দাড়ি

অযাচিত লেখক |

এক আপু গল্প করছিলেন— আমার ছোট মেয়েটা এখন ছেলে আর মেয়ে আলাদা করতে শিখে গেছে। একদিন শুনি ও বলছে, “আব্বু ছেলে, আম্মু মেয়ে, দাদু ছেলে, দাদী মেয়ে, চাচ্চু ছেলে, ভাইয়া মেয়ে”। এটা শুনে আমি তো অবাক! ওকে জিজ্ঞাসা করি, “ভাইয়া মেয়ে হলো কীভাবে? ভাইয়াও তো ছেলে!” কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে ও বলে, “কিন্তু আম্মু! ভাইয়ার তো দাড়ি নেই!”

ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও, মেয়েটা দাড়ির রেস্পেক্টেই বুঝার চেষ্টা করেছিল, কে ছেলে আর কে মেয়ে। যাইহোক… গল্পটা এমনি বললাম! আমি দাড়ি রেখেছি দেখে আমার ফ্যামিলি পার্সনদের আপত্তির শেষ নেই। কেউ বলে, “তুই তো অল্প বয়সেই বুড়ো হয়ে গেলি রে!” কেউ বলে, “দাড়ি রাখা তো সুন্নত, এত অল্প বয়সে না রাখলেই বা কী হত? বয়সকালে নাহয় রাখতি!” আমার আম্মু তো বলেই দিয়েছে, “দেখিস তোর কপালে কোনো সুন্দরী বউ জুটবে না”। আমি শুধু শুনি, আর হাসি!

দাড়ি রাখাটাকে অনেকে প্রগতির অন্তরায় মনে করেন। অনেকের কাছে এটা আনস্মার্টনেস। অনেকে আবার দাড়ি রাখেন ঠিকই, তবে কেউ ফ্রেঞ্চ কাটিং দেন, কিংবা চারিপাশ ছিলে শুধু থুতনির গোড়ায় ইক্টুসখানি রাখেন, কেউ আবার আলাদ্বীনের জ্বীনের মত কাটিং দেন! সেটাকে অবশ্য কেউ প্রগতির অন্তরায় মনে করেন না। কেবল হুজুর-বেশী দাড়ি রাখলেই যত সমস্যা। হুট করে দ্বীনের ব্যাপারে বুঝপ্রাপ্ত হয়ে দাড়ি-টুপি, সুন্নতি লেবাস ধরলে অনেকেই তা বক্রদৃষ্টিতে দেখেন। কেউকেউ সন্দেহের দৃষ্টিতেও দেখেন। দাড়ি-টুপির প্রতি ফোবিয়া সৃষ্টির ব্যাপারটা একদিনে হয়নি, দীর্ঘদিন ধরে এর প্রক্রিয়াকরণ চলেছে। যাইহোক, এ নিয়ে আরেকদিন কথা বলা যাবে।

যারা মনে করেন— দাড়ি রাখা কেবলই সুন্নত, যুবক বয়সে না রাখলেও চলবে, সামান্য একটা সুন্নত ছেড়ে দিলে এমন কোনো গুণাহ হবে না; বয়সকালে রেখে দিব ইন-শা-আল্লাহ। তাদেরকে বলি— দাড়ি রাখা কেবলই সুন্নত নয়। দাড়ি রাখা সুন্নত এবং ওয়াজিব। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি রেখেছেন, তাই দাড়ি রাখা সুন্নত; আর দাড়ি রাখতে তাগিদ দিয়েছেন, তাই দাড়ি রাখা ওয়াজিব। দাড়ি কেটে ফেলা কবিরা গুণাহ, এবং তা অগ্নিপূজক বা মুশরিকদের অনুসরণ সমতূল্য!

