ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎ

প্রফেসর ডঃ মেহমেদ গরমেজ

আজকের এই শিক্ষা সেমিনারে ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আপনাদের সামনে আলোচনা করতে চাই। মহান রবের প্রদত্ত আকলকে ব্যবহার করে আমাদেরকে সবসময় চিন্তা (তাফাক্কুর) করতে বলা হয়েছে। আমাদের দ্বীন ইসলামে তাফাক্কুর (চিন্তা) কে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিছু কিছু হাদীসে ১ ঘণ্টা চিন্তা (তাফাক্কুর) করাকে হাজার রাকায়াত নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা কোন বিষয়ে তাফাক্কুর (চিন্তা) করব? এই বিষয়টি নির্ধারণ করাও গুরত্ত্বপূর্ণ। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন تفكر (চিন্তা) শব্দের সাথে تذّكر এবং تدبُّر শব্দ সমূহেরও ব্যবহার করেছেন। শুধুমাত্র বর্তমানকে নিয়ে তাফাক্কুর (চিন্তা) করাই আমাদের দায়িত্ব নয়। تذّكر (স্মরণ) হল অতীত নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা। تفكر (তাফাক্কুর) হল বর্তমানকে নিয়ে চিন্তা করা আর تدبُّر (তাদাব্বুর) হল আমাদের পরিণতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা।

পবিত্র কোরআন সবসময়

أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ

أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ

আমাদেরকে একই সাথে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার জন্য আহবান করেছে। মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমাদের একটি ভুল/ ঘাটতি রয়েছে।

আমরা অতীত নিয়ে অনেক আলোচনা করি কিন্তু অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ঘাটতি বা দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আমাদের অনেক চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন।

কারণ تدبُّر (তাদাব্বুর) বিহীন تدبير তদবীর সম্ভব নয়। তদবীর (প্রতিরক্ষা, পূর্বপ্রস্তুতি) ছাড়া একটি উম্মাহ কক্ষনোই ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করতে পারবে না। تذّكر করার জন্য যেমন تذكير এর প্রয়োজন, تفكر এর জন্য যেমন تفكير এর প্রয়োজন তেমনি ভাবে تدبُّر (তাদাব্বুর) এর জন্য تدبير (তদ্বির) এর প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও অন্য একটি শব্দ আছে تعّبر

فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ

অর্থাৎঃ হে দৃষ্টিশক্তির অধিকারীরা, শিক্ষাগ্রহণ করো৷

এই আয়াতের মাধ্যমে আবার শিক্ষাগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এ শিক্ষা একই সাথে যেন আমাদের কথা বার্তায় প্রতিফলিত হয়। এজন্য একজন মুসলমানের প্রতিটি লেখাই ইবারা। ইবারার দ্বারা ইবরাত (শিক্ষা) প্রতিফলিত হয়। ইবরাত (শিক্ষা) কে প্রকাশ ও প্রতিফলিত করার জন্য প্রয়োজন تعبّر (তা’য়াব্বুর)। تعبّر (তা’য়াব্বুর) এর জন্য تدبُّر (তাদাব্বুর) প্রয়োজন, تدبُّر (তাদাব্বুর) এর জন্য تذّكر প্রয়োজন।

কারণ যে অতীতকে বুঝতে পারে না, সে ভবিষ্যৎকেও বুঝতে পারবে না।

এই পারিভাষিক ভূমিকার পরে আমি যে কথাটি বলতে চাই, তা হলঃ আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তিনটি বড় ভূল রয়েছে।

একটি হল; আখেরী জামান শব্দকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা। এই প্রচারণা দিয়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে নির্মাণ করতে পারব না।

দ্বিতীয়ত; আমাদের অন্ধকারের দিকে ধাবিতকারী ফিতনা-ফাসাদকে ব্যাপকভাবে সামনে নিয়ে আসা এবং এ বিষয়সমূহকে জোরেসোরে প্রচার করা। ভবিষ্যতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে অনেক খারাপ ও একটি দুঃসময়। এই ধরণের ভুল চিন্তা।

তৃতীয়ত; একজন মহান মানুষ আসবেন যিনি আমাদেরকে রক্ষা করবেন, এই ধরণের চিন্তাকে ছড়িয়ে দিয়ে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ত্বকে পালন না করে দায়িত্ত্ব পালনে অবহেলা করা।

এ ধরণের চিন্তাকে লালন করলে আমাদের পক্ষে ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন কাজই করা সম্ভব নয়।

ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যতকে যদি আমরা মহাগ্রন্থ আল-কোরআন দিয়ে ব্যাখা করি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, এই তিনটি চিন্তাই ভুল। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ

অর্থাৎঃ আল্লাহই তার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি একে সকল প্রকার দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন।

এই আয়াতটিকে আমরা যদি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাই, তিনি তার রাসূলকে এই জন্য সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যেন তার এই দ্বীন সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী হয়। তার প্রেরিত দ্বীন যেন এই পৃথিবীতে হক্ব, হাকীকত, আদালত, আখলাককে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।

আমরা যখন কোরআনকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ি তখন আমরা দেখতে পাই যে, কোরআন আমাদেরকে অতীত থেকে খুব ভালোভাবে শিক্ষা নিতে বলে।

أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا ۖ فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ

“তারা কি পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করেনি, যার ফলে তারা উপলব্ধিকারী হৃদয় ও শ্রবণকারী কানের অধিকারী হতো? আসল ব্যাপার হচ্ছে, চোখ অন্ধ হয় না বরং হৃদয় অন্ধ হয়ে যায়, যা বুকের মধ্যে আছে৷”

আল-কোরআনে احسن القصص (সর্বোত্তম কিসসা) নামে যত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে প্রতিটি ঘটনাই মুসলমানদেরকে ইতিহাস সম্পর্কে একটি দৃষ্টিভঙ্গী পেশ করে।

ইতিহাস আমাদের কিভাবে বুঝতে হবে? হযরত আদম (আঃ) দিয়ে শুরু হওয়া নবীদের ইতিহাস আমাদেরকে অতীত নিয়ে চিন্তা করার ব্যাপারে একটি দৃষ্টিভঙ্গী পেশ করে। নবীদের সম্পর্কে বর্ণিত আয়াত সমূহ অতীত থেকে আমাদের কিভাবে শিক্ষা নিতে হবে এটা আমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলে।

আমরা যখন সূরা বাকারা পড়ি তখন আমরা দেখতে পাই যে, সূরা বাকারা তিনভাগের দুই ভাগ আয়াত বনী ইসরাইলের ইতিহাস সম্পর্কে। শুধুমাত্র বনী-ইসরাইলের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করার জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই সূরার তিনভাগের দুই ভাগে তাদেরকে নিয়ে আলোচনা করেননি। বরং তারা যে সকল ভুলভ্রান্তি করেছে সেই সকল ভুলভ্রান্তি যেন আমরা না করি এবং তারা যে সকল খারাপ কাজ করেছে সে সকল খারাপ কাজ থেকে আমরা যেন দূরে থেকে আমাদের ভবিষ্যতকে বিনির্মাণ করতে পারি সে জন্যই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের সম্পর্কে এত বেশী আলোচনা করেছেন।

প্রিয় যুবক ভাইয়েরা,

আমাদের সভ্যতা অনেক বড় একটি পথ পাড়ি দিয়ে এই পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। ইসলামী সভ্যতা এমন একটি সভ্যতা যে সভ্যতা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর সময় থেকে দুনিয়ার সকল অঞ্চলে, সকল মানুষকে নবজীবন দান করে বড় বড় সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে সামনের দিকে ধাবমান হয়েছে। এই উম্মাহর সকল সদস্যের উচিত হল, ইসলামী সভ্যতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা। ইসলাম মক্কা ও মদীনায় স্থিতিশীলতা অর্জন করার পরে মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক অঞ্চলের মানুষের জীবনকে অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে পরিবর্তন করেছিল, অল্প সময়ের মধ্যে চীনের সীমান্ত পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছাল?

