হে বিশ্বাসীগণ তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পারো। সুরা বাকারা: ১৮৩
এ সেই কিতাব এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাবধানীদের জন্য এ পথপ্রদর্শক।’ রোজা ফরজ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়েও আল্লাহ তাকওয়া অর্জনের কথা বলেছেন। সুরা বাকারা: ২
তাকওয়ার অর্থ:
আত্মরক্ষা করা, নিষ্কৃতি লাভ করা, ভয় করা। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় অপরাধ, অন্যায় ও আল্লাহর অপছন্দের কথা ও কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নাম তাকওয়া।
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রা:) বলেন,
“তাকওয়া হচ্ছে: আল্লাহ্র আনুগত্য করা- নাফরমানি না করা, তাঁকে স্মরণ করা- ভুলে না যাওয়া, তাঁর কৃতজ্ঞতা করা- কুফরী না করা।”
ইবনে রজব (রহ:) বলেন,
“তাকওয়া মানে আনুগত্য শীল কর্মের মাধ্যমে এবং নাফরমানি মূলক বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্রোধ এবং শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা।”
কুশাইরী (রহ:) বলেন,
“প্রকৃত তাকওয়া হল, শিরক থেকে বেঁচে থাকা, তারপর অন্যায় ও অশ্লীল বিষয় পরিত্যাগ করা, অতঃপর সংশয়পূর্ণ বিষয় থেকে বিরত থাকা, এরপর অনর্থক আজেবাজে বিষয় বর্জন করা।”
সাহ্ল বিন আবদুল্লাহ্ (রা:) বলেন,
“বিশুদ্ধ তাকওয়া হল- ছোট-বড় সব ধরণের গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করা।”
যওবানী (রহ:) বলেন,
“আল্লাহ্ থেকে দূরে রাখবে (তাঁর ক্রোধ ডেকে নিয়ে আসবে) এমন সকল বিষয় বর্জন করার নামই তাকওয়া।”
হাসান বাছরী (রহ:) বলেন,
“এই প্রকার (পশমের) ছেঁড়া-ফাটা পোষাকে তাকওয়ার কিছু নেই। তাকওয়া হচ্ছে এমন বিষয় যা হৃদয়ে গ্রথিত হয়; আর কর্মের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হয়।”
ছাওরী (রহ:) বলেন, প্রকৃত তাকওয়া হল:
“পাপ ছোট হোক আর বড় হোক তা পরিত্যাগ কর; এটাই আসল তাকওয়া। সতর্ক হও সেই ব্যক্তির ন্যায় যে কাঁটা বিছানো পথে সাবধানতার সাথে চলে।”
“পাপ ছোট তাই তাকে তুচ্ছ মনে কর না; কেননা ছোট ছোট কঙ্কর দ্বারাই গঠিত হয়েছে বিশাল পাহাড়।”
তাক্বওয়ার উদাহরণ:
একবার হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে হজরত ওমর (রা.) তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, হে ওমর, পাহাড়ের দুই ধারে কাঁটাবন, মাঝখানে সরু পথ। এই অবস্থায় কীভাবে চলতে হবে। হজরত ওমর (রা.) জবাব দিলেন, ‘সাবধানে পথ চলতে হবে, গায়ে যেন কোনো কাঁটা না লাগে।’ হজরত কাব (রা.) বললেন, এটাই তাকওয়া।
তাক্বওয়ার স্বরূপ:
খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (র.) বলেন, দিনে রোজা রাখা বা রাত জেগে ইবাদত করার নাম তাকওয়া নয়; বরং তাকওয়া হলো আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা মানা এবং যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে থাকা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তুমি যেখানেই থাকনা কেন আল্লাহকে ভয় কর।” তিরমিযী
“ প্রকাশ্যে পাপের কাজ পরিত্যাগ করার নাম তাকওয়া নয়; বরং গোপন-প্রকাশ্য সবধরনের পাপের কাজ পরিত্যাগ করার নামই আসল তাকওয়া।”
তাকওয়া’র স্তর:
‘তাকওয়া’ ‘বেঁচে থাকা’ অর্থে ব্যবহৃত হলে এর তিনটি স্তর পরিলক্ষিত হয়।
প্রথম স্তর: কুফর ও শির্ক থেকে বেঁচে থাকা। এ অর্থে একজন সাধারণ মুসলিমকেও মুত্তাকী বলা যায়; যদিও তার থেকে গুনাহ্ প্রকাশ পেয়ে থাকে। এ অর্থ বুঝানোর জন্য পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় মুত্তাকূণ, মুত্তাকীন ও তাকওয়া শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
