বর্ণবাদ, বিদ্বেষ ও ইসলামের আদর্শ

আবদুল্লাহিল বাকি | 

কোন নরগোষ্ঠীর প্রতি ভিন্ন গাত্রবর্ণের অন্য নরগোষ্ঠী বা জনগোষ্ঠীর বিভিন্নতাজনিত যে বৈষম্যমূলক আচরণ, তাকে সাধারণ অর্থে বর্ণবাদ বলা হয়ে থাকে। বর্ধিত পরিসরে বলতে গেলে গাত্রবর্ণের ভিন্নতার কারণে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে কোন জাতিকে বিপন্ন করা হলে তাও বর্ণবাদের আওতায় পড়ে। ইংরেজি রেস থেকে রেসিজম তথা বর্ণবাদ কথাটির উদ্ভব।

এক্ষেত্রে মানুষের গাত্রবর্ণ, সামাজিক শ্রেণি, বংশ পরিচয় ও জন্মস্থানের উপর ভিত্তি করে মানুষে মানুষে বিভক্ত করে কোন জাতি বা গোষ্ঠী তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করলে তাকে বর্ণবাদ বলে। এক্ষেত্রে মানুষকে শ্রেণীকরণের মাধ্যমে আলাদা করে সুযোগ সুবিধা বণ্টনের তারতম্য করার চেষ্টা চলে। ফলে নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠী তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করে। অন্যদিকে অনেক জাতিগোষ্ঠী তাদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

উইলিয়াম জে. ‘Races & People’ নামক গ্রন্থের ১৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “রেসিজম হল নিজেদেরকে ছাড়া অন্যান্য যে কোন গোষ্ঠীকে মূলৎপাটনের চেষ্টা অথবা মানুষ হিসেবে তাদের অস্তিত্ব নাকচকরণ। এরই ফলাফলে তারা নিজেদেরকে মনে করে শ্রেষ্ঠতর। আর অন্যদেরকে করে তুচ্ছ-জ্ঞান। এই তুচ্ছ চোখে দেখার কারণেই অন্যদের মাঝে কোন ঐশ্বর্য বা অর্জন দেখলে তা আত্মসাৎ করার প্রয়াসও কম থাকে না তাদের। এজন্যই অনেক বিশ্লেষকের মতে, প্রত্যেক উপনিবেশিকতা জন্ম দেয় একেকটি বর্ণবাদের, তবে প্রত্যেক বর্ণবাদ জন্ম হয় না উপনিবেশিকতার উদরে। রেসিজমের আরেকটি রূপ হল, বৈষম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে, মানবজাতির এক অংশকে শ্রেষ্ঠ, আরেক অংশকে হেয়তর বলে মনে করা।”

প্রফেসর সালাহ বাদির ‘আত-তাফরিকাতুল উনসুরিয়্যাহ ফি ইফরিকিয়া’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, “রেসিজম হল একটা আধিপত্য ও কতৃত্ববাদী মতবাদ। বিশেষত যারা নিজেদেরকে মনে করে অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর উপর মোড়লের পদে বিদ্যমান। শুধু মানসিকভাবে এই বোধ লালন করলেই রেসিজমের অর্থ পুরোপুরি প্রকাশ পায় না। এর জন্য প্রয়োজন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে এই বোধ ও বিশ্বাসের বাস্তবায়ন। এটা অনেকটা রেসিজমের সেক্যুলার পরিচয়। আর ধর্মীয় দিক থেকেও রেসিজমের প্রয়োগ বিদ্যমান। আর সেটা হল, নিজেদেরকে যুক্তিহীনভাবে গোঁয়াড়িপনাবসত শ্রেষ্ঠ জাতি বলে দাবি করা। পুরো বিশ্বের মুক্তি ও সংস্কার যে গোষ্ঠী নিজেদের একক অধিকার বলে মনে করে, তারাও ডুবে আছে রেসিজমে। আর এই মনোভাব জায়নবাদী ইহুদি ধর্মে পুরোপুরি বিদ্যমান।”