-স্পেনে কিভাবে আন্দালুসিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিল?

-মধ্য এশিয়ায় মাওয়ারায়ুন নাহর সভ্যতা কিভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল?

সমগ্র পৃথিবীকে কিভাবে পরিচালনা করেছিল এবং পরিচালনা করার সময় কোন ধরনের সমস্যার মুখোমুখী হয়েছিল এবং এই ধরণের সমস্যার মোকাবেলা করার জন্য কি কি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিল এ সকল বিষয়কে না জেনে ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যতকে বুঝা অনেক কঠিন। তাই আমাদেরকে ইসলামী সভ্যতার ইতিহাসকে খুব ভালোভাবে জানতে হবে।

আমরা মুসলমানরা ৩ টি বিষয়ে অনেক বেশী ইখতিলাফ করে থাকি, যে সকল ইখতিলাফ (মতবিরোধ) মাঝেমধ্যে দ্বন্দ ও সংঘাতের পথ তৈরি করে।

১। অতীতকে বুঝার ক্ষেত্রে। আমাদের অতীত যে অনেক বেশী সমৃদ্ধ ছিল এবং অনন্য-সাধারণ ছিল এক্ষেত্রে সকলেই একমত। কিন্তু আমাদের সেই অতীতকে বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং পর্যালোচনা ভিন্ন ভিন্ন। অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইতিহাসকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য আমাদেরকে আদেশ করেছেন। কোরআনে কারীম তার সকল মু’মিন পাঠককে একই সাথে সঠিক একটি ইতিহাস দর্শন শিক্ষা দিয়ে থাকে।

 ২। আমাদেরকে নিজেদের অবস্থানকে বুঝার ক্ষেত্রেও আমরা ইখতিলাফ (মতভেদ) করে থাকি। কারণ এই ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে জ্ঞান নেই।

 ৩। ইসলামী সভ্যতার, মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক বেশী ইখতিলাফ করে থাকি।

ইসলামী সভ্যতা প্রথম শতাব্দীতে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। সেই সকল চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে। সেই সকল চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে মুসলমানদের ছোট্ট একটি দল কিভাবে ইসলামী সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল তা নিজেই একটি মুজিজা।

গ্রীক, রোমান, ইরান এবং ইন্ডিয়ান সভ্যতার মুখোমুখী হলে কোন প্রকার হীনমন্যতায় না ভূগে , নিজেদের জন্য উপকারী ও হিকমাহ পূর্ণ বিষয়সমূহে বেছে নেয়। কোন প্রকার হীনমন্যতাকে (ইনফেরিয়রিটি কমপ্লেক্সে) গ্রহণ না করে, একই সাথে এই সকল সভ্যতার সাথে মুখোমুখি হওয়ার সময় উন্নত ও উচ্চ একটি চিন্তা দিয়ে, ইসলামের চিরস্থায়ী বিধানসমূহ থেকে দূরে সরে না গিয়ে, পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন সমূহের সাথে সংগ্রাম করে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

আমি সবসময় এই কথাটি বলে থাকি,
‘আমরা আমাদের স্কুল, মাদরাসা, মক্তব ও বাসায় যেমনিভাবে আমাদের সন্তানদেরকে আকাঈদ ও ইসলামের মৌলিক বিষয় সমূহ শিক্ষা দিয়ে থাকি তেমনিভাবে আমাদের সন্তানদেরকে ইন্তিশারে ইসলাম (ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ইতিহাস) কেও শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।’

ইসলাম সমগ্র পৃথিবীতে কিভাবে প্রচারিত হল এটা আমাদের সন্তানদেরকে শেখানো প্রয়োজন। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ইসলাম কি কি সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত করেছে এটা আমাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। আমি মনে করে এটা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়। শুধুমাত্র অতীতকে জানার জন্য নয় আমাদের ভবিষ্যৎকে নির্মাণ করার জন্যও এটা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ। একই সাথে বর্তমান সময়কে ভালোভাবে উপলব্ধি করা ও অনুধাবন করার ব্যতীত ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলা খুব কঠিন একটি বিষয়।

আমরা বর্তমানে যদি মুসলিম উম্মাহর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, ২০০ বছর যাবত মুসলিম উম্মাহ উপনিবেশবাদীদের দ্বারা শোষিত হয়েছে এবং পাশ্চাত্যের আধুনিকতা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের লক্ষ্যবস্তুত্তে পরিণত হয়েছে। বিশ্বায়নের নামে আমাদের উপর অন্যায়ভাবে বিভিন্ন শর্তকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সকল চক্রান্তের ফলাফল হিসেবে মুসলিম উম্মার মধ্যে ৩ টি রোগ স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধেছে।

১। দারিদ্রতা। 
২। মূর্খতা, অজ্ঞতা। 
৩। আন্তকোন্দল (তাফরিকা)

এই রোগ তিনটি যেন কেবলামাত্র মুসলমানদের জন্যই আবির্ভূত হয়েছে এমন একটি অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবাধিকার, আদালত এবং আখলাক সব সময়ের জন্য আমাদের থেকে আজ দূরে অবস্থান করেছে। ইসলামের মূলনীতি সমূহের ভিত্তিতে এই সকল বিষয়কে সমাধান করা ব্যতীত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের এটা জেনে থাকা উচিত এবং যেভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখি এই বিষয়টির উপরেও তেমনি ভাবে আমাদের বিশ্বাস রাখা উচিত।

তা হল ‘ ইসলামী সভ্যতা এই সকল অন্যায় দমন পীড়ন, এই সকল হুমকি এবং চ্যালেঞ্জ সমূহের বিরুদ্ধে, নিজের আসল মূল্যবোধসমূহকে রক্ষাকারী, ইসলামকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের জন্য সকল প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী একমাত্র সভ্যতা’।

কেন? কারণ ইসলামের মূলনীতি সমূহ এখনো স্বচ্ছ পানির মত পরিষ্কার, এর মূল উৎস সমূহ কোন প্রকার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন না হয়ে এখনো টিকে আছে। ইসলাম মানবতাকে যে সকল মূল্যবোধের আলোকে গড়ে তুলতে চায় তার সকল কিছুই আমাদের সামনে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফলশ্রুতিতে, ইসলামী সভ্যতার ১৪০০ বছরের এই দীর্ঘ যাত্রাকাল, কোরআনে হাকীমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে ওয়াদা করেছেন, সেটার যে তিনি বাস্তবায়ন করে চলছেন তারও একটি বড় প্রমান এই ইসলামী সভ্যতা।

আমাদের সকল দুর্বলতা, আমাদের ঘাটতি, আমাদের সমস্যা সমূহের পরেও এমনকি মাঝে মাঝে এই দ্বীনের অনুসারীদের বিশ্বাস ঘাতকতার পরেও মহান আল্লাহ নিজে এর বিরুদ্ধে সকল চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়ে এই দ্বীনকে রক্ষা করে চলছেন। আমাদের সব সময় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ যেমনিভাবে এই দ্বীনকে এখন পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছেন তেমনি ভাবে ভবিষ্যতেও টিকিয়ে রাখবেন এবং মানবজাতির কল্যাণের জন্য এই দ্বীনই সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