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে পারস্য সম্রাটের দুজন দূত দেখা করতে এল। তাদের গোফ ছিল বড়, দাড়ি কামানো। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরক্তির সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের এরকম করতে কে বলেছে?”। জবাব এলো, আমাদের রব্ব বলেছেন, মানে পারস্য সম্রাট কিসরা। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আর আমার রব্ব বলেছেন, আমি যেন গোফ ছোট রাখি এবং দাড়ি লম্বা করি”। [১] আল্লাহ এখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সরাসরি আদেশ দিয়েছেন। আর, আল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সরাসরি আদেশ দ্বারা যে হুকুম সাব্যস্ত হয়, তা ওয়াজিব হিসেবে পরিগণিত হয়। [২]

একজন মুসলিম হিসেবে মিনিমাম এক-মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা আপনার অবশ্য কর্তব্য। দাড়ি এর চেয়ে ছোট করা হারাম, এতে কবীরা গুণাহ হয়। [৩] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা করো, গোঁফ কাটো এবং দাড়ি লম্বা করো। [৪] এই হাদীসের আলোকে বলা যায়, গোঁফ বড় করা এবং দাঁড়ি কামিয়ে ফেলা মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য; এবং মুসলিমদেরকে এর বিরোধীতা করতে উল্টো কাজটা করতে বলা হয়েছে।

সুতরাং, যারা মনে করেন— দাড়ি রাখা কেবলই সুন্নত, না রাখলেও চলে, শুধু একটা সুন্নতই তো মানলাম না, এতে আর এমন কী গুণাহ হবে; আপনাদের এই মনে করাটা যথার্থ নয়। শুধু এতটুকুই না, আরও আছে! ধরেন আপনি দিন ও রাতের কিছু সময় নামাজ-রোজা কিংবা নফল ‘ইবাদাত’ করেন। বাকি সময়টা অন্যান্য কাজে কিংবা ঘুমে কাটান। এইযে, যে সময়টা ইবাদাতের মধ্যে থাকছেন না, দাড়ি রাখলে এই সময়টাতেও সাওয়াব লিখিত হতে থাকে আপনার আমলনামায়। মানে আপনি যখন খান, ঘুমান কিংবা অবসর কাটান, তখনও আপনি কন্টিনিউয়াসলি সাওয়াব পেতে থাকেন।

আবার, আপনি যদি কোনো অশ্লীল ছবি দেখেন, তাহলে ততক্ষণই আপনার গুণাহ হবে যতক্ষণ আপনি তা দেখবেন। যখনই তা দেখা বন্ধ করবেন, তখনই গুণাহ লেখা বন্ধ হয়ে যাবে। আবার, আপনি যদি কাউকে গালি দেন, তাহলে যতক্ষণ গালি দিতে থাকবেন ততক্ষণই গুণাহ লিখিত হতে থাকবে। গালি দেওয়া বন্ধ করা মাত্রই গুণাহ লেখা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যদি দাড়ি কেটে ফেলেন, তাহলে শুধু দাড়ি কাটার জন্যই না, বরং যতদিন না আপনার দাড়ি একমুষ্টি পরিমান বড় হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আপনার কন্টিনিউয়াসলি গুণাহ হতেই থাকে। আপনি খান, ঘুমান, কাজ করেন, অবসর কাটান, যাই করেন না কেন, কেটে ফেলা দাড়ি একমুষ্টি পরিমাণ না হওয়া পর্যন্ত গুণাহ হতেই থাকে, হতেই থাকে। মানে সোজা কথা- আপনি কোনো গুণাহের কাজে লিপ্ত নেই, তবুও আপনার গুণাহ হয়েই চলেছে, অনবরত! হ্যাঁ, এটাও গুণাহে জারিয়া। [৫]

তবে একটা কথা! এখনকার সময়ে মুসলিম অমুসলিম সবাই-ই কিন্তু দাড়ি রাখে। অমুসলিমরা দাড়ি রাখে স্টাইল বাড়ানোর জন্য, আর মুসলিমদের দাড়ি রাখতে বলা হয়েছে নবীর সুন্নত (এবং, ওয়াজিব) পালনের জন্য। যদি এমনটা মনে করেন যে, দাড়িও রাখবো, কিন্তু একটু খোচাখোচা স্টাইলে রাখলাম; সুন্নাহ পালনও হবে, আবার স্টাইলও হবে। না ভাই! খোচাখোচা দাড়ি সুন্নাহ পরিপন্থী। আবার, আপনি যদি একজন অমুসলিম সেলিব্রেটির দাড়ি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে দাড়ি রাখেন, তাহলে আপনি সেই সেলিব্রেটিকেই অনুসরণ করলেন, নবীকে নয়। তখন আপনার সাথে সেই অমুসলিমের পার্থক্য থাকলো না, এবং নবীর সুন্নাহ পালনের ফযিলতও আপনি ভোগ করতে পারলেন না। কারণ আপনার নিয়্যত শুদ্ধ নয়। নিয়্যত ঠিক না থাকলে ভাল কাজও পণ্ড হয়ে যায়।