বর্ণবাদী বৈষম্যের যে প্রকাশ ঘটে সমাজে, এর পিছনে বিদ্যমান রয়েছে কয়েকটি মৌলিক কারণ। ১. শ্রেনি, ২. গাত্রবর্ণ, ৩. ধর্ম, ৪. ভাষা, ৫. জন্মভূমি, ৬. উগ্রবাদী লেখকদের রচনা, ৭. সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক, ৮. যুদ্ধগত দিক।

অ্যাডলফ হিটলার ‘মাইন ক্যাম্ফ’ বইয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, পৃথিবীতে মানুষ আসলে তিন প্রকার। ১. আর্য জাতি, ২. অনার্য, ৩. নিগ্রো। আর্য জাতির বায়োলজিক্যাল এনথ্রোপলজিকে রক্ষা করাই ছিল হিটলারের পরম উদ্দেশ্য। এর জন্য অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীকে বেদির বলি বানানো তার কাছে ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

উপরে বর্ণবাদী বৈষম্যের ক্ষেত্রে উল্লিখিত তৃতীয় নং কারণটি বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। ধর্মকে ঘিরে এক ধরণের ভীতি তৈরি হচ্ছে আধুনিক সমাজে। এ ভীতিকে দমন করতে ধর্মীয় সিম্বল বা যে কোন চিহ্ন প্রতীক দেখলে আধুনিক প্রজন্ম একে হেয় প্রতিপন্ন করছে। ধর্মকে ঘিরে বর্ণবাদের চর্চারই একটা রূপ হল আধুনিক সমাজে ইসলামফোবিয়া, বলে মনে করেন একদল গবেষক। নাইন ইলেভেনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাশ্চাত্যের সমাজে ইসলাম-বিদ্বেষের ভীত শক্ত হয়ে উঠে। হেয় প্রতিপন্ন করা হতে থাকে মুসলমানদের, টুপি, দাঁড়ি, হিজাবসহ অন্যান্য ইসলামী শিআর তথা চিহ্নের।

অনেক গবেষক আবার ইসলামফোবিয়া আর বর্ণবাদকে এক করে দেখতে নারাজ। জোসিলিন সিজারি ‘Muslims In Western Europe After 9/11: Why the term Islamophobia is more a predicament than an explanation’ নামক বইয়ে বলেছেন, “একাডেমিক ব্যক্তিত্বরা এখনও ইসলামফোবিয়া শব্দের বৈধতা নিয়ে টানা-পোড়েনে আছেন। রেসিজম ও ইসলামফোবিয়াকে যে এক করে দেখা যায় না, সেটা তুলে ধরছেন তারা।”

আনা ত্রিয়ান্ডাফিলিডু ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘Muslims in 21st Century Europe: Structural and Cultural Perspectives’ বইয়ের ২৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “ইসলামফোবিয়া শব্দটির সাথে রেসিজমের মত ধারণার কোন ঐক্যমত্য দূরে থাক, নূন্যতম সম্পর্কও নেই।” একই সালে প্রকাশিত আন্দ্রে স্রোক তার ‘Islamophobia/Islamophilia: Beyond the Politics of Enemy and Friend’ বইয়ে বলেছেন, “জাতীয় আবেগ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারলে এই শব্দটির আসল তাৎপর্য অনুধাবণ করা যাবে। আর তখন বোঝা যাবে, এ দুই শব্দের মধ্যে সামান্য সম্পর্কও নেই।”

তবে কতক বিশ্লেষকের মতে রেসিজম আর ইসলামফোবিয়া একে অপরের সাথে আংশিকভাবে যুক্ত, আংশিকভাবে বিযুক্ত। ডায়ান ফ্রস্ট ইসলামোফোবিয়াকে জাতি বা ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিম বিরোধী অনুভূতি এবং সহিংসতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। কারণ, ইসলামোফোবিয়ায় মুসলিম নামধারী অথবা ইসলামী পরিচয়ে পরিচিত জাতি-গোষ্ঠীকে বিদ্বেষাগারের উৎস হিসেবে ধরে থাকে।

