সানজিদা |
“বুঝছেন ভাই? এইগুলাই জাহান্নামী”। সদ্য দ্বীনের পথে আসার পর বেশির ভাগ ভাই/বোনেদের রক্ত গরম থাকে। তাই অল্পতেই ধৈর্য হারা হয়ে পড়ে। এই যেমন সবে মাত্র কয়েকদিন হলো দ্বীনের পথে আসা এক ভাই এর সামনে দিয়ে যদি কোনো বেপর্দা বোন টপ-জিন্স পড়ে হাটে সে আগে পিছে না ভেবেই বলে দিল,” বুঝছেন ভাই? এইগুলাই জাহান্নামী”।
অথচ সে বেমালুম ভুলে গেছে যে, ঐ মেয়ের দিকে তাকানোই তার যায়েজ নাই আর তার সম্পর্কে এমন কটু কথা তো তখনই আপনার মনে আসবে যখন আপনি নিজের দৃষ্টি সংযত না করে ঐ মেয়ের দিকে ভাল ভাবে নজর দেওয়ার পর আপনার দৃষ্টি নামাবেন।
এক ভাই নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ তার সামনে তার এক প্রিয় বন্ধুর পোস্টে দেখলো সে তার মেয়ে বান্ধুবীদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কিছু ছবি শেয়ার করেছে। সেইটা দেখে সে সাথে সাথে কমেন্ট অপশনে গিয়ে লিখলো “এই তোরাই জাহিলিয়াত, তোরাই জাহান্নামী”। তোরে আমি কতবার বলছি যে এইসব করবি না তবুও তুই শুনলি না। ঐ বেচারা বন্ধু কমেন্টটা ডিলিট করে তাকে ইনবক্স করতে গিয়ে দেখলো যে, “you can’t message or call them is this chat”
সেইদিন তো এক বোনকে বলতে শুনলাম সে নাকি তার বাবা-মা’র সাথে আর থাকতে পারবে না। বাবা-মা নামাজ পড়ে না, মা পর্দা করে না। আর বেনামাজিদের হাতের রান্নাও খেলে নাকি নিজের গুনাহ হয়, নামাজ রোজা কিচ্ছু কবুল হয় না। তাই সে প্রায়ই তার মা -বাবা কে জাহান্নামী বলে সম্বধোন করে।
আরেক বোন দেখলো তার বেস্টফ্রেন্ড এমন একটা ছবি মাই ডে’তে দিয়েছে যেটা দেখে যেকোনো ছেলে হুশ হারিয়ে ফেলবে। এইটা দেখে সে তৎক্ষনাৎ তার বেস্টফ্রেন্ডকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু কথা বললো একটা মেয়ে অন্য একটা মেয়েকে এমন কথা বলতে পারে না। কথাগুলো কিছুটা এমন-” এই তোদের মতন মেয়েদের জন্যই যুবক ছেলেরা সহজেই তাদেরচ ঈমান হারাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি”। এবং ঐদিন এরপর আর কখনো তার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে কথা তো দুরে থাক রাস্তায় দেখলেও নাক শিটকে পাশ কেটে চলে যেতো।
আমরা অনেকেই এমন যে, দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার পর কেউ দ্বীন মানতে অস্বীকার করলে অনেক বাজে মন্তব্য করে বসি। একটাবারও নিজের চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাই না যে, আমরাও তো তাদের মতনই ছিলাম। আমাদের সামনেও কত পর্দাশীল বোনেরা, দ্বীনদার ভাইয়েরা ঘুরাফিরা করতো, তখন তো আমাদের বিবেক কাজ করেনি যে আমরা যা করছি তার জন্য আমাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির কথা শুধু শুনতামই কখনো অনুভব করিনি এখন যেভাবে অনুভব করি।
বিবেক তো কাজ করবেই না, কারণ আপনি বা আমি তখন আল্লাহর হেদায়েত থেকে অনেক দূরে ছিলাম। আল্লাহ নিজের ইচ্ছায় আমাদের হেদায়েতের মতো এতো বড় একটা নিয়ামত দিয়েছেন, এইজন্যই এখন আমরা চোখ, কান খুলে চলাফেরা করতে পারি। কিন্তু আমার বা আপনার সেই সব ভাই-বোন বন্ধু-বান্ধুবী এখনও আল্লাহর হেদায়েত পায়নি তাই তারাও এখনও চোখ থাকতেও অন্ধের মতন চলে, ভাল কথা হক্ব কথা খুব সুন্দরভাবে এড়িয়ে যায়।
আমরা চাইলেই তাদেরকে আল্লাহর পথে আনতে পারবো না, শুধুমাত্র আল্লাহ্ চাইলে তবেই তারা হেদায়েতের পথে আসবে। আমরা হয়তো নিজেদের অহংকারের জন্য ভুলেই গেছি যে আমাদের বিশ্বনবী (সা.) তার আপন চাচা আবু তালেবের ঘরে বড় হয়েছে। তার (সা.) শৈশব কৈশোর কেটেছে তার এই চাচার সান্নিধ্যেই। অথচ তাঁর ছিল নিজ বংশ গৌরবের জৌলুশ। যা তার ইসলাম গ্রহণে প্রধান বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল।
কিন্তু নবী (সা.) সবসময়ই তার হেদায়েত এর জন্য দোয়া করে গেছেন। এমনকি আবু তালেবের আয়ু যখন একদমই ফুরানোর পর্যায়ে তখনও নবী (সা.) চেষ্টা ছাড়েননি। তার এই অন্তিম পর্যায়েও তিনি আল্লাহর কাছে তার চাচার হেদায়েত এর ফরিয়াদ করছিলেন, কিন্তু আবু তালেবের তকদীর আল্লাহ সুবানাহু তা’লা আগেই লাওহে মাহফুজে সংরক্ষন করে রেখেছিলেন আর তার তকদীরে হেদায়াত নামক নেয়ামতের কোনো স্থান ছিল না।
তাই তো নবী (সা.) শত চেষ্টা করেও সেইদিন তার জবানে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” আনতে পারেননি। কেন সে এই কঠিন সময়ে বিশ্ব জাহানের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী (সা.) এর আপন চাচা হয়েও কালিমা পড়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেনি? ঐযে একটাই কারণ অহংকার আর বংশ গৌরব। এই বংশ গৌরব ও অহংকারের দরুন তার শেষ পর্যায়টাও এত করুনভাবে সমাপ্ত হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের নিম্নক্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছিল,
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন। (আল কাসাস- ৫৬)
তাই আসুন না আমরা সকলেই আমাদের এই হেদায়েত প্রাপ্তিটাকে অহংকার না বানিয়ে আল্লাহর এই বিশেষ নিয়ামতটাকে বিশেষভাবে কাজে লাগাই। ভালবেসে সকল ভাই/বোনদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করি। আর মনে রাখবেন, “ভালবাসার বিপরীত ভালবাসাই হয়”।
লেখাটি মিম্বার ফেসবুক গ্রুপের “মিম্বার ম্যাগাজিন” থেকে সংগ্রহীত।