ইসলামী সভ্যতার মতে, মানুষ কোন উপাদান নয়, মানুষ হল নিদর্শন।

কারণ বিশ্বায়নের (Globalization) নামে সাম্রাজ্যবাদীরা উপাদান বা যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মানুষকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তারা মানুষকে কেবলমাত্র তাদের গাড়ির চাকা হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, যেন তাদের শোষণের দুনিয়া মানুষের ঘাড়ের উপর ভর করে টিকে থাকে।

তাদের চিন্তাধারা এমন হওয়ার কারণে তারা কক্ষনোই সফল হতে পারবে না। কারণ মানুষ মূল্যবোধকে বহনকারী একটি জীব এবং মানুষ আল্লাহর খলিফা। যে সভ্যতাকে মানুষকে যন্ত্র কিংবা উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে সে সভ্যতার সফলতা অসম্ভব। আজকে আমাদের সবার মধ্যে যে হতাশা এটা মূলত বিশ্বায়নের বড় বড় ঢেউয়ের কারণে। এই বিষয়টিকে একটি বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই।

বিশেষ করে পাশ্চাত্য সভ্যতা ধর্মের সমাপ্তি, ইতিহাসের সমাপ্তি এবং আদর্শ সমূহের সমাপ্তি ঘোষণা করে তাদের তৈরী করা উন্নত যন্ত্র ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সমগ্র মানবতাকে তাদের হিংসার বস্তুতে পরিণত করেছে এবং সমগ্র মানবতাকে একটি পরিবারে রূপান্তরিত করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। একটি গ্রাম কিংবা একটি শহর নয় বরং একটি পরিবারে রূপান্তরিত করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ।

এবং বলে যে, এই পরিবারের কেবলমাত্র একজন মালিক রয়েছেন, আর সেই মালিক হলাম ‘আমি’। এরকম হওয়ার কারণে এবং অনেক শক্তিশালী হওয়ার কারণে শুধু তাই নয় আমরা সবাই আমাদের পকেটে যে যন্ত্র বহন করি সে যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদেরকে শাসন করতে শুরু করার কারণে, আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করার সকল উপাদানকে (আমাদের চিন্তা, আমাদের চলাফেরা, আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন, রাজনীতি) তাদের মত করে পরিচালনা করার কারণে সকল মানুষের মত মুসলমানদের মধ্যেও এই ব্যাপারে কিছু হতাশা রয়েছে।

প্রতিটি মানুষের অন্তরের উপরে, বিবেকের উপরে এবং রুহের উপরে এই বিশ্বজনীন সাম্রাজ্যবাদীরা যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে এটা বিশ্বমানবতাকে এবং মুসলমানদেরকে হতাশার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।

এই জন্য আজকের এই সেমিনারে ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনা করার সিধান্ত নিয়েছি। কোন ক্রমেই নিরাশ হওয়া যাবে না।

প্রথমে, বিশ্বজনীনতা (গ্লোবালাইজেশন) কি এটা আমাদের বুঝতে হবে। কিভাবে এই সামনে আসল? ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় প্রাচ্যের সমাজে এই বিশ্বজনীনতা (Universality) ছিল। আমাদের নবীকে সমগ্র মানবতার জন্য রহমত সরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। আমাদের রব বিশ্বজাহানের রব। ফলশ্রুতিতে ইসলামী সভ্যতা আমাদেরকে সভ্যতার যে দৃষ্টিভঙ্গী দান করতে চায় সেটা কেবলমাত্র আঙ্কারা, ইস্তানবুল অথবা এনাতোলিয়াকে নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের যে বার্তা সেটা সমগ্র মানবতার জন্য। আমাদের সভ্যতা সমগ্র মানবতাকে নিয়ে। এই জন্য আমাদের চিন্তা, আমাদের বিশ্বাস বিশ্বজনীন।

কিন্তু Globalization বা বিশ্বায়ন নামক বিষয়টি Universal বা বিশ্বজনীন নয়। আমরা যদি এই দুটি পরিভাষাকে আরবীতে অনুবাদ করি তাহলে Globalization বা বিশ্বায়নের আরবী হল العولمة অপরদিকে Universal বা বিশ্বজনীনতার আরবী হল العالمية উভয় শব্দ দুটি যদিও একই উৎস তথা علم থেকে উদগত হয়েছে। তবুও আমি যদি আরবী ভাষার ব্যাপারে কোন কর্তৃত্বশীল ব্যক্তি হতাম তাহলে العولمة শব্দের ব্যবহারের ব্যপারে বাঁধা নিষেধ আরোপ করতাম। যদি এটা শব্দ দিয়ে শুধুমাত্র সাধারণ বিষয় তথা বিশ্বায়ন বুঝানো হয় তাহলে হয়ত সঠিক হতে পারে। আমি যে সকল বিষয় নিয়ে সবসময় কথা বলে থাকি তার মধ্যে একটি হল, Globalization বা বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হল, জেহালেত মুহেনদিস অর্থাৎ মূর্খতার ইঞ্জিনিয়ারিং।

জেহালেত মুহেনদিস অর্থাৎ মূর্খতার ইঞ্জিনিয়ারিং এমন এক ইঞ্জিনিয়ারিং এটা মানুষকে তথ্য উপাত্ত শিখিয়ে তাদেরকে মূর্খ বানিয়ে থাকে। জেহালেত মুহেনদিস অর্থাৎ মূর্খতার ইঞ্জিনিয়ারিং এটা এমন এক ইঞ্জিনিয়ারিং এটা মানুষকে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে মূর্খ বানায়। এই বিষয়ে আমাদের ভালোভাবে চিন্তা করা দরকার।
দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হল, Globalization বা বিশ্বায়ন নামক বিষয়টি দুইটি বিষয়কে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে বাস্তবায়ন করেছে।

এই বিষয় দুটি হলঃ
১। মাল (পণ্য)
২। তথ্য।
তারা এমন একটি দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করেছে যে, মাল (পণ্য) এবং তথ্যের প্রবাহকে দ্রুতগামীতার সাথে বৃদ্ধি করার ফলে এই বিষয় দুইটি এক সাথে রাজনৈতিক, আদর্শিক এবং সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নকে বইয়ে নিয়ে এসেছে। এটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।

 সাম্রাজ্যবাদীরা বিশ্বায়নের নামে এমন একটি একটি দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করেছে যে, মাল (পণ্য) এবং তথ্যের প্রবাহকে দ্রুতগামীতার সাথে বৃদ্ধি করার ফলে এই বিষয় দুইটি এক সাথে রাজনৈতিক, আদর্শিক এবং সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নকে বইয়ে নিয়ে এসেছে। এটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।

তারা এমনভাবে আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে যে, বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করার সময়েই তাদের সে সকল পণ্যকে (হোটেল) কে দেখতে পান। তাওয়াফ শেষ করে যদি মনে করেন যে, একটা কফি খাই অথবা ক্ষুধা লাগছে একটু খাবার খাই, এই চিন্তা করে যদি ডানে বামে তাকান তাহলে সারা দুনিয়ার যে কোন স্থানে গেলে যে সকল ব্র্যান্ড দেখতে পাবেন সেখানেই সেই একই ব্র্যান্ড সমূহ দেখতে পাবেন।

এই দুটি মাধ্যমকে ( পণ্য, তথ্য) ব্যবহার করে তারা তাদের এজেন্ডাকে (বিশ্বায়ন) কে বাস্তবায়ন করেছে। এই দুইটি একই সাথে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নকে জন্ম দিয়েছে।

