অপবাদ : একটি বড় গুনাহ

মুফতি সফিউল্লাহ | 

অপবাদ আরোপ একটি জঘন্য অপরাধ। অপরাধের কারণে মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়। নষ্ট হয় সামাজিক ও পারিবারিক সংহতি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতীয় ঐক্য। অপবাদ ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকারক জিনিস। অপবাদের মাধ্যমে ব্যক্তি অপরের ক্ষতি করার সাথে সাথে নিজেরও ক্ষতি করে। নিজেকে কবিরা গুনাহে লিপ্ত করে।

অপবাদ ইসলামে যেমন নিষিদ্ধ তেমনিভাবে সামাজিকভাবেও একটি ঘৃণিত অপরাধ। এই অপবাদের কারণে একজন মানুষ আরেকজনের মান-মর্যাদা সব বিনষ্ট করে ফেলে। বর্তমানে আমাদের সমাজে শুধু অনুমানের ভিত্তিতে অপবাদের ঘটনা হরদম ঘটছে। অপবাদ রীতিমতো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গল্প, গুজব, আড্ডা যত যাই হোক সর্বত্রই অন্যের দোষচর্চা। অন্যের দুর্নাম, মিথ্যা অপবাদ দেয়া।

অমুক পুলিশের চাকরি করে, তার বাড়ি গাড়ি সব ঘুষের টাকার, অমুক বন বিভাগে চাকরি করে, তার সব ঘুষের টাকার, অমুক ব্যাংকে চাকরি করে, তার সব সুদের টাকার। গল্প গুজবে এসব বলা রীতিমতো আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছ। অপবাদ কখনো কখনো কুফরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। কেউ রাসূলের ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ রটনা করলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে। ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যদি কেউ রাসূলুল্লাহ সা:-কে গালি দেয় অথবা তাকে মিথ্যারোপ করে বা তার ব্যাপারে অপবাদ রটনা করে তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যাবে এবং তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। (আহকামুল কুরআন-৪/২৭৫)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা সচ্চরিত্রবান সরলমনা মুমিন নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয় তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য (আখিরাতে) আছে মহাশাস্তি।’ (সূরা নূর-২৩)

অপবাদ একটি জঘন্য অপরাধ। সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তুলে ধরে। অপবাদ মানুষকে কোনো কারণ ছাড়াই অপরাধী হিসেবে তুলে ধরে এবং সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আল্লাহ ব্যভিচারের অপবাদকে গুরুতর অপরাধ বলে সাব্যস্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা ব্যাপারটিকে তুচ্ছ মনে করছ; অথচ তা আল্লাহর কাছে খুবই গুরুতর অপরাধ।’ (সূরা নূর-১৫)

অপবাদের মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তির চরিত্রে কালিমা লেপন করা হয়। সচ্চরিত্রবান নারীদের ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া কঠিন অপরাধ। এ জন্য এর শাস্তিও কঠিন।

মহান আল্লাহ বলেন- ‘যারা সতী-সাধ্বী নারীকে অপবাদ দেয়, তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে না। তাদেরকে ৮০টি চাবুক মারবে এবং তাদের সাক্ষ্য কখনো গ্রহণ করবে না। তারা নিজেরাই তো ফাসেক। (সূরা নূর-৪)

উল্লিখিত এই শাস্তি শুধু এই অপবাদের জন্যই নির্দিষ্ট। অন্য কোনো অপরাধের অপবাদ আরোপ করলে বিচারকের বিবেচনা অনুযায়ী প্রত্যেক অপরাধের অপবাদের জন্য দণ্ডমূলক শাস্তি দেয়া যেতে পারে। (আহকামুল কুরআন-৫/১১১)

মিথ্যা অপবাদে মানুষের সম্মানহানি ঘটে। কারো সম্মানহানি করার অধিকার অন্যের নেই। যে অপর ভাইয়ের ইজ্জত খাটো করে তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে যদি এমন স্থানে লাঞ্ছিত করে যেখানে তার সম্মানহানি হয় আল্লাহ তাকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করবেন, যেখানে তার সাহায্যপ্রাপ্তির আশা ছিল।’ (আবু দাউদ-৪৮৮৪)

অহেতুক একে অপরকে দোষারোপ করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া যেন এর প্রথম কারণ। একটি বিষয় সত্যায়ন না করে ছড়িয়ে দেয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়াতে। এভাবে একটি ভিত্তিহীন কথা ভাইরাল হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সবার সচেতন থাকা জরুরি। মূলত অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশে অপবাদ দেয়ার ঘটনাই সবচেয়ে বেশি ঘটে।

অপবাদ থেকে বাঁচার উত্তম উপায় হলো- সন্দেহ বা ধারণার ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে কোনো দোষ চাপিয়ে না দেয়া। কারণ মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয় কতক ধারণা গুনাহ।’ (সূরা হুজরাত-১২)

কারো ব্যাপারে অপবাদ দেয়া হলে সে ক্ষমা না করলে আল্লাহ র কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে না। সুতরাং আমাদের উচিত যাদেরকে অপবাদ দিয়েছি তাদের থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া।

লেখক : শিক্ষক, শেখ নূরদ্দিন র. দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা