটি কখনই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, তারা মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা বোধ করে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না মুসলমানরা ইসলাম ত্যাগ করে এবং তাদের বিরোধীদের বিশ্বাসকে গ্রহণ না করে। “তারাতো বরং এটাই চায়, তারা নিজেরা যেমন কাফের হয়েছে তেমনি তোমরাও কাফেরর হয়ে যাও, যাতে তারা আর তোমরা পরস্পর সমান হয়ে যাও।” —সূরা আন-নিসাঃ ৮৯)
তাদের শাসনের ভিত্তি হক্ব নয় বরং “জোর যার মূল্লুক তার” এই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তারা যখন তাদের স্বার্থকে ঝুঁকির মধ্যে দেখতে পায় তখন ইনসাফের পরির্বতে দ্বিমুখী নীতি এবং স্বৈরাচারিতা অবলম্বন করে।

মানবাধিকার সম্পর্কে তাদের জঘন্য বোঝাপড়া মূলত অনৈতিক আচরণগুলিকে (যেমনঃ সমকামিতা, নগ্নতা, ব্যাভিচার, পরক্রিয়া ইত্যাদি) ন্যায্যতা দেয়া! যা প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপী সমাজগুলিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে চলেছে।

তাদের জন্য গণতন্ত্রের অর্থ সাধারণ জনগণকে, প্রশাসনকে এমন নির্বাচন করতে দেওয়া যা তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকেই রক্ষা করবে। তবে যদি তাদের প্রত্যাশা পূরণ যথাযথ না হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়াও দ্রুত হয়। যেমনটি ফিলিস্তিনে ঘটেছিল, যখন হামাস সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, তখন তারা হামাদের এই গণতান্ত্রিক বিজয়কে মেনে নিতে পারেনি। তাদের বড়বড় আর্থিক সংস্থাগুলিকে এবং মিডিয়া নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা জনগণের মতামতের হুকুমদাতা বনে যায় এবং তাদের পুতুল বা দালাল রাজনীতিবিদদের ভিন্ন পদ্ধতিতে পরিচালনা করে ক্ষমতায় নিয়ে আসে এবং তাদেরকে নিজস্ব লক্ষ্য পূরণের নির্দেশ দেয়।

এখন আমি মুসলিম উম্মাহকে নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের জন্য বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত কৌশলগুলি সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করবঃ
১. অর্থনীতিঃ
মুসলিম দেশগুলি উন্নত হোক, শক্তিশালী হোক, বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তা কখনোই চায় না। আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল), ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ফুড অর্গানাইজেশন ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত প্রকল্পগুলির মাধ্যমেই মুসলিম দেশগুলির অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ মনে করা হয় উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সহায়তা করার জন্য এই সংস্থাগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মুসলমানদের মালিকানাধীন সম্পদ হয় আমেরিকান ব্যাংকে রাখা হয় নতুবা এমন বিনিয়োগে পরিণত করা হয় যা কখনোই মুসলিম বিশ্বকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে না। এই সংস্থাগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে বিলাসবহুল নির্মাণ প্রকল্পের মতো সম্পূর্ণ অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগে পরিণত করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, মুসলিম বিশ্বের অনেক সরকার এবং শাসকরা পশ্চিমাদের দ্বারা উপস্থাপিত এই পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করে।

আমরা যদি মনোযোগ দেই তাহলে দেখতে পাব যে, আমাদের যে বিশাল সম্পদ রয়েছে তা আমাদের বিকাশ এবং শক্তিশালী হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট শক্তির অপচেষ্টা আমাদের শিল্প বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতাকে উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারি। দক্ষিণ এশীয় সংকট চলাকালীন সময় ইন্দোনেশিয়ার বিমান ফ্যক্টরিকে বন্ধ করার শর্তে আইএমএফ অর্থ প্রদান করেছিল বা ঋণ দিয়েছিল! যদিও ইন্দোনেশিয়া ইতিমধ্যেই দুটি প্রোটোটাইপ প্লেন তৈরি করে ফেলেছিল।