আচ্ছা, তাহলে আমাদের কি করা প্রয়োজন? আমাদের যে কাজ করা প্রয়োজন তা হল, পণ্যের প্রবাহের সাথে হালালের প্রবাহ ঘটানো এবং তথ্যের প্রবাহের সাথে হাকীকতের প্রবাহ ঘটানো। এ কাজ করতে না পারলে কেবলমাত্র তাদের পণ্য ও তথ্যের প্রবাহকে বন্ধ করে আমাদের খুব বেশী সামনে যাওয়া সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। সমগ্র মানবতার নিকট পৌঁছে দেওয়ার মত আমাদের কাছে একটিমাত্র হাকিকত রয়েছে, তা হল ইলাহী রহমতকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। হয়তবা আমরা এই একই পথে মানুষের নিকট আখলাককে পৌঁছে দিতে পারব।

 বিশ্বায়নের এই ঢেউ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছে। এই বিষয় সমূহ একই সাথে সমগ্র মানুষকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন করে মানুষের সকল বৈচিত্রতাকে মুছে দেওয়ার মত একটি আইডিওলজিকে বহন করে চলছে।

এই সকল বিষয় সম্পর্কে মুসলমানদের সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন এবং এই সকল হুমকীকে কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে সেই ব্যাপারে চিন্তা করা প্রয়োজন।

বিশেষ করে আমরা যখন সভ্যতার কথা বলি বা সভ্যতা নিয়ে আলোচনা করি তখন আমাদের মানসপটে দুইটি বিষয় জেগে উঠে। একটি হল, ‘ইসলামী সভ্যতা’ অপরটি হল, ‘পাশ্চাত্য সভ্যতা’।

সভ্যতাসমূহ সম্পর্কে অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা তাদের লিখিত বইয়ে অনেক সভ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বিশেষ করে, পাশ্চাত্য সভ্যতার বিশ্বায়নকে মোকাবেলাকারী একমাত্র ‘সভ্যতা’ ইসলামী সভ্যতা। আমি পুনরায় উল্লেখ করছি “ পাশ্চাত্য সভ্যতার সকল হুমকীকে মোকাবেলা করে বিশ্বমানবতাকে রক্ষাকারী একমাত্র সভ্যতা হল ইসলামী সভ্যতা”।

আবার ইসলামী সভ্যতাকে যদি কোন সভ্যতা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে এবং তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার সাহস করে থাকে সেটা হল পাশ্চাত্য সভ্যতা। অর্থাৎ পাশ্চাত্য সভ্যতা, ইসলামী সভ্যতাকেই কেবলমাত্র তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। ভৌগলিক কারণে হয়তবা পাশ্চাত্য সভ্যতা বলে নামকরণ করা হয়ে থাকে কিন্তু তারা নিজেদেরকে Judeo-Christian (ইয়াহুদী-খ্রিস্টিয়ান) সভ্যতা বলে দাবী করে থাকে। আমরা যদি পাশ্চাত্য সভ্যতার মূলে অনুসন্ধান করি তাহলে কিছুটা গ্রীক সভ্যতা, কিছুটা রোমান সভ্যতা, কিছুটা মধ্যযুগীয় খ্রিষ্টান এবং কিছুটা ইয়াহুদী সভ্যতাকে খুঁজে পাই। এই সকল বিষয় সমূহকে নিয়ে জগাখিচুড়ি মার্কা একটি আদর্শ (আইডিওলজি)।

আমরা মুসলমান হিসেবে এই বিষয়ে দুইটি বড় ভুল করে থাকি, একটি ভুল করে থাকেন মুতাফাক্কির (চিন্তাবিদ) গণ, লেখকগণ এবং প্রশাসকগণ। মাঝে মধ্যে এই ভুল সমূহ আমাদের মসজিদের খুতবার মধ্যেও দেখতে পাই।

এটি কেমন একটি ভুল? পাশ্চাত্য যে সকল মূল্যবোধকে ধারন করে আছে বলে দাবী করে থাকে আমরা সেগুলোকে খুঁজে বের করি, এবং তাদের সেই তথাকথিত মূল্যবোধ সমূহ কোরআনে রয়েছে বলে প্রমান করার চেষ্টা করি। এই পন্থা ভুল একটি পন্থা। এই পথকে আমাদের পরিত্যাগ করা দরকার।

যেমনঃ পাশ্চাত্য বলে যে, ‘গনতন্ত্র’ আমরাও তাদের সাথে সূর মিলিয়ে বলি যে, কোরআনে গনতন্ত্র রয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আবার বই লিখি। পাশ্চাত্য মানবাধিকারের কথা বলে আমরা উঠে বলি যে, আমাদের সভ্যতায় সেই কবে থেকে মানবাধিকার রয়েছে। পাশ্চাত্য পশুর অধিকার নিয়ে কথা বলে, আমরাও তাদের সেই কথা উপর ভর করে সেটা নিয়ে বই লিখে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যাই। মূলত এই পদ্ধতি, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব নয় , পাশ্চাত্যর শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরে।

 এই পন্থা অনুসরণ করে লেখার অর্থ হল, আমরা পাশ্চাত্যকে বলি যে, তোমরা যে সকল মূল্যবোধকে ধারণ করে আছ বা যে সকল মূল্যবোধ নিয়ে কথা বল সেগুলো মহান ও পবিত্র! কিন্তু তোমরা মনে করে থাক যে, সেই সকল মূল্যবোধ আমাদের মধ্যে নেই, এটা সঠিক নয়। এই মূল্যবোধ সমূহ আমাদের মধ্যেও রয়েছে। এই চিন্তা করে ধারন করে এই সকল বিষয় সমূহকে প্রমান করার জন্য যখন আমরা বই লিখি তখন তারা আমাদের এই লেখা পড়ে বলে যে, এই ধর্মে যা আছে আমার কাছেও তো তা আছে। তাহলে দ্বীন থেকে তো আমার নেওয়ার মত কিছু নেই। এই পন্থা ভুল একটি পন্থা।

আচ্ছা এই ভূলকে সংশোধন করার জন্য আমাদের কি করা প্রয়োজন? এই পন্থা সংশোধন করার জন্য যে সকল মূল্যবোধ পাশ্চাত্যে নেই বা পাশ্চাত্য এখনো চিন্তা করতে পারে না সেই সকল বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। তাদের কাছে নেই আমাদের কাছে এমন কি আছে? তাদের কাছে ‘তাওহীদ’ নেই আমাদের কাছে ‘তাওহীদ’ রয়েছে। তাদের ‘আদালত’ ভিন্ন একটি উৎসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, কিন্তু আমাদের সভ্যতায় যে আদালত এটা সৃষ্টিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা ভিন্ন একটি ‘আদালত’ ধারণা রয়েছে। পদার্থের ব্যপারে তাদের যে ধারণা রয়েছে সে ধারণাকে নয় সে পদার্থের পেছনে কি ‘অর্থ’ রয়েছে সেটা আমাদের তুলে ধরা প্রয়োজন।

একই ভাবে অন্য আরও একটি ভুল আমরা করে থাকি, এখনোও করে যাচ্ছি, ইসলামী সভ্যতার পতন, আমরা সেটাকে পতন না বলি, ইতিহাসকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাকে সাময়িকভাবে হারানোর কারণকে কখনোই নিজদের মধ্যে খুজি না। আমাদের পতনের জন্য আমাদেরকে আক্রমনকারী সাম্রাজ্যবাদীদেরকে, যায়নবাদীদেরকে অথবা অন্যদেরকে দায়ী করে থাকি।