দ্বিতীয় স্তর: এমন সব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা যা আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রাসূলের পছন্দনীয় নয়। কুরআন ও হাদীসে তাকওয়ার যেসব মর্যাদা ও কল্যাণ প্রতিশ্রুত হয়েছে তা এ স্তরের তাকওয়ার উপর ভিত্তি করেই হয়েছে।
তৃতীয় স্তর: তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর। সকল নবী-রাসূলগণ ও তাঁদের বিশেষ উত্তরাধিকারী ওলীগণ এ স্তরের তাকওয়া অর্জন করে থাকেন। এ স্তরের তাকওয়া হল অন্তরকে আল্লাহর ব্যতীত সবকিছু থেকে মুক্ত রাখা। গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কিছু মুবাহ ও বৈধ কাজ থেকেও বিরত থাকা।
“রমযানের রোজার মাধ্যমে বৈধ জিনিস ত্যাগের মাধ্যমে অবৈধ জিনিস ত্যাগের যে প্রশিক্ষণ আল্লাহ দিয়েছেন তা উপরোক্ত সর্বোচ্চ স্তরের তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। যাতে আমরা এর অনুশীলনের মাধ্যমে ন্যূনতম তাক্বওয়া হলেও অর্জন করতে পারি।”
মুত্তাকীর চিহ্ন বা মুত্তাকী চেনার উপায়:
# মুত্তাকী বান্দা তারাই যারা অদৃশ্য বিষয়ে ঈমান আনে,
অতি উত্তমভাবে নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যা কিছু দান করেছি তন্মধ্য থেকে (আমার পথে) ব্যয় করে।’
(সূরা বাকারাহ২-৩)
এখানে তাকওয়ার অধিকারীদের সাধারণ কয়েকটি লক্ষণ বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে
(১) আল্লাহর রাসূল কর্তৃক বর্ণিত সমস্ত গায়েবী বাস্তবতাসমূহকে মনে প্রাণে মেনে নেয়া এবং তাতে ঈমান আনা
(২) সঠিকভাবে নামাজ আদায় করা।
(৩) আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদ থেকে তার নির্দেশ মোতাবেক তার পথে ব্যয় করা।
# আসল সৎকর্মশীল (আল্লাহ তায়ালার নজরে ) সেসমস্ত বান্দা, যারা আল্লাহর ওপর, আখেরাত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর, আল্লাহর কিতাবের ওপর ও নবীগণের ওপর নিষ্টার সাথে ঈমান এনেছে এবং নিজের প্রিয় ধন-সম্পদ আল্লাহর মহব্বতে (তারই হুকুম অনুযায়ী) ব্যয় করেছে নিজের (অভাবগ্রস্ত) নিকটাত্মীয়ের জন্য, সাধারণ এতিম-অনাথদের জন্য, মিসকীন (তথা নিঃস্ব দরিদ্র লোক)দের জন্য, (অভাবগ্রস্ত) মুসাফির ও ভিক্ষুকদের জন্য ক্রীতদাসদের মুক্তির জন্য। আর যথাযথ ও সঠিকভাবে নামাজ প্রতিষ্ঠা করেছে, যাকাত পরিশোধ করেছে এবং তারা ওয়াদা পূরণকারীও বটে যখন কারও সাথে কোনো ওয়াদা করে। ধৈর্যধারণকারী বিপদাপদে এবং সত্য ও মিথ্যার লড়াইয়ে। এরাই হলো সত্যান্বেষী ও মুত্তাকী।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৭৭)
মুত্তাকীর আরও ৩টি বৈশিষ্ট:
ক) যা এখনো অর্জিত হয়নি সে বিষয়ে আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখা। খ) যা পাওয়া গেছে তাতে পূর্ণ সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং
গ) যা পাওয়া যায়নি তার জন্য আফসোস না করা।
তাক্বওয়াবান হওয়ার উপায়:
১. অধিক ইবাদত:
يَاأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمْ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে লোক সকল তোমরা ইবাদত কর তোমাদের রবের যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তোমরা তাক্বওয়াবান হতে পার।” [সূরা বাক্বারা- ২১]
২. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য:
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তার শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই সফলকাম।’ (সূরা আল নূর : ৫২)
৩. সৎ লোকের সাহচর্য:
‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যাদর্শ লোকদের সঙ্গী হও’ (সূরা আত-তাওবা : ১১৯)।
৪. ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও বেঁচে থাকা:
হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: বলেছেন, ‘হে আয়েশা! ক্ষুদ্র নগণ্য গুনাহ থেকেও দূরে থাকবে। কেননা আল্লাহর দরবারে (কিয়ামতের দিন) সেগুলো সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ)
৫. পাপ থেকে অধিক সতর্কতা অবলম্বন:
হযরত আতিয়া আস সাদি রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুল সা. বলেছেন, কোন বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকি হতে পারবে না যতক্ষণ না সে গুনাহর আশঙ্কায় গুনাহ নেই এমন কাজও ছেড়ে দেবে। (তিরমিজি ২৩৭৫)
৬. পরস্পর সহায়তা করা:
সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা কঠোর শাস্তিদাতা। (সুরা মায়েদা : ২)
৭. রোজা পালন:
রমজান তাকওয়া অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। রোজার কল্যাণে একজন রোজাদার গীবত পরিহার করে। মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করে। জীবনে চলার পথে যাবতীয় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। এভাবেই পাপমুক্ত জীবন গঠনের চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ নেয়। আল্লাহর বিধান নবীর সুন্নাত মেনে চলে।
আল্লাহর হুকুমে যখন রমজানে বৈধ ও পবিত্র জিনিস ছেড়ে দিতে পেরেছি এখন অপবিত্র জিনিসে হাত কীভাবে লাগাই! কথা হল, অপবিত্র কাকে বলে? ময়লা ও নাপাক কিছু মিশ্রিত হলেই অপবিত্র হয়। আসলে সবচেয়ে বড় অপবিত্র বিষয় হল আল্লাহর নাফরমানি। রমজানে আল্লাহর নির্দেশে পূতপবিত্র ও হালাল পানাহার ছেড়ে দেওয়া বান্দারা রমজানের পর আল্লাহর হুকুম অমান্য করে পাপাচারে লিপ্ত হয় কীভাবে?
হজরত আলী (রা.) এর মতে:
বলেন তাকওয়া হলো চারটি বিষয়; এক. আল্লাহর ভয়, দুই. কোরআনে যা নাজিল হয়েছে তদানুযায়ী আমল, তিন. অল্পে তুষ্টি, চার. শেষ দিবসের জন্য সদা প্রস্তুতি।
প্রখ্যাত কিছু আলেমের মতে:
তাকওয়া অর্জনের সবচেয়ে মজবুত হাতিয়ার হলো
১. দোয়া, ২. মুত্তাকিদের সোহবত, ৩. হিম্মত ও ৪.আল্লাহর মুহাববত
তাক্বওয়ার প্রয়োগ পদ্ধতি:
তাকওয়ার গুণাবলি অর্জনই রোজার উদ্দেশ্য। ভেবে দেখার বিষয় হল, আল্লাহ এমনটি বলেননি যে, ‘যাতে তোমরা ইবাদতকারী হও’, ‘যাতে তোমরা শোকর আদায়কারী হও’, তোমরা প্রমাণ উপস্থাপনকারী হও। বরং তিনি বলেছেন ‘যাতে তোমরা মুত্তাকি হও’।
তাহলে তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে, পাপের প্রতি লজ্জাস্বভাব ও সমীহ ভাব। কোনো কাজ করার আগে
১. আল্লাহর অভিপ্রায়ের কথা চিন্তা করা,
২. শরিয়তের বিধান খেয়াল করা এবং
৩. আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর নির্দেশাবলি স্মরণ করা এবং এটা স্বভাবে পরিণত হওয়াটাই তাকওয়া। ‘যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো’ এ বাক্যের মর্মও তাই।
তাকওয়ার উপকারিতা, ফলাফল/প্রতিদান:
আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে তাঁর মুত্তাকী বান্দাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং তাকওয়ার জন্য সুন্দর ফলাফল এবং সম্মান জনক পরিণতি নির্ধারণ করেছেন, তম্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
১) দুনিয়া এবং আখেরাতে আনন্দের সুসংবাদ:
الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ، لَهُمْ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাওক্বওয়া অর্জন করেছে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়া এবং আখেরাতে।” [সূরা ইউনুস- ৬৩-৬৪]
২) সাহায্য ও সহযোগিতার সুসংবাদ:
إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ
“নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদের সাথে থাকেন, যারা আল্লাহ্কে ভয় করে এবং যারা সৎকর্ম করে।” [সূরা নাহল- ১২৮]