অনুরূপভাবে তুরস্কে ১৯৭০ এর দশকে জোট সরকারের সময়ে প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান দ্বারা প্রবর্তিত “ভারী শিল্প প্রকল্প” বিভিন্ন অজুহাতে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পগুলি বন্ধ হওয়ার আগে মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সরকার নিয়ে (এই সময়ে প্রফেসর এরবাকানের দল ৩ বার সরকার গঠন করে) প্রায় দুইশ ষাটটি কারখানার ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল যার মধ্যে সত্তরটি এক বছরের মধ্যেই উৎপাদন শুরু করেছিল।

এই প্রকল্পগুলি তুরস্কের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর মধ্যে মহাকাশ, বিদ্যুৎ, অস্ত্র, সিমেন্ট, ইস্পাত শিল্প, জ্বালানি, যন্ত্র ও নির্মাণ সরঞ্জাম, সার কারখানা, কৃষিসহ আরো অনেক প্রকারের শিল্প কারখানা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ফ্যক্টরি সমূহ সমগ্র তুরস্কেই স্থাপণ করা হয়েছিল। এগুলো আমাদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করেই সম্ভব হয়েছিল। নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে যে উন্নয়ন করা সম্ভব, সেটা আমাদের এখান থেকে অনুধাবন করতে হবে।

তবে,উল্লেখিত শক্তিগুলো তাদের দোসর সরকার এর মাধ্যমে কেবলমাত্র এই শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকেই থামিয়ে দেয়নি বরং প্রতিশোধ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত কারখানাগুলি অকার্যকর করে তুলেছে।

তুরস্কে আসা বিদেশি মূলধনও এখন নতুন করে শিল্পায়নের জন্য ব্যবহৃত হয় না। উচ্চ সুদের হারের কারণে বিদেশী মূলধন দেশব্যাপী প্রবাহিত হয়। অতঃপর বিশ শতাংশেরও বেশি সুদের মুনাফা প্রতি বছর বিদেশে স্থানান্তরিত হয়। ইতিমধ্যে প্রায় একশত পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার স্থানান্তরিত হয়েছে, যার পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার বাজেট থেকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পনের হাজার কোটি ডলার এবং বেসরকারী খাত থেকে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফ এবং জাতিসংঘের অবিরাম অনুরোধের কারণে তুরস্ক বিদেশিদের কাছে তার পুরো যোগাযোগ খাত (চারটি GSM অপারেটর) বিক্রি করেছে। পেট্রো-ক্যামিকেল শিল্প এবং অনেক বিমানবন্দর এবং আশ্রয়কেন্দ্রও বিদেশীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে তুরস্কের ব্যাংকিং খাতের পঞ্চাশ শতাংশ (বর্তমানে ৭০ শতাংশ) বিদেশী ব্যাংকের মালিকানাধীন। বীমা খাতের ৯৩ শতাংশ বিদেশিদের মালিকানাধীন।

আর এখন জমি বিক্রি ত্বরান্বিত হয়েছে। দখলদারিত্ব, বেআইনী জমি দখল, বাজেয়াপ্তকরণ, সন্ত্রাসবাদ, গণহত্যা, নির্যাতন ইত্যাদির যা যা প্যালেস্টাইনে ঘটছে, তা থেকে আজও আমরা শিক্ষা নিচ্ছি না। আমরা যদি এভাবে চালাতে থাকি তাহলে আগামী দু’বছরের মধ্যে আমাদের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে বিদেশীদের হাতে চলে যাবে।

“অর্থের কোনও ধর্ম নেই, ইহুদী কিংবা আর্মেনিয় যারই হোক সকলের অর্থেই আমাদের দেশে স্বাগতম – এরদোয়ান।” কেউ এই বিষয়টিকে হালকাভাবে নিবেন না। (অর্থ্যাৎ যার থেকেই হোক, উচ্চ সুদের হারে হলেও আমরা ঋণ নিতে প্রস্তুত আছি)