বুখারী শরীফের একদম প্রথম হাদীসেই এ সম্পর্কে বলা হয়েছে,
“সকল কাজই (ও তার ফলাফল) নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল” সুতরাং, আপনি যাকে ফলো করছেন, সে অনুযায়ী-ই আপনার কাজ বিবেচনা করা হবে। “যে যাদেরকে অনুসরণ করে সে তাদেরই দলভূক্ত, এবং কিয়ামতের দিন তারা তাদের সাথেই থাকবে” [৬] যারা মনে করেন- দাড়ি রাখলে হুজুর-হুজুর লাগে, গেরাম্য ক্ষ্যাত লাগে, তাদেরকে বলি, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়ি রেখেছিলেন, তিনি কি সুন্দর ছিলেন না? নাকি দাড়ি রাখায় তার সৌন্দর্য কমে গিয়েছিল? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রূপের বর্ণনা দেওয়ার আগে হযরত ইউসুফ (আঃ) এর রূপের বর্ণনা দিই।

ইউসুফ (আঃ) যখন মিশরে দাস হিসেবে বিক্রি হয়ে গেলেন এবং রাজ-দরবারে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলেন, তখন তাঁর রূপ-সৌন্দর্য দেখে মিশরের ফার্স্ট লেডি জুলাইখা তাঁর প্রেমে পড়ে গেল। সে খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই জুলাইখার সঙ্গী-সাথী, বান্ধবীরা ছি ছি করা শুরু করে দিলো। এমন রুচি যে, শেষমেশ সামান্য একটা দাসের প্রেমে? এ কথা জুলাইখার কানে গেল। অতঃপর সে বান্ধবীদের নিয়ে একদিন একটা পার্টির আয়োজন করলো। মনেমনে ভাবলো- দাড়া তোদের দেখাচ্ছি কার প্রেমে পড়েছি আমি!

দস্তরখানে বসিয়ে সবাইকে একটা করে আপেল আর একটা করে ছুরি দিল। আর বললো, আমি যখন বলবো তখন তোমরা আপেলটা কাটবে। তারপর জুলাইখা ইউসুফ (আঃ)-কে বললো রুমে ঢুকতে আর বান্ধবীদেরকে বললো ফল কাটতে। অপলক হয়ে ইউসুফ (আঃ) এর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আপেল কাটতে গিয়ে সবাই নিজেদের হাত কেটে ফেললো। [৭] মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াফাতের পর মদীনার মেয়েরা মা আয়েশা (রাঃ) এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো— আমাদের নবী দেখতে কেমন ছিলেন, আম্মাজান?

তো আয়িশা (রাঃ) বললেন, “তোমরা তো কুরআনে ইউসুফ (আঃ) এর ঘটনা পড়েছ, মিশরের মেয়েরা তাকে দেখে হাত কেটে ফেলেছিল। ও মদীনার মেয়েরা, তোমরা যদি তোমাদের নবীকে দেখতে তাহলে তোমরা তোমাদের গলা কেটে ফেলতে।” [৮] নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি দাড়ি ছাড়া-ই অপূর্ব সুন্দর ছিলেন, নাকি দাড়িসহ? দাড়িসহ! তাহলে যারা মনে করেন দাড়ি সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়, দাড়ি রাখলে বুড়াবুড়া লাগবে, আনস্মার্ট লাগবে; সেটা কতটুকু যৌক্তিক হলো?