৩) জ্ঞানার্জনের সুযোগ লাভ:
وَاتَّقُوا اللَّهَ وَيُعَلِّمُكُمْ اللَّهُ
“এবং আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ্ তোমাদেরকে জ্ঞান দান করবেন।”
[সূরা বাক্বারা ২৮২]
৪) সত্যের পথ পাওয়া এবং হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারা:
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا
“তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে; তবে তিনি তোমাদেরকে (হক ও বাতিলের মাঝে) পার্থক্য করার তাওফীক দিবেন।” [সূরা আনফাল- ২৯]
৫) গুনাহ মাফ এবং বিরাট প্রতিদানের সুসংবাদ:
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, তিনি তার পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং বিরাট প্রতিদানে ভূষিত করবেন।” [সূরা ত্বালাক- ৫]
وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا
“আর তোমরা যদি নিজেদেরকে সংশোধন করে নাও এবং আল্লাহকে ভয় কর, তবে তো আল্লাহ্ ক্ষমাশীল দয়াময়।” [সূরা নিসা- ১২৯]
৬) প্রত্যেক বিষয়ে সহজতা লাভ:
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার প্রতিটি বিষয়কে সহজ করে দিবেন।” [সূরা ত্বালাক- ৪]
৭) দুশ্চিন্তা ও বিপদ থেকে মুক্তি লাভ:
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন।” [সূরা ত্বালাক- ২]
৮) কষ্ট ও পরিশ্রম ছাড়া জীবিকা লাভ:
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন। এবং এমনভাবে রিজিক দান করবেন, যা সে ভাবতেও পারে নি।” [সূরা ত্বালাক- ২-৩]
৯) আযাব এবং শাস্তি থেকে মুক্তি:
نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا
“যারা তাকওয়া অর্জন করবে, তাদেরকে আমি মুক্তি দিব।” [সূরা মারইয়াম- ৭২]
১০) সম্মানিত হওয়ার সনদ:
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
“নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সর্বাধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে বেশী ভয় করে।” [সূরা হুজুরাত- ১৩]
রাসূল (সাঃ)কে প্রশ্ন করা হল, মানুষের মাঝে কে সবচাইতে বেশী সম্মানিত? তিনি বললেন, তাদের মাঝে আল্লাহকে যে বেশী ভয় করে…।”(বুখারী ও মুসলিম)
১১) ভালবাসার সুসংবাদ:
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ
“নিশ্চয় আল্লাহ্ পরহেযগারদের ভালবাসেন।” [সূরা তওবা- ৪]
১২) প্রতিদান পাওয়া এবং আমল বিনষ্ট না হওয়া:
إِنَّهُ مَنْ يَتَّقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করবে এবং ধৈর্য অবলম্বন করবে; নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সৎকর্ম শীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করবেন না।” [সূরা ইউসুফ- ৯০]
১৩) আমল কবুল হওয়া এবং তা প্রত্যাখ্যান না হওয়া:
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنْ الْمُتَّقِينَ
“আল্লাহ্ তো তাক্বওয়াবানদের থেকেই কবুল করেন।” [সূরা মায়েদা ২৭]
১৪) সফলকাম হওয়া:
وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“তোমরা আল্লাহ কে ভয় কর, তবে তোমরা সফলকাম হবে।” [সূরা বাক্বারা- ১৮৯]
১৫) জান্নাত লাভে কামিয়াবী:
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা জান্নাত এবং ঝর্ণাধারার মধ্যে থাকবে।” [সূরা যারিয়াত- ১৫]
রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হল, সর্বাধিক কোন জিনিস মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, “আল্লাহ্ ভীতি এবং সচ্চরিত্র।” [তিরমিযী]
১৬) নিরাপত্তা এবং সুউচ্চ মর্যাদা:
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ
“নিশ্চয় মুত্তাক্বীগণ সুউচ্চ নিরাপদ স্থানে থাকবে।” [সূরা দুখান- ৫১]