এই মানসিকতার কারণে গত ছয় বছরে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি পনেরো বিলিয়ন ডলার থেকে সত্তর বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, বর্তমান একাউন্টের ঘাটতি বছরে দেড় হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৩৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর এই ঘাটতি বেড়েই চলেছে। কারণ এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। এই ঘাটতিগুলি নতুন ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করেছে এবং তুর্কি অর্থনীতি আইএমএফ এবং বিদেশী মূলধনের দাসে পরিণত হয়েছে। ফলে তুরস্কের পক্ষে একটি শক্তিশালী দেশে পরিণত হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সাম্রাজ্যবাদী বৈশ্বিক পুঁজিবাদ ইতোমধ্যে অর্থ ও অস্ত্র খাতে তার আধিপত্য ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে এটি নিম্নলিখিত অঞ্চলগুলিতে এর আধিপত্য সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে:
• খাদ্য খাতঃ
কৃষি খাত খাদ্য সরবরাহের ভিত্তি। আমাদের দেশ এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে এই খাতটি গভীর সংকটের মধ্য নিপতিত। (বিস্তারিত জানতে পড়ুন এ আর সৈকতের লেখা “বিশ্ব কৃষিব্যবস্থাঃ এক অজানা ধ্বংসের অভিমুখে গোটামানবজাতি” – ফিকরপুর ২য় সংখ্যা)।
• পানিসম্পদঃ
জাতিসংঘ পানি সম্পদের বেসরকারীকরণকে সমর্থন করছে। এই সেক্টরগুলি মানব জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই খাতগুলি আন্তর্জাতিক কোম্পানীগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে পুরো মানব জাতি ভয়াবহ বিপদ ও হুমকির সম্মুখীন হবে। কেননা এই কোম্পানিগুলোর একমাত্র লক্ষই হলো শুধু মুনাফা অর্জন করা।
• জ্বালানি খাতঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তেল-মজুদ নিয়ন্ত্রণে লড়াই করে যাচ্ছে। রাশিয়া, চীন এবং ভারতের এই দিকে মনযোগী হওয়ায় সংঘাত আরও বাড়বে।
• মিডিয়া সেক্টরঃ
জনগণকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণাধীন করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
• ঔষধ শিল্পঃ
এগুলি ছাড়াও হোটেল এবং খুচরা চেইনশপ বিদেশী উদ্যোগের একটি অংশে পরিণত হয়েছে, যার ফলস্বরূপ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হয়ে যাবে।
আইএমএফ ও জাতিসংঘের নীতিমালা কৃষিক্ষেত্রকে পতনের দ্বার প্রান্তে নিয়ে এসেছে।

২. মিডিয়া সেক্টরঃ
মিডিয়া হল সমাজ ও রাজনীতিকে প্রভাবিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্টিং মিডিয়া দ্রুতই বিশ্বজুড়ে একচেটিয়া হয়ে উঠছে। পাশ্চাত্যের মালিকানাধীন মিডিয়াগুলির উদ্যোগসমূহ এখন মুসলিম দেশগুলির মিডিয়াগুলিতেও আধিপত্য বিস্তার করছে। ইতিমধ্যে তুরস্কের কয়েকটি টিভি চ্যানেল এবং মিডিয়া গ্লোবাল ক্যাপিটালিস্টদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অথবা তারা তাদের সহযোগিতায় কাজ করছে।

৩. সমাজের আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক মূল্যবোধঃ
বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদেরকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ থেকে পৃথক করতে চায়, কারণ আমাদের মনোভাবাপন্ন লোকেরাই সমাজে সম্প্রীতি প্রদান করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে এটা বলা ভুল হবে না যে আমরা হঠাৎ করেই প্রবল হামলার মুখোমুখি হয়েছি। আমাদের পারিবারিক কাঠামো, নৈতিকতা এবং শালীনতা সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি (আদব), বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করা আখলাকের সমস্তকিছুই যেন দিন দিন কমে আসছে।
মানবাধিকার এবং নারী অধিকারের ভান করে আমাদের নৈতিক রীতি-নীতি পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং নারীর যৌনতাকে উস্কে দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হচ্ছে। অথচ এই অবক্ষয় রোধে কোনও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে না।

