শয়তানের সূক্ষ্ম ফাঁদ

ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর |

একটা আমল খুবই কঠিন। আমরা মনে করি মানুষে মানুষে হিংসা করা আল্লাহর ফরজ ইবাদাত তাই না। মানে, হিংসার বীজ এমনভাবে আমাদের শরীরে বপন করা যে আমরা এখন হিংসাকে দৈনন্দিন ইবাদতের মতো আমল করি। লক্ষ্য করে দেখুন, মাসজিদের জামাআতে ক্বওমি, চরমোনাই, তাবলীগ, আলিয়া পরিশেষে সকল মানুষ একত্রে সালাত আদায় করে। অথচ আপনি দেখবেন সবার মধ্যে একটু রেষারেষি বিদ্যমান। অথচ তারা সবাই দ্বীনদার।

শয়তান তো খারাপ লোকদের মদ, জেনা, খুন ইত্যাদি দিয়ে জাহান্নামে নিবে। কিন্তু ভালো মানুষ তো এগুলো করবেনা। শয়তান কি তাদের জাহান্নামে নেওয়ার চেষ্টা করবেনা? তাহলে কি করে নিবে? শুনুন তাহলে, এই জান্নাত পাগল মানুষদের জাহান্নামে নেওয়ার তিনটি অস্ত্র আছে। শির্ক, বিদআত এবং হিংসা। তন্মিধ্যে আজকে হিংসা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

কোনো মুসলমানকে দুশমন মনে করা, মত খাওয়ার মতোই হারাম কাজ। তবে মদ খেলে একটি গুনাহ হয়, অথচ হিংসা বিদ্বেষে গুনাহ তো হয়ই সাথে নেক আমলগুলো পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এজন্য যাদের নেক আমল নেই তাদের মধ্যে হিংসা কম। খেয়াল করে দেখবেন নাচ-গান সিনেমা করে কিন্তু তাদের অতো মধ্য হিংসা নেই। হিংসা কেবল আমাদের দ্বীনদারদের মধ্যেই বেশি। কারণ শয়তান ভালোভাবে জানে এদের দুএকবার নাচ-গান করাতে পারলেও জাহান্নামে নেওয়া যাবে না।

এমন কাজ করাতে হবে যাতে নেক আমল সব শেষ হয়ে যায়। হিংসা শেখায় মূলত দু’দল মানুষ।
১. রাজনৈতিক নেতারা:
তাদের লাভ কি? ক্ষমতা। তারা ক্ষমতার লোভে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে জনমনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।
২. আরেক শ্রেণী হলো হুজুররা:
কি কারণে? মুরিদ, মুহাব্বত, ভক্ত ঠেকানোর স্বার্থে। তো আমি বলছিনা তাদের কাছে যাওয়া যাবে না। বরং বলবো আমরা দু’জনের নিকটই যাবো। আমি কারো বিরুদ্ধে না, আমি শুধু একটা পরামর্শ দিবো।
তা হলো, আমার কথায় বা নেতার কথায় মনে কোনো হিংসা বিদ্বেষ আনবেন না। হুজুরদের কাছেও যেতে হবে, যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। হুজুর যদি হিংসার কথা বলে, তাহলে বলবেন, হে আল্লাহ! হুজুর যা বুঝে আমি এত ভালো বুঝি না। আমি তোমার নবীর সকল উম্মতকে ভালোবাসি।

আল্লাহর দিকে তাকিয়ে, আল্লাহর রাসূল ﷺ এর দিকে তাকিয়ে অন্তত ইয়াকিনের সাথে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, এরকম সকল ঈমানদারকে আপনার আপন রক্তের ভাইয়ের মতো ভালোবাসবেন এবং দুআ করবেন, এটা হলো আল্লাহর প্রিয়তম একটি নেক আমল।

অন্তর দিয়ে সব মুসলমানকে ভালোবাসবেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলের দিকে তাকিয়ে আর কারো দিকে না। কোন মানুষ কোনো আলিমকে ভালোবাসুক বা না বাসুক যতক্ষণ আল্লাহ্ ও তার রাসূলকে ভালোবাসার কথা বলে ততক্ষণ আমরা তাকে মুহাব্বত করবো।

মনে করুন, একটি মানুষ যখন সব কথা শরিয়ত পন্থী বলে, নেক কাজ করে কিন্তু আপনার পীর সাহেবকে গালি দেয়। তখন আপনি তাকে খারাপ বলবেন? যদি বলেনই তাহলে বুঝতে হবে আপনার মধ্যে দলীয় মুহাব্বত চলে এসেছে যা আল্লাহ্ এবং তার রাসূল থেকেও বড়।

আপনাকে বুঝতে হবে, আমার দল হয়তো সে বুঝে না ঠিক আছে, আল্লাহ ও রাসূল ﷺ-কে তো মুহাব্বত করে আমাকেও তাকে ভালোবাসতে হবে। এ ভালোবাসায় পয়সা লাগেনা কিন্তু ঈমান মজবুত হয়, আল্লাহর পথে চলা সহজ হয়।| হিংসা থেকে বাঁচতে আরেকটি কাজ করা যায়-

জিকিরে জবান সবসময় নাড়তে থাকা এবং দু’আ করা। জিকর ও দুআ করতে ওজুর প্রয়োজন হয় না। যতক্ষণ কোনো বান্দা যে কোনো অবস্থায় রব্বের নিকট মনের কথাগুলো ব্যক্ত করে, ততক্ষণ তার আমলনামায় ফরজ ইবাদাতের সওয়াব উঠতে থাকবে। কেননা আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন, “দুআও একটি ইবাদাত।” এর মাধ্যমে সওয়াব ছাড়াও আরো ফায়দা আছে।

হাদিসে এসেছে, যখন কোনো বান্দা আল্লাহর নিকট দু’আ করে কিছু চায়, এর মাধ্যমে আল্লাহ হয় তাকে ঐ জিনিস দিয়ে দেন নয়তো তার মাধ্যমে একটি বিপদ কাটিয়ে দেন। তাও নাহলে এর বিনিময়ে জান্নাতে সওয়াব জমা হতে থাকে।

আরেকটা ফায়দা হলো, দুআকালীন সময়ে আল্লাহর সাথে আমাদের ক্বলবটা জুড়ে যায়। যেমন, মোবাইলের চার্জার সংযোগ হয় ঠিক যেন তেমনই। এই জিকর এবং দুআর মাধ্যমে অন্তরে আল্লাহ রহমত, বরকত, বেলায়েত ঢেলে দেন। যা ক্বলবের চার্জ জোগায়। তাই সময় সময় গুলো এভাবে কাজে লাগাই। উঠতে, বসতে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাসূল ﷺ কর্তৃক মাসনুন দুআ গুলো আমল করতে থাকবো।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের হিংসা থেকে হেফাজত করুক এবং নেক আমল করার তৌফিক দেক।|

শ্রুতিলেখক: আয়রা তেহরিম উস্মি

লেখাটি মিম্বার ফেসবুক গ্রুপের “মিম্বার ম্যাগাজিন” থেকে সংগ্রহীত।