এ্যালান জনসনের মতে, ধর্মীয় শব্দের আবরণে জোনোফোবিয়া বা বর্ণবাদ প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয় ইসলামোফোবিয়া। দুয়ের মাঝে শুধু পরিভাষা আর ধরণের পার্থক্য; কাজ অভিন্ন। সমাজবিজ্ঞানী ইয়াসমিন হুসাইন আর পল বাগগুলেই-এর যৌথতায় লিখিত ‘Securitized Citizens: Islamophobia, Racism and the 7/7 London Bombings’ বইয়ে বলা হয়েছে, “ইসলামোফোবিয়া আর রেসিজমের মাঝে সম্পর্ক দুই রকম। বিশ্লেষণাত্মক দিক থেকে দুইটির মাঝে ফারাক আছে অবশ্য (analytically distinct), তবে অভিজ্ঞতাগত দিক থেকে দুটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত (empirically inter-related)।

রুনিমেড ট্রাস্টের ‘Islamophobia: A Challenge for Us All’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হবার পর ইসলাম নিয়ে পাশ্চাত্য যে ফোবিক ধারণা দীর্ঘদিন যাবত প্রচার করে আসছিল, সেটার মুখে তালা এঁটে যায়। সে বইয়ে ইসলাম বিদ্বেষের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।
১. ইসলামকে একটা রক্ষণশীল প্রাচীন ধর্ম হিসেবে দেখা, যে অধুনাকালের বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে সমতালে চলার যোগ্য না।
২. ইসলামকে একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী ধর্মীয় আদর্শ হিসেবে দেখা। অন্যান্য সংস্কৃতির সাথে যার মোটেও আদান প্রদানের সম্পর্ক নেই। নিজে তো পারেই না অন্যকে প্রভাবিত করতে; তদুপরি অন্যের দ্বারাও প্রভাবিত হতে জানে না।
৩. ইসলাম পাশ্চাত্যজগত থেকে নিম্ন পর্যায়ের। বর্বর, বুদ্ধিহীন, মূর্খ। সর্বদা যে যৌন-ফ্যান্টাসীতে ভুগে।
৪. ইসলাম একটা শত্রুতা-ভাবাপন্ন জোড়-জবরদস্তিমূলক ধর্ম। সমাজের জন্য বিপদ। টেরোরিজমের উৎসাহদাতা। ইসলাম অনিবার্য করে তোলে (clash of civilizations) সভ্যতার সংঘাতের তত্ত্ব।
৫. ইসলামকে পাশ্চাত্যে ব্যপকভাবে নিছক একটা পলিটিক্যাল আইডিওলজি মনে করার প্রবণতাও খুবই বেশি। রাজনীতি, যুদ্ধ আর সৈন্যসামন্তই যেন পাশ্চাত্যের অনেকের চোখে ইসলামের আসল রূপ।
৬. মুসলমানদেরকে সমাজ-বিচ্ছিন্ন করার জন্য সর্বদা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিরুদ্ধ-অপপ্রচার চালানো।
৭. ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ যে পাশ্চাত্যে কেবলমাত্র একট স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে, তাই নয়। বরং একে আধুনিকতার মানদন্ডও ভাবা হয়।
৮. মুসলমানদের সম্পর্কে কোন সমালোচনা উঠলেই সেটাকে রং চড়িয়ে, ব্যপক আকারে তুলে ধরা।