১৭) সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ:
وَالَّذِينَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“এবং যারা তাকওয়া অর্জন করেছে তারা কিয়ামত দিবসে তাদের (কাফেরদের) উপরে অবস্থান করবে।” [সূরা বাক্বারা- ২১২]
১৮) কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ এবং তাঁর সাথে সাক্ষাত ও দর্শন লাভের সৌভাগ্য অর্জন করা:
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ، فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيكٍ مُقْتَدِرٍ
“নিশ্চয় আল্লাহ্ ভীরুগণ জান্নাত এবং নহরের মধ্যে থাকবে। সত্য ও সন্তোষটির আবাস স্থলে পরাক্রমশালী বাদশাহর দরবারে।” [সূরা ক্বামার ৫৪/৫৫]
১৯) অন্তর বিশুদ্ধ হওয়া:
الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ
“সেদিন (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ ভীরুগণ ব্যতীত (দুনিয়ার) বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে।” [সূরা যুখরুফ- ৬৭]
২০) দ্রুত সতর্ক হওয়া:
إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِنْ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُمْ مُبْصِرُونَ
“নিশ্চয় যারা তাকওয়া অর্জন করেছে- যখন তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটে ততক্ষণাৎ তারা (সতর্ক হয়ে আল্লাহ্কে) স্মরণ করে, তারপর তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়।” [সূরা আ’রাফ- ২০১]
২১) সুমহান প্রতিদান:
لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ
“তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে এবং তাকওয়া অর্জন করে, তাদের জন্য রয়েছে সুমহান প্রতিদান।” [সূরা আল ইমরান- ১৭২]
২২) চিন্তা-ভাবনা এবং গবেষণা করা:
إِنَّ فِي اخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَّقُونَ
“নিশ্চয় রাত-দিনের পরিবর্তন এবং আসমান ও জমিনের মধ্যে আল্লাহ্ যা সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন জাতির জন্য যারা আল্লাহ্কে ভয় করে।” [সূরা ইউনুস- ৬]
২৩) জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ:
وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقَى
“এবং অচিরেই জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে আল্লাহ্ ভীরুগণ।” [সূরা লাইল- ১৭]
২৪) অফুরান্ত কল্যাণ লাভে ধন্য হওয়া:
وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى
“তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর; কেননা সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ পাথেয় হল তাকওয়া বা আল্লাহ্ ভীতি।” [সূরা বাক্বারা- ১৯৭]
২৫) পরিণতি সুন্দর হওয়া:
فَاصْبِرْ إِنَّ الْعاقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ
“অতএব তুমি ধৈর্য অবলম্বন কর, নিশ্চয় শেষ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা হূদ- ৪৯]
২৬) আল্লাহ্র বন্ধুত্ব লাভ: আল্লাহ্ বলেন,
وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ
“আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বন্ধু।” [সূরা জাছিয়া- ১৯]
২৭. শাস্তি থেকে নিরাপত্তার সুসংবাদ :
فَمَنِ اتَّقٰی وَ اَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ.
যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সৎ থাকে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কখনো দুঃখিত হবে না। -সূরা আরাফ : ৩৫
২৮. শ্রেষ্ঠত্বের সুসংবাদ :
وَ الَّذِیْنَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ.
যাঁরা তাকওয়া অবলম্বন করে তারা কিয়ামতের দিন তাদের (কাফেরদের) উপরে থাকবে। -সূরা বাকারা (২) : ২১২