৪. রাজনীতিঃ
আর্থিক ক্ষেত্রের মালিকানাধীন ব্যারনগুলি, খুচরা বাজার, তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ মাধ্যম, পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প এবং গণমাধ্যমের মতো কৌশলগত সুবিধা যাদের হাতে রয়েছে তারা শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ দেরই নয় পাশাপাশি দেশগুলির ব্যবস্থাসমূহকে প্রভাবিত করে তারপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে।

যদি কেউ কখনও তাদেরকে বাধা দিয়ে আলাদা রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন করতে চায়, তবে তাদের জন্য শেয়ার বাজার ধ্বসসহ অনেক গুপ্ত ও বড়বড় নিষেধাজ্ঞা হাজির হয়ে যায়। যাদেরকে ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলে তারা সময়মতো তাদের দাস হয়ে যায়। যদিও তারা নিজের দেশ এবং মুসলিম উম্মাহর ক্ষতিসাধন দেখতে পায় তবুও ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে এই কর্মপন্থা ত্যাগ করে না। এবং এইসব ভ্রান্ত কর্মকাণ্ডের ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য তারা নিজেদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটায় এবং যে ঘটনাগুলি জনসাধারণের মধ্যে হৈচৈ ফেলে দেয়, তা একসময় সাধারণ ঘটনা হিসাবে গৃহীত হতে থাকে।

প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকানের বিশ্বজনীন প্রকল্প এবং ধারণাগুলি, যা তিনি জনগণের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন এবং তাঁর সরকারের সময়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আজ তা পুরোপুরি পরিত্যাগ করা হয়েছে।

আজ মুসলিম জাতিসংঘ, ইসলামিক কমন মার্কেট, মুসলিম দেশগুলির সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, মুসলিম প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং মুসলিম দিনার সম্পর্কে কাজ করা দূরে থাক, এই সম্পর্কে কথা বলার ধারাও প্রায় বিলুপ্ত। (প্রফেসর এরবাকান D-8 নামের আলোচিত সংস্থার মাধ্যমে এই উদ্যোগগুলো গ্রহণ করেছিলেন)

দুর্ভাগ্যক্রমে, তুর্কি সরকার কর্তৃক আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের সম্পূর্ণ সহায়তা করা হয়েছে এবং ফালুজা ও আবু গারিবে সংগঠিত মর্মান্তিক নৃশংসতা সত্ত্বেও আগ্রাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। তুরস্কের পার্লামেন্ট কর্তৃক “১ লা মার্চ” অনুমতি প্রদান (আমেরিকাকে তুরস্কের আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাশ না হওয়ার পরেও সরকারের নির্বাহী আদেশে তার অনুমোদন দেওয়া হয়) যা মার্কিন সৈন্যদের তুরস্কে মোতায়েন করতে এবং উত্তর দিক থেকে ইরাকে আক্রমণ করতে সক্ষম করেছিল, তাকে “অত্যন্ত সূক্ষ চালবাজি” হিসাবে দেখা হতো। কিন্তু তারপরেই সরকার তার পলিসির বিপরীতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বোমারু বিমানের জন্য তুর্কি আকাশসীমা খুলে দেয় এবং তার ধারাবাহিকতায় ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনীর লজিস্টিক সহায়তার জন্য সাতটি বিমানবন্দর এবং ছয়টি সমুদ্রবন্দরও ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
বক্তব্য আর বিবৃতি ছাড়া সাইপ্রাসকে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোন কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের লিখিত এবং মৌখিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে তুরস্ককে কখনই পূর্ণ সদস্যপদ দেয়া হবে না। তবুও আমরা অগ্রহণযোগ্য শর্তে স্বাক্ষর করেই চলেছি।
আমরা যদি কিছু ছাড়ের তালিকা তৈরি করি:
-ব্যভিচারকে অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয় না।
-শুকরের মাংস গৃহপালিত পশুসম্পদ হিসাবে গৃহীত হয়।
– নারী অধিকারের নামে ইউরোপের চাপিয়ে দেওয়া ইস্তানবুল চুক্তিকে মেনে নেওয়া হয়েছে। যা তুরস্কে ডিভোর্সের হারকে বৃদ্ধি করে দিয়েছে।
-আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক স্থাপনের নামে এমন জায়গায় গির্জা ও সিনাগগ নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে কোনও খ্রিস্টান বা ইহুদি বাস করেন না।