পশ্চিমা মিডিয়ায় ইসলামফোবিয়া:
পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম-বিদ্বেষ নতুন কিছু নয়। অনেক আগে থেকেই চলে আসছিল এই ধারা। প্রিন্ট মিডিয়া ও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া সমতালে চলেছিল। মূলত ইরানী বিপ্লবের সময় এটা আরো প্রকট হয়ে ফুটে উঠে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের সহায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয় কিছু প্রচার মাধ্যম। তৎকালিন ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা খোমেনির চরিত্র হননসহ ঘটনার বিবরণে বিকৃতি, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে ইরানকে হেয় করাসহ সবধরণের প্রচেষ্টা চালায় ওরা। যেহেতু শিআ-প্রধান মুসলিম দেশ ইরান, তাই ইরানীদেরকে ধর্মীয়ভাবে হেয় করার অর্থ ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা। কারণ পশ্চিমের কাছে শিআ সুন্নি নামে কোন ফারাক নেই।

এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ, ফরাসি সাংবাদিক ফ্রেইদুন সাহেবজামের লেখা বই ‘লা ফেমমি লাপিডি।’ বইটি লেখা হয়েছে সোরাইয়া মানশুরি নামক এক ইরানী নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া কথিত সত্য কাহিনী নিয়ে। প্রকাশিত হয়েছে ১৯৯০ সালে। এই বইটির উপর ভিত্তি করে সাইরাস নাওরাস্তে হলিউডের অর্থ-সাহায্যে নির্মাণ করেন ‘দ্য স্টোনিং অব সোরাইয়া এম.’ মুভিটি। এখানে যদিও খোমেনির ইরানের প্রেক্ষাপটের নেতিবাচক দিক তুলে ধরা মুভিটির মূল উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু এখানে মারাত্মকভাবে ইসলামের ‘রজম’এর বিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা হয়েছে। চূড়ান্ত হিংস্রতা, বর্বরতা ও অমানবিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে একে।

এভাবেই পাশ্চাত্য মিডিয়ার ইরান বিদ্বেষের অর্থ কেবল পররাষ্ট্রনীতিগত বৈষম্যে সীমাবদ্ধ নয়। সাথে সাথে ইসলামফোবিয়ার বিষ তাতে গুঁজে দেয়া থাকে। এই সাইরাস নাওরাস্তের হাতেই নির্মিত হয়েছিল বিতর্কিত ডকুড্রামা ‘দ্য পাথ টু ৯/১১’ (২০০৬)। এতে ৯/১১ নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন সরকারের গৃহীত পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবের সমালোচনা করা হলেও, জর্জ ডব্লিউ বুশের ‘প্রোপাগান্ডা’ তিনি এমনভাবে তুলে ধরেন যে, বুশ আফগানিস্তানে ‘জঙ্গি’ নিধনে যে অভিযান শুরু করেছিলো তা বৈধতা পায়।

শুধু ইরানই নয়, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রাম, দক্ষিণ লেবাননে সংগ্রামরত হিজবুল্লাহ গেরিলাদের সম্পর্কেও মিডিয়ায় অপ-প্রচারণা চলছিল সমানতালে। পশ্চিমা মিডিয়ায় মুসলমানদেরকে খুনি, সন্ত্রাসী, অপহরণকারী হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছিল। ফিলিস্তিনী মুসলমানদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অথবা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মুখে আত্মরক্ষার জন্য ইরানের যুদ্ধকৌশলকে ব্যাখ্যা করা হয় সন্ত্রাসী তৎপরতা বলে, কিন্তু সৈন্য-আগ্রাসনের নিন্দা করা হয় না। এ হল প্রচার মাধ্যমের ভাষ্য সৃষ্টির রাজনীতি, প্রাচ্যতত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ। প্রাচ্যতত্ত্ব মুসলমানদের সম্পর্কে যে নমুনা পেশ করছে তা-ই চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে গোটা মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর উপর।