আরেকটা হাদিস বলি, জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার চাদর ও লুঙ্গি পরিহিতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক পূর্ণিমা রাত্রির চাঁদনীতে দেখি। তখন, আমি একবার তাঁর দিকে ও একবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকি যে, কে বেশি সুন্দর। আমার মনে হলো, তিঁনিই চাঁদের চেয়ে বেশি সুন্দর। [৯] তাহলে বলেন তো ভাই, তাঁর এই সৌন্দর্য কি দাড়ি ছাড়া, নাকি দাড়ি সহ? এমনকি বিজ্ঞানীরাও সম্প্রতি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, দুই চোয়ালের মাঝের দূরত্ব পুরুষালি ভাবের ইন্ডিকেটর, আর দাড়ি এই জিনিসটাই বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে সুরক্ষা, ইউভি-রে থেকে রক্ষা, স্কিন প্রোটেকশন ইত্যাদি ইত্যাদি ফ্যাসিলিটি তো থাকছেই। [১০]

অনেকে মনে করেন- দাড়ি রাখলে ভালো মেয়ে পাওয়া যাবে না। হুজুরদেরকে আবার কোনো ভাল মেয়ে বিয়ে করে নাকি? ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও, দাড়ির বিরুদ্ধাচারণে এমন কথা-ই বলে থাকেন অনেকে। তাদের এরূপ ধারণা পোষণ করার মূল কারণ হলো তাদের কাছে ‘ভালো’র সংজ্ঞাটা একটু আলাদা। যারা ভাল মেয়ে বলতে বোঝেন— সুন্দরী, রূপবতী, গুণবতী, লাস্যময়ী ললিতা, জিন্স-টপ্স-শার্ট-টিশার্ট, থ্রি কোয়ার্টার, সাড়ে হাফ কোয়ার্টার পরিহিতা নুঙ্কুরি-ঝুঙ্কুরি প্রগতিমনা আধুনিকা; তাদের কাছে মনে হতেই পারে এসকল ‘ভাল’ মেয়ে দাড়িওয়ালাদের কপালে জুটবেনা। বস্তুত এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই বাস্তব! উপর্যুপরি বলা যায়, এমন কোনো ফুলকলি টাইপের সেলিব্রিটি এসে যদি কোনো (সহীহ সুন্নতি) দাড়িওয়ালা ‘হুজুর’কে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়, নিশ্চিতভাবে সে তা নাকচ করে দিবে।

সাধারণত, যার মন-মানসিকতা যেমন, তার রুচিবোধও তেমন। প্রত্যেকেই তার স্বীয় রুচি অনুযায়ী সঙ্গী পছন্দ করে নিবে। যে নিজে ডিস্কো-হিপহপ জেনারেশনের, সে চাইবে তার সঙ্গীও অনুরূপ হোক। যে নিজে বেলেল্লাপনায় লিপ্ত, তার মনে অনুরূপ ব্যাক্তিরই ঠাই হবে। যার কাছে বোরকা/নিকাব/আবায়া পরনেওয়ালীদেরকে ব্যাকডেটেড মনে হয় এবং জিন্স-টপ্স-টিশার্ট পরনেওয়ালীদেরকে শালীন, শ্লীল, মার্জিতা ও স্মার্ট মনে হয়, সে সেই স্মার্টদেরকেই গ্রহণ করবে; এটা যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। ঠিক তেমনি, যার কাছে দাড়িওয়ালা পছন্দ হয়, সে তাকেই গ্রহণ করবে। ইটস্ হার চয়েজ! [১১]

যারা (সহীহ সুন্নতি) দাড়ি অপছন্দ করলো তারা নবীর সুন্নতকে অপছন্দ করলো। আর যে রাসূলের (সাঃ) সুন্নতকে অপছন্দ করে সে কিভাবে তার স্বামীর দ্বীনের পরিপূর্ণতা সাধন করবে? অমন একটা মেয়ে কোনো প্র্যাক্টিসিং মুসলিম ছেলের লাইফে এলে (হয়ত) সংসারটাকে জাহান্নামের টুকরা বানিয়ে ছাড়বে। তাছাড়া বর্তমানে অসংখ্য মেয়ে বুঝে বা না বুঝে নারীবাদীদের নৈতিকতা-বিধ্বংসী প্রপাগাণ্ডাসমূহের ফাঁদে পা দিয়ে মন-মানসিকতা নষ্ট করে ফেলেছে। সেই সাথে তারা খাপছাড়া মনস্তত্ব নিয়ে হয়ে উঠেছে লাগামহীন জীবনচারী এবং সাংসারিকতায় উদাসীন। এই লাগামহীনতা কখনও কখনও তাদেরকে করে তুলছে হিংস্র।