খ্রিস্টান ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছিল এবং এই ছাড় এখনো অব্যাহত রয়েছে অথচ একটি আদর্শ “মুসলিম ইউনিয়ন” এর ধারণাকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করা হয়েছে।

জনগণের নজর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিবেদনে যে অগ্রহণযোগ্য শর্তটি গোপন রাখা হয়েছে তা হল, “যদি ইসরাইলের মিঠা পানির প্রয়োজন হয় তাহলে সেই প্রয়োজনকে পূরণ করার জন্য তুরস্ক ইউফ্রেটিস এবং টাইগ্রিস (দজলা ও ফোরাত) নদীকে কোন একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানীর হাতে তুলে দিতে বাধ্য থাকবে।” আর এই দজলা ও ফোরাত ইহুদীদের প্রমিস ল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত।

এখন আরও বিপজ্জনক প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এসে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত গবেষণা কর্পোরেশন র‌্যান্ড (RAND) কর্পোরেশনের প্রতিবেদনে আমরা মুসলিম উম্মাহকে যেসব বিপদের মুখোমুখি হতে দেখছি ।এইগুলো হলো:
“Civil Democratic Islam”, 2004
“Muslim World after 9/11”, 2006
“Establishing a Moderate Muslim Network” 2007

এই প্রতিবেদনে মুসলিম বিশ্বের পরিস্থিতি প্রতিটি দেশের জন্য মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং একটি কৌশল সামনে রাখা হয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো নিজের সুবিধার জন্য ইসলামকে নতুন ভাবে সংজ্ঞায়িত করা। মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিতর্কিত ইস্যু সমূহকে সামনে এনে বিষয় সমূহকে বারবার উপস্থান করা এবং মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের (উম্মাহ) এবং জিহাদের বোঝাপড়া নষ্ট করা।

এই প্রসঙ্গে তারা হাদীসের বিভিন্ন সংকলন, বর্ণনাকারী মতভেদ ইত্যাদি যাচাই করে “হাদীস যুদ্ধ” নামে বিভ্রান্তিমূলক ইস্যুকে সামনে এনেছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে তারা মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ঝামেলা সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, স্কুলের পাঠ্য বইয়ে তারা মুসলিম ইতিহাসের সম্মানিত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের স্থানে ফুটবলার, পপ তারকা এবং চলচ্চিত্রের তারকাদেরকে প্রতিস্থাপন করছে, যা তরুণদেরকে সম্মানিত ও অনুকরণ যোগ্য পূর্বপুরুষদের পরিবর্তে এইসব তথাকথিত তারকাদের অনুকরণে প্ররোচিত করেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা বহু মুসলিম দেশের কারিকুলামে এর অসংখ্য উদাহরণ দেখতে পাই। এগুলি ছাড়াও তারা অতীতের সমস্ত বিতর্কিত বিষয়কে (মাজহাবী এখতেলাফ, বিভিন্ন সুন্নাত নফলের বিতর্ক ইত্যাদি – অনুবাদক) পুনরুত্থিত করার চেষ্টা করছে এবং মুসলিম যুবকদের ঐক্য, আখলাক, চরিত্র -আদর্শকে ধ্বংস করার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে।

তাদের লক্ষ্য ইসলামকে পরিবর্তন করা। মুসলমানদেরকে তাদের ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, জিহাদের চেতনা নষ্ট করে মুসলমানদেরকে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে মগ্ন রাখা এবং তাদেরকে অন্যায় ও নিপীড়নমূলক আচরণ রোধ করার দৃঢ়তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা।