১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলো তাদের তেলের অস্ত্র নিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করলে আরব-পশ্চিম সম্পর্ক একটা নতুন মাত্রা পায়, যার সাথে সম্পর্কিত বর্তমান পরিস্থিতি। এর আগে আরবরা ছিল আধিপত্যের অধীন ও সংগ্রামরত, আর পাশ্চাত্য আধিপত্যশীল। এই রকম একটা সম্পর্ক স্থিত হয়েছিল দুই দিকের মধ্যে। ৭৩ সালে তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমেরিকানদের জ্বালানী সঙ্কট দেখা দেয়। এ সঙ্কটের বোধ যতটা না বাস্তব তার চেয়ে বেশি প্রচারণা। বাড়তি লাভের জন্য তেল কোম্পানীও তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়, একই কারণে তেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির চেষ্টা চলে।

এই গোটা প্রক্রিয়াটি প্রচার মাধ্যমের একটি অংশ কর্তৃক গৃহীত হয় বিশ্বস্ততার সাথে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা প্রকৃত অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে তদন্ত করে দেখেননি সঙ্কটের বোধটা কৃত্রিম কিনা, বরং তারা তেল কোম্পানী ও সরকারের মনোভাবটাই বিশ্বস্ততার সাথে প্রচার করেন। ফলে অচিরেই আমেরিকানদের মধ্যে এমন একটা অনুভূতি তৈরি হয় যে, আরব দেশগুলোর মানুষেরা অন্যায়ভাবে তেল আটকে দিয়ে তাদের স্বচ্ছন্দ জীবনে সঙ্কট নিয়ে এসেছে।

এসময় প্রচার মাধ্যম মুসলমানদেরকে ভিলেন হিসেবে চিত্রিত করতে শুরু করে। সিনেমা, টিভি, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে প্রায়ই দেখা যায় তেলের মালিক আরব শেখেরা অত্যন্ত দুশ্চরিত্র মানুষরূপে আবির্ভূত। ক্রমে এ মনোভাব ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তেল সঙ্কটের নিষ্পত্তি হওয়ার পর ঠিক উল্টো কোন প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ আরবদের আবার আগের মত দেখানোর প্রয়াস কিন্তু প্রচার মাধ্যমের পক্ষ থেকে হয়নি। ফলে আরবদের সম্পর্কে খারাপ ধারণাই গণমানসে স্থায়ী হয়ে যায়।

বর্তমানে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ মিডিয়াগুলোতে মুসলমানদের খবরাখবর প্রচারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই নেতিবাচক প্রবণতায় পর্যবসিত। বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, প্রধান প্রধান মিডিয়ার মৌলিক ফোকাসের মধ্যে একটি হল রাখ-ঢাক রেখে ইসলামফোবিয়ার ব্যপক প্রচার প্রসার। সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে ‘মেল অন সানডে’তে যেসব গল্প বলা হয়, তার ৭৮% ইসলামফোবিয়া আর মুসলিম-বিদ্বেষের ফলাফল। অথচ এই মিডিয়াটি অন্যান্য মধ্যম আয়ের মিডিয়াগুলোর চেয়ে ৫৯% এগিয়ে আছে।

অন্যান্য সকল মিডিয়ার মধ্যে কেবল ‘নিউ স্টেটসম্যান’, ‘অবজারভার’, এবং ‘দ্য গার্ডিয়ান’ নিউজগুলো মুসলমানদেরকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করেছে সবচে’ কম। ২০১৮ সালের শেষ তিন মাসে ১১০০০টি প্রবন্ধ নিবন্ধ বিশ্লেষণ ও অন্যান্য নিউজপেপারের সাথে তুলনা করে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়েছে।

আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটেনে আধুনিকপন্থিদের ৬০%-ই পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্য হুমকি-স্বরূপ মনে করে ইসলামকে। আর এদের মধ্যে আবার অর্ধেক মনে করে, ইসলাম বিশেষভাবে ব্রিটিশ জীবনধারার জন্য যুদ্ধংদেহী হয়ে বসে আছে।