ইবনে খালদুন সাবাব আসাবিয়্যাহ এবং নসব আসাবিয়্যাহ এর কথা বলেছেন। আমরা সাবাব বা কারণকে অন্য জায়গায় খুঁজে বেড়াই নিজেদের মধ্যে নয়। এমন হওয়ার কারণে আমরা মুক্তিকে আমরা কেবলমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার মধ্যে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। খারাপ রাজনীতির চর্চা করার কারণে আমাদের পতন হওয়ায় মুক্তিকেও আমরা কেবলমাত্র রাজনীতির মধ্যেই খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি।

জ্ঞান এবং চিন্তার মধ্যে আমরা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করিনি। সকল মানুষের কাছে যে বিষয়টি অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলবে সেই জ্ঞানের মধ্যে আমরা মুক্তিকে খুঁজে বেড়াইনি। যে চিন্তা ও দর্শন সকল মানুষকে প্রভাবিত করবে সেই বিষয়টিতে উৎকর্ষ সাধনকে আমরা গুরত্ত্ব দেইনি।

সবচেয়ে বেশী গুরত্ত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা আমাদের আখলাকের ক্ষেত্রে গুরত্ত্ব দেইনি। আমরা যে আমাদের সামাজিক জীবনে ও ব্যক্তিগত জীবনে আখলাকের প্রতিষ্ঠা করে, আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা যে তাদের জাগতিক শক্তিকে পরাজিত করতে পারব এটা চিন্তা করার পরিবর্তে তাদের মত শক্তি অর্জন করার চিন্তা ও চেষ্টা করেছি। এবং কেবলমাত্র সেই পথেই আমরা ঘুরে দাড়াতে পারব এটা শিখেছি।

১৯৭০ সাল থেকে সারা দুনিয়ার ইসলামী আন্দোলন সমূহকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আপনারাও এই ব্যাপারে পড়াশুনা করে থাকেন। আমাদের যুবক ভাইয়েরাও বিভিন্ন বই পুস্তক থেকে এই সব বিষয়ে পড়াশুনা করে থাকে। সাধারণভাবে যখন আমরা দেখি তখন দেখতে পাই যে, সকল আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক একটি শক্তি অর্জন। হ্যাঁ, তাদের মধ্যে হাদীস, তাফসীর ও সামাজিক কর্মকাণ্ড ছিল, ছিল না যে তা নয়। আমি মনে করি আমাদের সকলের এই বিষয়টি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

আমি এই কথা বলার সময় এ কথা মোটেও বলছিনা যে, ‘দ্বীন ও রাজনীতির’ মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে সেটা পরিত্যাগ করা প্রয়োজন।

কিন্তু যারা বলে থাকেন যে, “ধর্ম এবং রাজনীতি আলাদা” তাদের রাজনীতির সাথে যারা বলেন যে, “রাজনীতি হল দ্বীনের মৌলিক বহিঃপ্রকাশ”, এদের উভয়ের রাজনীতির যদি একই হয়, তাহলে এই পন্থার মাধ্যমে আমরা দ্বীনে মুবিন ইসলামের কত বেশী ক্ষতি করেছি সেটা আমাদের ভালোভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

মুসলমানদের মধ্যে দুইটি চিন্তা গড়ে উঠে। একটি হল, ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা আলাদা অর্থাৎ সেকুলারিজম। এই চিন্তাকে লালনকারীদের মধ্যে কারো কারো সাথে যখন কথা বলি তখন তারা দ্বীনকে অনেক বেশী সম্মান দেখিয়ে কারণ পেশ করে যে, ‘ রাজনীতি এত বেশী অপবিত্র আর দ্বীন এত বেশী পবিত্র যে আমি এই দুটিকে এক সাথে বিবেচনা করতে পারি না’। আচ্ছা ! কিন্তু দ্বীন জীবনের সকল কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে তার এই চিন্তা সম্পূর্ণ ভুল। এই চিন্তা যে সম্পূর্ণ ভূল এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু যারা বলেন যে, রাজনীতি হল দ্বীন আর দ্বীনই হল রাজনীতি। এই চিন্তাকে যখন আমরা পর্যালোচনা করি তখন আমরা বলি যে, যদি আখলাক এবং আদালতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপনি এই কথা বলে থাকেন তাহলে আপনার এই কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত এবং আপনার কথা সঠিক।

কিন্তু যদি আখলাক এবং আদালত থেকে দূরে সরে গিয়ে যদি যারা সেকুলারদের মত রাজনীতি করে আবার তাদের মত করে রাজনীতি করে আবার ‘দ্বীন এবং রাজনীতি এক’ এই কথাকে ডিফেন্ড করে তাহলে সেই অবস্থায় দ্বীনের প্রতি সবচেয়ে বেশী অবিচার করা হবে বলে আমি মনে করি।

 ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎ নিয়ে যদি কথা বলি, তাহলে আমি মনে করি যে, ভবিষ্যতে ইসলামী সভ্যতাকে যে বিষয়টি নতুন করে ‘মহান’ করে তুলবে তা হল ‘উচ্চ আখলাক’। এই আখলাক ই মুসলিম উম্মাহকে তার ইসতিখলাফের দায়িত্ত্ব পালনে যোগ্য করে তুলবে।

আখলাককে কেবলমাত্র দ্বীনদ্বারী ধারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখে, আখলাককে ইবাদাত, মুয়ামালাত এবং ফিকহের বাহিরে রেখে কেবলমাত্র আদব কায়দার মধ্যে নামিয়ে নিয়ে এসে এবং মূল্যবোধের অগ্রাধিকারকে বাদ দিকে মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা অসম্ভব।

আমি মনে করি যে, বিশ্বায়নের এই হুমকি মোকাবেলা করার সবচেয়ে বড় শক্তি হল ‘আখলাক’। আমি গতবছরও এখানের একটি সেমিনারে ‘উসূল এবং আখলাক’ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।

এই যুগের গাজালী নামে পরিচিত একজন মানুষ রয়েছেন, আমি মনে করি যে তিনি এই উপাধি পাওয়ার যোগ্য। মরক্কোর অধিবাসী এখনো তিনি জীবিত। তার নাম হল তাহা আব্দুর রহমান।

তিনি বলেন যে, “গ্রীক দর্শন মানুষকে কেবলমাত্র একটি চিন্তাশীল জীব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চিন্তা করা, এবং চিন্তাকে মানুষ হওয়ার জন্য একটি মুমায়্যিজ ওয়াসিফ (সতন্ত্র বৈশিষ্ট) হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারা বলে থাকে যে, ‘I think, therefore I am’ অর্থাৎ ‘আমি চিন্তা করি তাই আমি আছি’। কিন্তু আমি মনে করি যে, যে বিষয়টি মানুষকে মানুষ বানায় তা হল, মূল্যবোধ এবং আখলাক। ‘আমি আখলাক সম্পন্ন তাই আমি আছি’ সকল বিবেকবান আখলাক সম্পন্ন নয়। কিন্তু সকল আখলাক সম্পন্ন ব্যক্তিই বিবেকবান’।

 চিন্তাশীল মানুষরা তাদের চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে সকল মানুষকে এক মুহূর্তের মধ্যেই ধ্বংস করে দিতে পারে এমন অস্র-শস্র তৈরি করতে পেরেছে। কারণ তাদের আকল (বুদ্ধি-বিবেক) আখলাক থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে।মূলত আকলকেই আখলাক বলা হয়ে থাকে। যে আকল আমাদেরকে সত্য এবং সুন্দর দিকে নিয়ে যেতে পারে না যে আকল মানুষের সতন্ত্র কোন গুনাবলী হতে পারে না।