সুতরাং, একজন প্রাক্টিসিং মুসলিম কখনোই অমন কাউকে সঙ্গী হিসেবে চাইবে না। এমনকি, তারাও দাড়িওয়ালাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। সুতরাং, দাড়ি এক্ষেত্রে এক প্রকার ‘ফিল্টার’ হিসেবে কাজ করছে, যা একজন মুসলিমকে বে-দ্বীনী নারীদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তবে যারা দাড়ি রেখেও প্র্যাক্টিসিং নন, কিংবা কেবলই সেলিব্রিটিদের অনুকরণে স্টাইলিশ দাড়ি রাখেন, তাদের নিয়্যত ভিন্ন। সুতরাং তাদের ফলাফলও ভিন্ন। এ সম্পর্কে আগ বাড়িয়ে মন্তব্য না করাই উত্তম!

সবশেষ কথা— দাড়ি হচ্ছে ‘একমাত্র দৃশ্যমান সুন্নাহ’ যা নিয়ে আপনি কবরে উপস্থিত হবেন। আপনি জানেন না আপনি কখন মারা যাবেন। তাই, যদি আপনি ভেবে থাকেন— বয়স হোক, তখন নাহয় রেখে দিবো। হয়ত মিস করবেন। হয়তোবা ‘একমাত্র দৃশ্যমান সুন্নাহ’ ব্যতিরেকেই উপস্থিত হতে হবে কবরে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক। গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের গুরুত্ব বুঝার তাওফিক দান দান করুক। আমিন।

রেফারেন্স:
* বিশেষ কৃতজ্ঞতা- ডা. শামসুল আরেফীন; “ডাবল স্ট্যান্ডার্ড”

১. আল গাযালির ফিক্বহুস সিরাহ, পৃষ্টা-৩৯৫ এবং আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৪৫৯-৪৬০ ইবনে জারির আত্ তাবারি, ইবনে সা’দ ও ইবনে বিশরান কর্তৃক নথিকৃত। আল আলবানি (রহ.) একে হাসান বলেছেন।
২. নূরানী চেহারাঃ দাড়ির তাত্বিক বিশ্লেষণ; মুফতি ইমরান বিন ইলিয়াস, পৃষ্ঠা-৫৬। এবং, হস্তক্ষেপমুক্ত পূর্ণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব, শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া কান্ধলভী (রহ.), তাহক্বীকঃ শায়খ আল্লামা আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ., পৃষ্ঠা ২১
৩. ২ নং রেফারেন্সের ৩য় অধ্যায়, পৃষ্ঠা ৫৬-৫৮
৪. বুখারী শরীফ, ২/৮৭৫; (অনুরূপ হাদীস, মুসলীম শরীফ, ১/১২৯)
৫. ২ নং রেফারেন্সের পৃষ্ঠা ১৫
৬. Hadithbd.com; ভাবার্থ, সহীহ মুসলিম (ইঃফাঃ); অধ্যায়ঃ ৪৭; হাদীস নং-৬৪৭০
৭. সূরা ইউসুফ, আয়াত ৩১-৩৩
৮. খুতুবাতে হাকীমুল ইসলাম ক্বারী তৈয়ব সাহেব রহ. (দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ)
৯. শামায়েলে তিরমিযী ই.ফা., ১ম অধ্যায়, হাদীস নং-১০
১০. www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1090513816300332
www.thestar.com.my/lifestyle/health/2019/08/26/growing-beard-good-for-health
১১. সূরা নূর, আয়াত- ৩, ২৬

লেখাটি মিম্বার ফেসবুক গ্রুপের “মিম্বার ম্যাগাজিন” থেকে সংগ্রহীত।