ইসলামিক কাউন্সিল অব ব্রিটেনের একজন গণ্যমান্য সদস্য মিকদাদ ফারসী বলতে বাধ্য হয়েছেন, “ইসলাম সম্পর্কে যে কোন রকম নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না, সেটা আমি বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি, সাংবাদিকগণ ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কে কোন কিছু শুনলে ভালভাবে যাচাই করে নেবেন এর সত্য মিথ্যা।” এছাড়া তিনি মিডিয়াকে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক সংবাদগুলোও প্রচারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার দাবি পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “মিডিয়া যেভাবে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে চিত্রায়িত করে তার মধ্য দিয়ে সে ইসলামফোবিয়ার ভূমিকাই পালন করে প্রকৃতপক্ষে। কিন্তু এটা সেন্সরশিপ সম্পর্কিত নয়, বরং স্বচ্ছতার বিষয়ে।”

ইসলামের আদর্শ
ইসলাম সকল প্রকার বর্ণ, শ্রেণী-বৈষম্য নির্মূল করেছে মৌলিকভাবে তিন দিক থেকে।
১. সমাজে ন্যায়পরায়ণতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
২. মানুষকে মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রদানের মাধ্যমে।
৩. ভিন্ন ধর্মালম্বীদের প্রতি উদারতা ও নাগরিক সাম্যপূর্ণ জীবন যাপনের অধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে।

ন্যায়পরায়ণতা ও সাম্যের বাণী আমরা শুনতে পাই কোরআনের উচ্চারণে। সূরা হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার।”

সূরা ইসরার ৭০ নং আয়াতে বলেছেন, “আর অবশ্যই আমি আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সাগরে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; এবং তাদেরকে উত্তম রিযক দান করেছি আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।”

সূরা মায়েদার ৪২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “তুমি যখন মানুষের মাঝে ফায়সালা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে করো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ন্যায়বানদের ভালবাসেন।”

হাদিসে আল্লাহর নবী সা. বলেছেন, “হে লোকসকল! তোমাদের প্রতিপালক একজন। পিতাও একজন। তোমরা প্রত্যেকেই এসেছ আদম থেকে। আর আদম এসেছেন মাটি থেকে। আরবের উপর অনারবের, অনারবের উপর আরবের, শেতাঙ্গ মানুষের উপর কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের, কৃষ্ণাঙ্গের উপর শেতাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তবে শ্রেষ্ঠত্ব হবে কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে।

হাদিসে আরো এসেছে, “তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়ে গেছে তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ, তাদের মাঝে কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করলে তারা এর কোন বিচার করত না। দুর্বল লোকেরা চুরি করলে শাস্তি দেয়া হত। আল্লাহর কসম করে বলছি, যদি মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও চুরি করত, তাহলে আমি তার হাত কেটে দিতাম।”

ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের মাঝেও বিস্তৃত ছিল নবীজির এই ন্যয়পরায়ণতা ও সাম্যের আদর্শ। নবীজি বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে পাথর ছুঁড়ে মারবে তাকে কেয়ামতের দিন আগুনের বিছানায় শুইয়ে পাথর নিক্ষেপ করা হবে।” তিনি আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন সন্ধিকৃত কাফেরের সাথে অত্যাচারমূলক আচরণ করবে, বা তার অধিকার নষ্ট করবে, অথবা তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্ব চাপাবে, কিংবা তার সন্তুষ্টি ছাড়া তার কোন জিনিস নিবে, কেয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে বিচারের দাবিদার হব আমি।”

ন্যয়পরায়ণতা ও সাম্যের পাঠ ছাড়াও ইসলামের স্বাধীনতা মানুষকে বর্ণবৈষম্যের আপদ থেকে দূরে রেখেছে। ইসলাম মানুষকে দিয়েছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা।

ইসলামে খলিফা নিয়োগ প্রদান একটা স্বাধীন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কারো হাতে বাইয়াত গ্রহণের জন্য বাধ্য করা হয় না। বরং এক্ষেত্রে মানুষকে ইচ্ছাধিকারের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। খোলাফায়ে রাশেদিনের নির্বাচন পদ্ধতি ছিল এমনই। এছাড়া খলিফা নির্বাচিত হবার পরই সে একনায়কত্ব পেয়ে যাবে, সেটারও কোন অবকাশ নেই। তাদের খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মানে এই নয় যে, পুরো উম্মতের মধ্যে তারা শ্রেষ্ঠ। বরং এর অর্থ হল তারা দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে প্রাগ্রসর। দায়িত্বের ক্ষেত্রে তাদের জবাবদিহিতার অবকাশ আছে জাতির কাছে।

এজন্যই আবু বকর রা. দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বলেছিলেন, “হে লোকসকল ! আমাকে কেবল তোমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতর নই। যদি তোমরা আমায় সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাও, তাহলে আমাকে সাহায্য করবে। আর যদি দেখ, ভিত্তিহীন মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছি আমি, তাহলে আমাকে তোমরা সঠিক পথ চিনিয়ে দিবে। যেসব বিষয়ে আমি আল্লাহর আনুগত্য করছি, তোমরাও সেসব বিষয়ে আমার আনুগত্য করো। আমি যে ক্ষেত্রে আমি আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত, সেক্ষেত্রে কোন আনুগত্য চলবে না।”

ইসলামের চিন্তা-স্বাধীনতার স্বীকৃতিও এখানে উল্লেখযোগ্য। মুমিনের প্রশংসনীয় গুণ হিসেবে আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন, স্পষ্টভাবে নিজের চিন্তাকে উচ্চারণ করা, এক্ষেত্রে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করা। এছাড়াও আল্লাহ অনেক আয়াতে ব্যপকভাবে চিন্তা করার কথা বলেছেন।

যেমন, সূরা গাশিয়ার ১৭-২০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “তাহলে কি এরা উটগুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আকাশ দেখছে না, কিভাবে তাকে উঠানো হয়েছে? পাহাড়গুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে শক্তভাবে বসানো হয়েছে? আর যমীনকে দেখছে না, কিভাবে তাকে বিছানো হয়েছে?”

ইসলাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে দিয়েছে নিজ ধর্ম পালন করবার অধিকার। সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “ধর্মের ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ভ্রষ্টতা থেকে সঠিক পথ সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।” উমর রা. বলেছেন, “ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না। কোন ক্ষয়-ক্ষতি করা যাবে না তাদের।”

মুসলমানদের সাথে ধর্মীয় বিতর্কে আসার অশেষ সুযোগ রয়েছে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের। কোরআন একদিকে মুসলামদেরকে আদেশ করেছে যুক্তি ও প্রজ্ঞার সাথে কথা বলতে, অন্যদিকে আবার কাফেরকে আহ্বান করেছে নিজেদের যুক্তি পেশ করার। একদিকে যেমন সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, “আপনার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান করুন প্রজ্ঞাপূর্ণ কৌশল ও সদুপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের (বিরোধীদের) সাথে এমন পন্থায় বিতর্ক করুন যা সবচেয়ে ভাল। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং যারা সঠিক পথে আছে তাদের সম্পর্কেও তিনিই সমধিক জ্ঞাত।”

অন্যদিকে কাফেরদেরকে লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে সূরা বাকারার ১১১ নং আয়াতে, “তোমরা তোমাদের প্রমাণ নিয়ে আস, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।”

অমুসলিমদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ, সূরা মুমতাহিনার ৮ নং আয়াতে আছে, “দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ হতে বহিস্কৃত করেনি তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।”

ইসলামে বর্ণবাদী শ্রেষ্ঠত্বের কোন অবকাশ নেই। আল্লাহর রাসূল কোন নির্দিষ্ট নৃতাত্ত্বিক জাতি গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত নবী নন। সকল মানুষের কাছেই প্রেরিত হয়েছেন তিনি। সূরা বাকারায় আছে, “হে মানুষসকল! আমি তোমাদের সকলের কাছে প্রেরিত আল্লাহর রাসূল।” এখানে কোন নির্দিষ্ট রক্ত, ভূমি সীমানা অথবা বর্ণবিভেদের উল্লেখ নেই।