প্রিয় ভাইয়েরা, এই জন্য আমি ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎকে আখলাকের মধ্যে দেখতে পাই। ইবাদত সমূহের উদ্দেশ্য হিসেবে আখলাককে আমাদের পুনরায় চিন্তা করা প্রয়োজন। আখলাককে পুনরায় নতুন ভাবে আবিষ্কার করা প্রয়োজন। রাসূলে আকরাম (সঃ) কে প্রেরণের উদ্দেশ্য ‘بعثت لأتمم مكارم الأخلاق’ মাকারিমে আখলাককে পূর্ণতা দান করার জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি এই হাদীসের উপর আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে হবে।

মুসলমান অবশ্যই রাজনীতি করবে, কিন্তু তার রাজনীতির উদ্দেশ্য হতে হবে আখলাক এবং আদালতের প্রতিষ্ঠা। রাজনীতি যখন আখলাক এবং আদালত থেকে দূরে সরে গিয়ে ইসলামের সাথে মিলিত হয়ছে, তখন সেই রাজনীতি ইসলামের জন্য সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যাপারটি মুসলমানদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বেই আমরা এই বিষয়টি দেখতে পাই। এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।

এখন আমি আমাদের প্রতিষ্ঠিত সভ্যতার কেন্দ্র সমূহ নিয়ে এবং সেখানে ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎ সমূহ নিয়ে আলোচনা করতে চাই।

একঃ

ইসলামী সভ্যতার প্রথম প্রানকেন্দ্র হল হিজাজ অঞ্চল। এই অঞ্চল থেকেই নবী মুহাম্মাদূর (রাঃ) এর মাধ্যমে ইসলামী সভ্যতা তার যাত্রা শুরু করেছে। মক্কা, মদীনা, ইয়েমেন, বিলাদে ইরাক এবং বিলাদে শাম প্রথম শতাব্দীর মধ্যেই ইসলামী সভ্যতার পতাকাতলে আসে। আর বাগদাদ নতুন একটি শহর হিসেবে আব্বাসীদের সময়ে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বিলাদে ইরাক হযরত উমর (রাঃ) এর সময়ে বিজিত হয় এবং সেখানে কুফা, বসরা এবং বাগদাদের মত বড় বড় শহর প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্র ইসলামী সভ্যতার প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম কেন্দ্র। আজকে যদি এই অঞ্চলের দিকে আমরা তাকাই তখন আমরা দেখতে পাই যে, এই অঞ্চল ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। এবং এই অঞ্চলের বর্তমান যে অবস্থা এই অঞ্চল যে একদিন ইসলামী সভ্যতার প্রানকেন্দ্র ছিল এটা বলতে আমাদের কষ্ট হয়।

আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এই অঞ্চলে বসবাসকারীগণ  তাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকেও ভালোভাবে বুঝতে পারছে না, আল্লাহ তাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন সেটাকেও তারা আজ সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারছে না।

এই অঞ্চলে দলাদলি, মাজহাবী সমস্যা সহ আরও অনেক সমস্যা দেখতে পাচ্ছি। শামের অবস্থা আজ আমাদের চোখের সামনে, অতীতের আর আজকের বাগদাদের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং মিশর কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাতারের বিরুদ্ধে কিভাবে অবরোধ আরোপ করেছে তা সকলেই আমরা জানি। ইয়েমেনে হাজার বছর ধরে এক সাথে বসবাসকারী মুসলমানদের ঐক্য কিভাবে বিনষ্ট হয়েছে এবং এই ক্ষেত্রে কারা ভূমিকা পালন করেছে তা আমাদের সকলের সামনে স্পষ্ট।

ইসলামী সভ্যতার এই ভূমিতে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত সমূহকে আজ ইসলামী সভ্যতাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে শাসকদের অবস্থা যাই হোক না কেন, সাধারণ জনগণ এবং যুবকদের মধ্যে অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোন মসজিদে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে গিয়ে যখন আমরা যুবকদের সাথে কথা বলি তখন তাদের মধ্যে ইসলামী সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করার এক সুপ্ত বাসনা দেখতে পাই। তারা তাদের অন্তরে এবং রুহের মধ্যে ইসলামী সভ্যতাকে জীবন্ত বহন করে চলছে।

এই অঞ্চলকে নিয়ে সর্বপ্রথম যে কাজ করতে হবে তা হল, কোরআন এবং সুন্নাহর  আলোকে গঠন করতে হবে এবং এর মূল্যবোধের আলোকে সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঢেলে সাজাতে হবে।

আমরা যদি এই অঞ্চলে যাই তাহলে সেখানের অবস্থা দেখে আমাদের হয়তবা অনেক বেশী হতাশ হতে হবে। কিন্তু আমি পুনরায় বলতে চায়, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে টিকে থাকার একমাত্র যোগ্যতা ইসলামী সভ্যতারই রয়েছে। একটি সভ্যতা, একটি শক্তি হয়তবা দুনিয়াকে বর্তমানে দুনিয়াকে প্রভাবিত করছে না, কিন্তু ইসলামের প্রতিটি মূলনীতি, প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি হাদীস জীবন্ত হিসেবে তার ধারাকে অব্যাহত রাখার কারণে ইসলামী সভ্যতাই হবে আগামী দিনের সভ্যতা। তবে এইক্ষেত্রে যুবক ভাইদের এবং আমাদের দায়িত্ত্ব হল আত্মবিশ্বাসের সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া।

আমাদের পূর্বপুরুষগণ আমাদের জন্য যে দুনিয়াকে রেখে গিয়েছেন আমরা যেন আমাদের পরবর্তী বংশশরদের জন্য আরও সুন্দর একটি দুনিয়া রেখে যেতে পারি এই জন্য আমাদের অনেক বেশী কাজ করতে হবে।

দুইঃ

ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্র সমূহের মধ্যে দ্বিতীয় কেন্দ্র হল, মিশর সুদান লিবিয়া। আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশ সমূহ ইসলামের সাথে সর্বপ্রথম পরিচিত হয়। এই দেশ সমূহের দিকে যখন তাকাই তখন আমরা দেখতে পাই যে, এই দেশ সমূহে ইসলামী সভ্যতার অনেক কেন্দ্রসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা যে সকল আলেম-উলামাদের বই এখনো পড়ি সেই সকল বড় বড় আলেমদের অনেকেই এই অঞ্চলে বেড়ে উঠেন। এই অঞ্চলের ইতিহাস অনেক বেশী সমৃদ্ধ। কিছুদিন পূর্বে  ودخلت الخيل الأزهر  নামে একটি বই পড়েছিলাম। গ্রন্থের লেখক প্রখ্যাত একজন সাহিত্যিক। বইয়ের অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘ঘোড়া আযহারে প্রবেশ করেছে’ । এখানে ঘোড়া বলতে তিনি নেপোলিয়ানকে বুঝিয়েছেন। নেপোলিয়ান ঘোড়ার পীঠে সওয়ার হয়ে আযহারে প্রবেশ করে। মিশরের কায়রোতে আমার ১ বছর থাকার সুযোগ হয়েছে। আমার কাছে এমন মনে হয়েছে যে, কায়রোর প্রতিটি রাস্তাতে বসেই জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত একটি মিউজিয়াম। আমর ইবনুল (রাঃ) এর মিশর বিজয় করার পর থেকে নিয়ে অনেক ঘটনার স্বাক্ষী এই মিশর।

