দেখে আসুন মুন্সীগঞ্জের একটি প্রাচীন মসজিদ

ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মুন্সীগঞ্জ জেলা। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর সঙ্গমস্থল এখানেই। মুন্সীগঞ্জ জেলা একসময় বিক্রমপুর নামে পরিচিত ছিল। সেখানে সেনবংশীয় রাজাদের বসবাস ছিল। সেন রাজবংশ, চন্দ্ররাজ বংশ ও বর্ম রাজবংশের রাজধানী। অর্থাৎ বঙ্গ-সমতটের রাজধানী শহর ছিল মুন্সীগঞ্জ। জেলা শহর মুন্সীগঞ্জ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে দরগাহবাড়ি।

এ দরগাহবাড়িতে রয়েছে সুলতানী শাসনামলের একটি মসজিদ। বিভিন্ন বই-পুস্তক ও প্রাচীন দলিল-দস্তাবেজে এটি ‘বাবা আদম শহীদ’ মসজিদ নামে পরিচিত। কিন্তু মসজিদের শিলালিপি অনুসারে এ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহান মালিক কাফুরশাহ্।
রাজা বল্লালসেনের সময়কালে এক ধর্মপ্রচারক যার নাম ছিল বাবা আদম। যিনি বল্লালসেনের হাতেই নিহত হন।

ইউসুফ শাহের বিক্রমপুরের শাসক কাফুরশাহ্ ১৪৭৯ সালে একটি মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। যা বাবা আদম (রহ.) মসজিদ নামেই পরিচিতি লাভ করে। উত্তর-দক্ষিণে মসজিদের আয়তন ৪৩ ফুট। আর পূর্ব-পশ্চিমে ৩৬ ফুট। মসজিদের দেয়াল প্রায় সাড়ে ৩ ফুট চওড়া। মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহেরাব রয়েছে। পূর্ব দেয়ালে মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা রয়েছে। মেহেরাবগুলো অলংকৃত। মাঝখানেরটা অন্য দুটির চেয়ে প্রশস্ত। মসজিদটি নির্মাণের সময় ১০ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি মাপের লাল পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের চারকোণে ৪টি টারেট রয়েছে। যা অষ্টাভুজাকৃতির।

চমৎকার কারুকার্যখচিত এ মসজিদটির ছাদে ৬টি গম্বুজ রয়েছে। ছাদের ভর রাখার জন্য মসজিদের ভেতরে দুটি স্তম্ভ ব্যবহার করা হয়েছে। ছাদ বক্রাকার কার্নিশ। বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে মসজিদটি নির্মিত। ছাদের পানি সরানোরও ব্যবস্থা চমৎকার। মসজিদের পূর্বপাশে পাকা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। মসজিদটি ১৯৪৮ সাল থেকে পুরাতত্ত্ব বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।

১৯৯১-৯৬ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বাবা আদম মসজিদের ছবি সংবলিত ডাকটিকিট প্রকাশ করে। কারুকার্যখচিত এ মসজিদটির নির্মাণে মালিক কাফুরশাহের সময় লেগেছিল ৪ বছর। অর্থাৎ বাবা আদম (রহ.) মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয় সুলতান ফতেশাহের সময় ১৪৮৩ সালে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে মাঝখানের দরজার ঠিক ওপরে একটি আরবি শিলালিপি প্রোথিত রয়েছে। শিলালিপির ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন ব্লকম্যান।

ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চে, গুলিস্তান থেকে বাসে সিপাহীপাড়ায় নামলে এ মসজিদে আসা যাবে। মসজিদটি শুধু মুন্সীগঞ্জেরই নয়, সমগ্র দেশেরই ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সুলতানী আমলের ইতিহাস বহন করে চলছে মহাকালের দিকে।