আল্লাহর নবী বলেছেন, “বুইসতু ইলান না-সি কা-ফফাহ, আল-আহমার ওয়াল আসওয়াদ” (কৃষ্ণাঙ্গ শেতাঙ্গ, সকল মানুষের কাছেই আমি প্রেরিত হয়েছি)।

নবীজি আরো বলেছেন, “যে গোত্রবাদের দিকে আহ্বান করবে সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়। আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় সে, যে গোত্রবাদের পক্ষে লড়াই করে।”

তো আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্ণবাদ ও বিদ্বেষকে ইসলাম নাকচ করে দিয়েছে। এর বিপরীতে ইতিবাচক অবস্থান হিসেবে ইসলামের ছয়টি বিষয় লক্ষ্যণীয়।
১. মুমিন কাফের, কৃষ্ণাঙ্গ শ্বেতাঙ্গ নির্বিশেষে ইসলাম মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, ‘ওয়া লাকাদ কার্রামনা বানী আদামা’র উচ্চারণে।
২. কোন ধরণের শ্রেনী, বংশ, বর্ণ, ভাষা বা ঐশ্বর্যের ভিত্তিতে মর্যাদা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন তারতম্য করেনি। কেবলমাত্র ধর্মীয় চর্চায় যে এগিয়ে থাকবে, তাকে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
৩. বর্ণগত বিভিন্নতাকে ইসলাম পারস্পরিক পরিচয় ও চেনা-জানার মাধ্যম বানিয়েছে। ভাল কাজের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতায় উদ্বুদ্ধ করেছে।
৪. আহ্বান করেছে সামগ্রিক ঐক্যের এবং উপকারের ভিত্তিতে অগ্রগণ্যতার। আল্লাহর নবী সা. বলেছেন, “সকল সৃষ্টিই আল্লাহর পরিবার। আল্লাহর নিকট প্রিয় তারাই যারা এই পরিবারকে উপকার প্রদান করে।”
৫. সামাজিক সংহতি (social solidarity) রক্ষার ক্ষেত্রে দরিদ্র নিঃস্ব-দুঃখিদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। তাদেরকে নিজেদের ভাই হিসেবে মর্যাদা দেয়া।
৬. মানুষকে আপন বিশ্বাস চর্চার স্বাধীনতা প্রদান। কাউকে নির্দিষ্ট ধর্ম গ্রহণে বাধ্য না করা।

নবী সা.এর হাতে ইসলামের যে সাম্য স্বাধীনতা বিস্তার লাভ করেছে পৃথিবীতে এটা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী গবেষকগণও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। আর্থার গ্লায়ন লিওনার্ড ‘Islam, Her Moral and Spiritual Values’ (ইসলামের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ) নামক গ্রন্থে লিখেছেন, “ইসলামের মাধ্যমে মুহাম্মদ আরবদের মাঝে উদারতা সঞ্চারিত করেছিলেন। অধিষ্ঠিত করেছিলেন তাদেরকে সুউচ্চ আসনে। জড়তা ও গোত্রীয় সঙ্কীর্ণতা থেকে মুক্ত করে জাতীয় ঐক্যের সুমহান নিদর্শন উপহার দিয়েছিলেন মানবজাতিকে। সমীহ, একত্ববাদ, সরলতা, সত্য, অকৃত্রিমতার মাধ্যমে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক মহান আদর্শ। এভাবেই আরবদের নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শাণিত হয়েছিল নবী মুহাম্মদের হাতে।”

লেখাটি মিম্বার ফেসবুক গ্রুপের “মিম্বার ম্যাগাজিন” থেকে সংগ্রহীত।