কিন্তু আজকে মানুষ স্বাধীন দেশেও যেন পরাধীন। তারা আজ ইসলামী ইতিহাসের সেই সোনালি অধ্যায়কে যেন হন্য হয়ে খুঁজে ফিরছে। উপনিবেশবাদীদের পরে আফ্রিকা মহাদেশের অনেক বেশী ক্ষুধা ও দারিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে। তবে আনুষ্ঠানিক ও অফিসিয়াল উপনিবেশবাদের সমাপ্তি ঘটলেও মালিক বিন নবীর ভাষায় অনানুষ্ঠানিক শোষণ এখনোও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, “কেবলমাত্র উপনিবেশবাদীদের থেকে মুক্তি পাওয়াই যথেষ্ট নয়। যে সকল কারণে আমরা শোষিত হয়েছি সেই সকল কারণকে আমাদের যুবসমাজের মধ্য চিরতরে দূর করতে হবে”।

কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমরা এখনো আমাদের এই দুর্বলতাকে দূরীভূত করতে সক্ষম হইনি।মালিক বিন নবীর সেই কথা শুধুমাত্র আফ্রিকার জন্য নয় সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্যই প্রযোজ্য।

আলোচনার এই পর্যায়ে এসে আমি আপনাদেরকে একটি সংবাদ দিতে চাই, উত্তর আফ্রিকার এই দেশসমূহ দীর্ঘকাল ধরে ফ্রান্সের উপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকার পরেও ইসলামী সভ্যতাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এই সকল দেশে গেলে তা খুব সহজেই আমরা অনুভব করতে পারি। ইসলামী চিন্তা-দর্শনকে তারা হাট-বাজার, মসজিদ-মাদরাসা এবং স্কুল কলেজে জাগ্রত রাখতে সক্ষম হওয়ার ফলে আশা করি খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে এই অঞ্চলে ভালো কিছু ঘটবে। তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপণ করে তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখা দরকার। আমি মনে করি যে, আমাদের বেসরকারী সংগঠন সমূহের সেখানে বেশী বেশী যাওয়া উচিত এবং তাদের সাথে জয়েন্ট প্রোগ্রাম সমূহ আয়োজন করে তাদের সাথে আমাদের জ্ঞানের আদান প্রদান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এই কাজ করতে পারলে ইসলামী সভ্যতার বিনির্মাণে আমরাও ভালো ভূমিকা পালন করতে পারব।

তিনঃ

ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্র সমূহের মধ্যে তৃতীয় গুরত্ত্বপূর্ণ কেন্দ্র হল ভারতীয় উপমহাদেশ। বৃহৎ হিন্দুস্তান তিনটি দেশে বিভক্ত হয়েছে, ভারত পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। এই অঞ্চলের এক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দুইশত বছর উপনিবেশবাদীদের হাতে শোষিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে বিভক্ত হয়েছে। এই অঞ্চলে ইসলামী সভ্যতার অতীত গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে হলে সর্বাগ্রে ২ টি কাজ করতে হবে।

১। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে,

২।  মুসলমানদের মধ্যকার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দকে দূর করতে হবে।

আমার দৃষ্টিতে তারা এই দুইটি সমস্যার সম্মুখীন। এত বড় পাকিস্তান বলতে গেলে দুইটি দলের (দেওবন্দী, বেরেলভী) মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই উভয় দলই আহলে কিবলা, আহলে তাওহীদ, আহলে সুন্নাহ, হানাফি, সুফী এবং মাতুরিদি কিন্তু একদল আরেক দলের পেছনে নামাজ পর্যন্ত পড়ে না।

দ্বীনকে বুঝার ক্ষেত্রে এবং ব্যখা করার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় সমূহ আমাদের মধ্যে তাফরিকা সৃষ্টি করে সে সকল বিষয় সমূহ থেকে দূরে থাকতে হবে।

চারঃ

ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্র সমূহের মধ্যে অন্যতম গুরত্ত্বপূর্ণ কেন্দ্র হল মধ্য এশিয়ার মাওয়ারাউন নাহর অঞ্চল। এই অঞ্চলে ইসলামী সভ্যতা সর্বচ্চো শিখরে উপনীত হতে সক্ষম হয়েছিল। কাজাকিস্তান, ওজবেকিস্তান, কিরগিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান এই অঞ্চলের সাথে যদি আমরা ককেশাস অঞ্চলকেও একত্রে বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাই যে, তিনশত বছর পর আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা তিন শত বছরের সংকট থেকে উঠে নিজেদের ইসলামী পরিচয়কে নতুন করে গঠন করার চেষ্টা করছে। তাদেরকে এই ক্ষেত্রে সাহায্য করা আমাদের উপর অবশ্য কর্তব্য। আমাদের সকলের উচিত নিজেদের অবস্থান থেকে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা।

দীর্ঘ তিনশত বছর জুলুম নির্যাতনের পর ইসলামের প্রতি তাদের এই আবেগ, ভালোবাসা একটি মুজিজা বলে আমি মনেকরি।

পাঁচঃ

দক্ষিন পূর্ব ইউরোপ তথা বালকান অঞ্চল আমাদের সকলের কাছে অতীব পরিচিত একটি অঞ্চল। তুলনামূলক ভাবে ছোট একটি অঞ্চল। মধ্য এশিয়ার থেকে এদের অবস্থা ভিন্ন, মধ্য এশিয়া তাদের ইসলামী পরিচয় হারিয়ে ফেলেছিল কিন্তু এই অঞ্চল তাদের ইসলামী পরিচয়কে হারিয়ে ফেলেনি। তাদের ইসলামী পরিচয় দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারা তাদের এই পরিচয়কে নতুন করে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।

ছয়ঃ

প্যসিফিক এশিয়া। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং মায়ানমার। মায়ানমার সম্পর্কে আপানারা কমবেশী জানেন। এই অঞ্চলেও ইসলাম অনেক বেশী জাগ্রত এবং জীবন্ত। মরক্কো, আলজেরিয়ার, তিউনিশিয়া এবং সুদানের মত এই অঞ্চলেও অনেক কাজ হচ্ছে। ইসলামী সভ্যতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য এই অঞ্চলে অনেক প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু একই সাথে অনেক বড় তাফরিকাও রয়েছে। পাকিস্তানের মত বিভক্তি ইন্দোনেশিয়াতেও রয়েছে। অর্ধেক মুহাম্মাদিয়া এবং অর্ধেক নাহদাতুল উলামার হাতে বন্দী। এই দুই দলে সমগ্র ইন্দোনেশিয়া বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একই সাথে ছোট ছোট ব্যপারে তারা নিজেদের মধ্যে অনেক বেশী ইখতিলাফ করছে।

সাতঃ

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী। কানাডা, ইউরোপ, অ্যামেরিকা, ল্যাটিন অ্যামেরিকার মুসলমানগণ এত বেশী কাজ করে যাচ্ছেন যে, কেউ যদি বলে যে ইসলামী সভ্যতা তাদের হাত ধরেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে তাহলে আমি মোটেও আশ্চর্য হব না।

প্রিয় ভাইয়েরা,

আমরা যদি পুনরায় ইসলামী সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে আমাদের দ্বীনকে সঠিকভাবে বুঝতে হবে। আমি আগেও অন্যান্য আলোচনায় বলেছি যে সকল বিষয় সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে তা হল,

-দ্বীন এবং হায়াতের মধ্যে সম্পর্ক কি?

– দ্বীন এবং দুনিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক কি?