Rand Corportaion এর এই প্রতিবেদনে তারা কীভাবে এবং কাদের দ্বারা শোষণ করা যায় তার ভিত্তিতে মুসলমানদের নিম্নরূপ শ্রেণীবদ্ধ করে: মৌলবাদী, ঐতিহ্যবাদী, আধুনিকতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষবাদী। (তারা প্রাত্যহিক জীবন থেকে ধর্মকে সরাতে চায় এবং ধর্মকে শুধুমাত্র মুসলমানদের অন্তরেই সীমাবদ্ধ করতে চায়) । সাম্রাজ্যবাদীরা এই আধুনিকতাবাদীদেরকে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সর্বোত্তম দল হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আজ আমাদের উচিত ইসলামকে ধারণ করে সমাজ ধ্বংসকারী আধ্যাত্মিক শূন্যতা থেকে নিজেদেরকে বাঁচানোর উপায় অনুসন্ধান করা। যদিও তারা আধুনিকতাবাদীদের মাধ্যমে তাদের প্রভাব ধরে রাখার জন্য ইসলামকে এই যুগের প্রেক্ষিতে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করছে। তারা এই নতুন বিকৃত বিশ্বাসকে “মধ্যপন্থী ইসলাম” হিসাবে বর্ণনা করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পের জন্য দশ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে বলে জানা গেছে। বিখ্যাত গুপ্তচর সোরোস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত “ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউট” এই দিকে গুরুত্ব সহকারে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যখনই কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ আসে তা গ্রহণ করছে। জর্জিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, এডওয়ার্ড শেভর্নাদজেকে মাত্র দশ কোটি ডলার ব্যয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাঁর পদ থেকে বহিষ্কার করেছিল।

ওপেন সোসাইটি ইনস্টিটিউট বহু দেশে এই উদ্দেশ্যে বহু শাখা খুলেছে। তারা তুরস্কে আমাদের কয়েকজন প্রাক্তন বন্ধু যারা কিছুদিন আগ পর্যন্তও মিলি গুরুশের বিশ্বস্ত ছিল তারা পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে পদ গ্রহণে দ্বিধাবোধ করেন নি। এই সংস্থাগুলি সমগ্র বিশ্ব এবং বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুরণন ঘটায় এবং দুর্ভাগ্যক্রমে কিছু রাজনীতিবিদ এবং সরকার তাদেরকে সমর্থন করে। ইসরাইল ও মুসলমানদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হওয়ার চেষ্টা করা হয় কেবল জায়নবাদীদের উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য। মধ্যস্থতা হয় বিরোধ আছে এমন জায়গায় বিরোধ সমাধানের জন্য। কিন্তু ইস্রায়েলের জন্য এটা অসম্ভব যে তারা ন্যায্য সমাধান গ্রহণ করবে! বহু বছর পূর্বে যে দেশ তারা দখল করেছিল তা থেকে সরে দাঁড়াবে! গোটা বিশ্বই জানে এটি তাদের দর্শন এবং বিশ্বাসের পরিপন্থী। তাই ইসরাইল প্রতিবারই জাতিসংঘের সমস্ত প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে। এই কারণেই, যারা গতকাল প্যালেস্টাইনের পক্ষে লড়াই করে যাচ্ছিলেন, তারাই আজ ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ন্যায় ভিত্তিক সংগ্রাম থেকে সরে দাড়াতে বলছে! তারাই তাদের অধিকারের জমিকে ছেড়ে দিতে, ইসরাইলের আইনকে মেনে চলে, বৈধ দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সমস্ত অন্যায়কে সহ্য করতে বলছে।

আজ তুরস্কে এবং অনেক মুসলিম দেশে অবস্থান গ্রহণ করা, সতর্কতা অবলম্বন করা, আমাদের নৈতিক মূল্যবোধকে রক্ষা করা ততক্ষণ অবদি সম্ভব নয়, যতক্ষণ না আমরা এই উন্নয়নের (এখানে মূলত তুর্কি সরকারের উন্নয়ন প্রজেক্ট দিয়ে জনগণকে মাতিয়ে রাখার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে) পিছনে লুকানো ষড়যন্ত্র দেখতে পাই, যতক্ষণ না আমরা পুতুল ( বিভিন্ন মুসলিম সরকার প্রধানগণ) এবং পুতুলের পরিচালককে (যায়নবাদ) দেখি এবং তাদের ভূমিকা বুঝতে পারি।

বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদীরা এসকল লোকদের নিয়ে বিন্দুমাত্রও চিন্তা করেনা যারা প্রার্থনা, রোজা বা হেডস্কার্প ইত্যাদি নিয়েই থাকে এবং তাদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা না বলে তাদের পোষা হয়ে থাকে। উল্টো তারা কিছু মুসলিম সমাজের সাথে কাজ করতেও পছন্দ করে কারণ এর দ্বারা মুসলমানদেরকে আরও সহজে প্ররোচিত ও বিভ্রান্ত করা যায়।

নানা কারণে, এই লোকদের প্রতি আমরা যে ভালবাসা লালন করি সেগুলিকে ব্যবহার করেই তারা ইসলামের যে ক্ষতি করেছে! তাই এই ক্ষতি মেনে নেওয়া এবং তাদের দেওয়া অজুহাত দ্বারা আমাদের প্ররোচিত হওয়া উচিৎ নয়।

যদি আমরা মৌলিক সমূহে (আক্বিদা, মূলনীতি) ছাড় দেওয়া শুরু করি তবে তা আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে আমরা তা জানিনা। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি এর পরিণাম ভয়াবহ, যার অর্থ আত্মহত্যা। এমনকি এর অর্থ হল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের দাসত্বকে স্বীকার করে নেবে এবং সংগ্রামকে (দাওয়াহ, জিহাদ) পুরোপুরি ছেড়ে দেবে।

একমাত্র আল্লাহই ক্ষমতাশালী এবং সর্বশক্তিমান এবং তাঁর সাথে তুলনা করার মতো আর কোনও ইলাহ নেই।এই বিশ্বাসেই এই লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। যদি জায়নিজম এবং তার দোসর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র সরঞ্জামের নিকট বাস্তববাদী হওয়ার অজুহাতে আত্মসমর্পণ করি তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবো এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সংগ্রামের পথ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিবে।

মিল্লি গুরুশ হিসাবে তুরস্কে আমাদের রাজনৈতিক লড়াই চল্লিশ (পঞ্চাশ) বছর আগে শুরু হয়েছিল। প্রফেসর এরবাকানের নীতিগুলি আমরা গ্রহণ করেছি যা আমাদের দেশ এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রয়োজনীয়। আমরা জানতাম যে এই পথটি দীর্ঘ এবং কঠোর হবে, তবে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আমাদের স্বীকার করা উচিত যে তিনি আমাদের অন্য যে কারোর চেয়ে বেশি কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং আরও বেশি কষ্ট সহ্য করেছেন, তবে তিনি তাঁর সংগ্রামে ধৈর্যশীল ও অবিচল ছিলেন এবং কখনও বিচ্যুত হননি।
আমি আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে আপনারা যারা আজ এই প্রোগ্রামে এসেছেন তারা তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

প্রিয় ভাইয়েরা,
সর্বশেষ আমি প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকানের কথার আলোকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাই। উসমানী খিলাফতের পতন, ইয়াল্টা কনফারেন্সের চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের (ইউএন, আইএমএফ, ডিবি, এফএও, আন্তর্জাতিক আদালত, ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠার পর পর আমরা বর্তমান যে পৃথিবীতে বাস করছি তা মূলত বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরিকৃত একটি কারাগার। আমাদের সংগ্রাম হলো এই কারাগারে বিদ্রোহ শুরু করা এবং এইস্থান হতে বাহির হওয়া। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমাদের নিজেদের বুঝার পূর্বেই বর্ণবাদী-সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদের লড়াইয়ের অর্থ বুঝতে পেরেছে। তারাও এই সংগ্রামকে প্রতিরোধের জন্য কাজ করছে। আফসোস, তারা এই ক্ষেত্রে অনেককিছু ভিত্তিও অর্জন করে ফেলেছে!

উপসংহারে আমি আপনাদেরকে প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান কর্তৃক প্রবর্তিত লক্ষ্য সমূহকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাইঃ
১. আমরা আখলাক এবং আধ্যাত্মিকতার উপর প্রাধান্য দিয়ে এই পথে যাত্রা শুরু করি। আমরা আমাদের বিশ্বাসের সাথে, ইসলামের মূলনীতির সাথে আপোস করতে পারিনা। আমাদের মূলনীতির ভিত্তি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক ও অভিন্ন।
২. আমরা বিশ্বাস করি যে, সমস্ত মুসলিম দেশগুলিতে সরকার এবং সমাজ উভয়েই একই সুঁতোয় মিলিত হয়ে জনগণের সেবা করবে। সেই সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩. আমরা বিশ্বাস করি যে মুসলিম উম্মাহ শক্তিশালী হতে হলে, নিজেদের উপর শোষণ ও বিদেশী উৎসের উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে “শিল্পায়ন” করতে হবে।
আমাদের জ্ঞান, প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে শুরু করে ঔষধ শিল্প, খনন, কৃষিকাজ, অর্থ ও পরিবহন ব্যবস্থা এক মুসলিম দেশ অন্যগুলির মধ্যে সহযোগিতার সর্বোচ্চ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইসলামিক কমন মার্কেট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪. আমরা এও বিশ্বাস করি যে আমেরিকান ডলারের পরিবর্তে (যা আমাদেরকে বর্ণবাদী সাম্রাজ্যবাদের দাসত্ব করতে বাধ্য করে) আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কর‍তে হবে।
৫. আমাদের দেশ ও জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ববোধ জোরদার করার জন্য “আন্তঃমুসলিম দেশীয় সাংস্কৃতিক সহযোগিতার” বিকাশ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তুলতে হবে।
আমরা “পুঁজিবাদী পাশ্চাত্য সভ্যতার” মূল্যবোধগুলি চাইনা, তবুও তা আরও বর্বর হয়ে উঠছে! যার কোনও মানবিক এবং নৈতিক মূল্যবোধ নেই! তাই আমাদেরকে আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ এবং সভ্যতায় ফিরে আসতে হবে, যা আমাদেরকে অতীতে উন্নত করে তুলেছিল এবং ইহাই আমাদের সভ্যতাকে আবারো সেই দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
৬. আমরা আগ্রাসনে বিশ্বাস করি না তবে আমাদের বিরুদ্ধে যে কোনও আক্রমণাত্মক হামলার প্রতিরোধ করতে আমাদের অবশ্যই একটি “মুসলিম দেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি” দরকার যা হবে আগামীর মুসলিম ন্যাটো।
এই আদর্শগুলি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বিশ্বাস থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে। এগুলি সাধারণ আদর্শ কিংবা মতামত নয় যা সহজেই খারিজ হয়ে যাবে!

কেবল জায়োনিজম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ (European Union) গ্রহণ করবেনা বলে এগুলি ভুলে যাওয়ার কোন বিষয় নয়।

যারা সর্বদাই আমাদেরকে হুমকিস্বরূপ দেখে, আমাদেরকে নির্মূল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, পারতপক্ষে যারা আমাদের কাছ থেকে আমাদের আত্নপরিচয় টুকুও ছিনিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে! তাদেরকে সভ্যতাকে, তাদের আদর্শিক ভিত্তিকে পরিত্যাগ করা ব্যতীত মুসলমানদের পক্ষে উপরোক্ত কাজগুলি কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
তাই আমি দোয়া করি সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেন এই সভার মাধ্যমে আমাদের জন্য কল্যাণ দান করেন।
(লেখাটি ২০০৬ সালে সাদেত পার্টির সহ-সভাপতি তেমেল কারামোল্লাওলুর দেয়া বক্তব্যের লিখিত রূপের অনুবাদ।)

অনুবাদকঃ সায়েম মুহাইমিন