– দ্বীন এবং ইলিমের (মধ্যে) সম্পর্ক কি?

– দ্বীন এবং আকলের মধ্যে সম্পর্ক কি?

– দ্বীন এবং সংস্কৃতির মধ্যে সম্পর্ক কি?

এই সকল বিষয়ের ধারণাকে যুগের আলোকে নবায়ন করে যুবসমাজের সামনে পেশ করতে হবে।

আমরা যদি এখনোও একটা আয়াতের ব্যাখা নিয়ে একটি হাদীসের বিশ্লেষণ নিয়ে মতভেদ করতেই  থাকি তাহলে আমাদের প্রজন্ম ইসলামী সভ্যতার ভবিষ্যৎকে বিনির্মাণ করতে পারবে না। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম অবশ্যই ইসলামী সভ্যতাকে নতুন করে বিনির্মাণ করতে সক্ষম হবে।

এই ক্ষেত্রে দুইটি বিষয়ে খুব সতর্ক রাখতে হবে,

১। দ্বীনে মুবিন ইসলামকে জীবন দানকারী মূলভিত্তি সমূহকে আমরা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছি। এই মূল ভিত্তি সমূহকে ধরে রেখে আমরা যদি যুগ জিজ্ঞাসার জবাব দিতে পারি তাহলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে বিনির্মাণ করতে পারব।

২। ইসলামের মূল উৎস সমূহের উপর ভিত্তি করে দলে উপদলে বিভক্ত হওয়া। এটা আমাদের জন্য একটি অশনি সংকেত। যারা কুরআন পড়ে তারা নিজেদেরকে আহলে কুরআন, যারা হাদিস পড়ে তারা নিজেদেরকে আহলে হাদিস, আবার যারা নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত দাবী করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নিজেকে আসল আহলে সুন্নাত দাবী করে থাকে। এই ধরণের অপ্রয়োজনীয় তর্ক-বিতর্কে আজ আমাদের সময় নষ্ট করছি।

কোন সভ্যতা যখন তার পতন যুগে এসে উপনিত হয় তখন দ্বীন সম্পর্কিত বিষয় সমূহ নিয়ে বেশী বেশী তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। এই জন্য এই দুইটি বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

দ্বীনের দলীল সমূহের ক্রমধারা এবং মূল্যবোধের ক্রমধারাকে আমাদের সবসময় সামনে রাখতে হবে। এই দুটিকে ভালোভাবে বুঝে যদি আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পাড়ি তাহলে বিশ্বায়ন যতবড় শক্তিতেই পরিণত হোক না কেন, পাশ্চাত্য সভ্যতা আমাদের বিরুদ্ধে যাই করুক না কেন, ইসলামী সভ্যতা অবশ্যই বিজয়ী হবে এবং এই সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে দাঁড়িয়ে থাকবে। শুধু তাই নয় সমগ্র মানবতাকে আবার নতুন করে জীবন দান করবে।

এই ক্ষেত্রে আমাদের যে কাজ সেটা হল, ওয়াসাত একটি উম্মাহ হিসেবে টিকে থাকা। ওয়াসাত উম্মাহ হওয়াকে অনেকেই মডারেট বা লাইট একটি উম্মাহ হওয়া মনে করে থাকে। অনেকেই মধ্যপন্থী উম্মাহ বলে অনুবাদ করে থাকে।

কিন্তু আমি, ওই আয়াতে ‘ওয়াসাত’ শব্দকে কেন্দ্রীয় উম্মাহ হিসেবে অনুবাদ করি। আল্লাহ আমাদেরকে এই মহাবিশ্বে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করার নির্দেশ দেন। কেন্দ্রে অবস্থান করা বা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করার অর্থ হল, মানব সভ্যতাকে পরিচালনা করা, তাদের গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করা।

কেন্দ্রে অবস্থান করার অর্থ হল, ইতিহাসের দর্শক নয় বরং অনুঘটকের ভূমিকা পালন করা, ইতিহাসকে তৈরি করা, ইতিহাসের দিক নির্ধারণ করা।

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ

  অর্থাৎঃ  তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য ৷তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷

আমি আমার যৌবনকালে আমর বিল মারুফ বলতে বুঝতাম যে, ময়দানে বের হব মানুষকে ভালো কাজ করতে বলব, আর খারাপ কাজ করতে দেখলে লাঠি পেটা করব। এটাই ছিল আমার আমর বিল মা’রুফ আর নাহি আনিল মুনকারের ধারণা।

আমি মনে করি যে, এখানে ‘আমর’ শব্দটি ক্রিয়া বাচক অর্থে এসেছে। যার অর্থ হল মা’রুফ কে প্রতিষ্ঠা করা। মা’রুফ কে সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করা মুসলমানদের দায়িত্ত্ব। মুসলমান কেবলমাত্র তার ব্যক্তি জিবনে ইসলামকে পালন করবে না। পৃথিবীতে সে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং অন্যায়, অবিচার ও ফিতনা ফাসাদকে দূরীভূত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে।

কোন ফিতনা বা ধ্বংসশীল কিছু যদি সারা পৃথিবীকে ঘিরে অবরোধ করে রাখে তাহলে সেই ফিতনাকে দূর করে মানবতাকে মুক্ত করা মুসলমানদের দায়িত্ত্ব।

‘সুলহ’ বা সংশোধনকে শান্তি বলে অনুবাদ করে থাকে। শান্তির আরবী হল ‘সিলম’। সিলমের বিপরীত হল ‘হারব’ বা যুদ্ধ, আর ‘সুলহ বা সালাহ’ এর বিপরীত হল ‘ফাসাদ’।

ব্যক্তি গণ জীবনে প্রত্যেক মুসলমানদের ‘সালিহ’ হতে হবে। সালিহ হওয়া ব্যতীত ‘সুলহ’ কে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মুসলমানের দায়িত্ত্ব হল সমগ্র রাষ্ট্রকে সংশোধন বা ‘ইসলাহ’ করা। মুসলিহ হওয়া ছাড়া ইফসাদ বা ফাসাদকে বাঁধা দিতে পারবে না।

আর আইনগত দিক থেকে মুসলমানগণ ‘মাসলাহাত’ কে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করবে। আর এটা কেবলমাত্র ‘আদালত ও আখলাক’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সম্ভব।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে ইসলামী সভ্যতার বিজয়কে যেন দেখার তওফিক দান করেন। আমরা যদি আমাদের অতীতকে হারিয়ে ফেলি তাহলে আমাদের দ্বারা ভবিষ্যৎকে বিনির্মাণ করা সম্ভবপর হবে না। এই জন্য অতীতকে নিয়ে تذّكر  আর ভবিষ্যৎ নিয়ে تدبُّر এবং এই তাজকির এবং তাদবিরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার তওফিক যেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে দান করেন।

আমি পুনরায় যে কথা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই তা হল, কোন মুসলমানেরই হতাশ হওয়ার কোন অধিকার নেই। আমরা এমন একটি দ্বীনের অনুসারী যে দ্বীনে হতাশ হওয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আপনারা পবিত্র কোরআনকে যখনই ভালো করে পড়বেন, তখনই আপনাদের আশা বৃদ্ধি পাবে। কোরআন একই সাথে একটি আশার উৎস। আমরা যদি ইসলামী মূল্যবোধ সমূহ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি তাহলে দেখতে পাই যে, আগামী দিনে বিশ্বমানবতার মুক্তি কেবলমাত্র ইসলামের মাধ্যমেই সম্ভব।

অনুবাদ: বুরহান উদ্দিন
আঙ্কারা, তুরস্ক